কংগ্রেস নেতার বাড়িতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এমন দৃশ্য পশ্চিমবঙ্গে শেষ কবে দেখেছেন, কেউই মনে করতে পারছেন না। কংগ্রেস নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার, অগ্নিমিত্রা পাল। রীতিমতো তাঁর পাশে থাকার অঙ্গীকার করে এসেছেন তাঁরা। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ও এই ইস্যুতে তোপ দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে তৃণমূল হইচই শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস-বিজেপির 'আঁতাত' নিয়ে।
রাজ্য-রাজনীতিতে কেন এই দৃশ্যের অবতারণা?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার। সেই ঘটনায় সহমর্মী হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিল বিজেপি। ঘটনার পর দিন একেবারে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে গেলেন বিজেপি নেতৃত্ব। রাজনীতির কারবারিদের মতে, বিষয়টা খুব সরল, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কথাতেই আছে, দুজন রাজনীতিকের সাক্ষাৎ হবে আর রাজনীতির কথা হবে না, তা কখনও হয় না। সেখানে দলের ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন জয়প্রকাশ মজুমদার ও অগ্নিমিত্রা পালরা। এখানে রাজনীতির প্রেক্ষাপটটা একটু ভিন্ন মাত্রার।
আরও পড়ুন- ‘মমতার বিরুদ্ধে মুখ খোলায়’ গ্রেফতার কংগ্রেস নেতা, তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি
রাজ্য-রাজনীতিতে এখন বিরোধী দল বলতে বিজেপি। বিধানসভার আসনের নিরিখে বিরোধী দল ভাবার সময় এখন আর নেই। তাছাড়া বামফ্রণ্ট ও কংগ্রেস জোটগত ভাবেও রাজ্যে বিরোধী অবস্থানে নেই। এবছর লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যে বিজেপিই যে মূল বিরোধী দল, তা স্বীকৃত। অভিজ্ঞ মহলের মতে, কংগ্রেস নেতার বাড়ি গিয়ে পদ্মশিবির অন্যদের এটাই বুঝিয়ে দিতে চাইল যে তারাই এখন তৃণমূল কংগ্রেসের একমাত্র প্রতিপক্ষ। অর্থাৎ পদ্মফুলই ঘাসফুলের বিকল্প। পাশাপাশি তাঁদের রাজনীতির বাইরে যে একটা 'মানবিক' সত্ত্বা রয়েছে, তার প্রমান দিতেও বদ্ধপরিকর বিজেপি।
কংগ্রেস-সিপিএমের বক্তব্য, বাক-স্বাধীনতা হরণ করছে তৃণমূল সরকার। সন্ময়বাবুর গ্রেফতারি তারই প্রমাণ। বিজেপিও বার্তা দিতে চাইছে, তৃণমূল শাসিত এই রাজ্যে বাক-স্বাধীনতা নেই। সারা দেশে কংগ্রেসই তাদের মূল প্রতিপক্ষ। তা সত্ত্বেও এই রাজ্যে কংগ্রেস নেতার বাড়িতে হাজির দলীয় নেতৃত্ব। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এই ঘটনাটা এমন একটা প্রেক্ষাপট, যেখানে হাজির হলে অনেকরকম ব্যাখ্যা দেওয়া সহজ। রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে ভাবতে পারে বিজেপি।
আরও পড়ুন- ‘রাহুল গান্ধীর ভুল অধীর চৌধুরীও করল, এবার ওকে সারা দেশে দৌড় করাব’
২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়েছে কংগ্রেস-বামফ্রণ্ট জোট। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে ফের বাম-কংগ্রেস জোটের সম্ভাবনা। যা পরিস্থিতি রাজ্যে, তাতে বিজেপি আগের মতো এবারও একাই লড়বে বিধানসভা নির্বাচনে। বিজেপিকে আটকাতে বামেদের আহ্বান জানাতে ভোলেন নি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপির মূল প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। সেখানে কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল বহু ক্ষেত্রে একসঙ্গে গেরুয়া শিবিরের বিরোধিতা করছে। ওদিকে কংগ্রেস-শূন্য দেশ গঠনের ডাক দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
সন্ময়বাবুর ঘটনায় বিরোধী সব রাজনৈতিক দলই প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, একেবারে কংগ্রেস নেতার বাড়িতে পৌঁছে যাওয়া, বা জেলা, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মন্তব্য করা, যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে বিধানসভার চিফ হুইপ নির্মল ঘোষের বক্তব্য, এটি প্রমাণ করছে কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যে গোপন আতাঁত রয়েছে। অর্থাৎ কংগ্রেস-বিজেপি-বাম জোটের বিরূদ্ধে প্রচার এবার আরও জোরদার করবে তৃণমূল কংগ্রেস, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।