কংগ্রেস নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সোশ্যাল সাইটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে সোচ্চার বাম-কংগ্রেস-বিজেপি। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় আগরপাড়ায় একটি বাড়ি থেকে সন্ময়কে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারের সময় সন্ময় ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় খড়দা থানায় সন্ময়ের পরিবারের অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ খড়দা থানায় বিক্ষোভ দেখায় বাম-কংগ্রেস। যা ঘিরে ধুন্ধুমারকাণ্ড ঘটে খড়দা থানা চত্বরে।
আরও পড়ুন: ‘দ্বিতীয় স্ত্রী বিদেশি হলেই নোবেল মিলছে’, অভিজিৎ প্রসঙ্গে বেলাগাম রাহুল সিনহা
ঠিক কী ঘটেছে?
সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে সোশ্যাল সাইটে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে রাজ্যের একাধিক থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় আগরপাড়ায় একটি বাড়ি থেকে সন্ময়কে গ্রেফতার করে পুরুলিয়া পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, কোনও পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে সন্ময়কে। গ্রেফতারের সময় পুলিশের সঙ্গে শাসকদলের কর্মীরাও ছিল বলে দাবি পরিবারের। সেই সময় সন্ময় ও তাঁর পরিবারকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় খড়দা থানায় সন্ময়ের পরিবারের অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে পুলিশ। সন্ময়বাবুর দাদা তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। খড়দা থানায় সন্ময়ের উপর অত্যাচার চালিয়েছে পুলিশ’’।
এ ঘটনায় সন্ময়কে ২ দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। রবিবার তাঁকে ফের পুরুলিয়া আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সন্ময়ের দাদা তন্ময়।
আরও পড়ুন: ‘রাহুল গান্ধীর ভুল অধীর চৌধুরীও করল, এবার ওকে সারা দেশে দৌড় করাব’
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে “নিরাপত্তাহীন রাজ্যপাল”! কী বলছেন রাজনীতিকরা?
কংগ্রেস নেতার গ্রেফতারির প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব। এ ঘটনায় আজ খড়দা থানায় স্মারকলিপি পেশ করতে যায় বাম-কংগ্রেস। থানা চত্বরে বিক্ষোভও দেখায় তারা। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। প্রেস বিবৃতি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য এবং কংগ্রেসের প্রাক্তন পৌরপিতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেভাবে রাতের অন্ধকারে পুলিশ-প্রশাসন তাঁদের সন্ত্রাস কায়েম করে তুলে নিয়ে গেলেন তাঁর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ এই রাজ্যে নতুন নয় এর আগেও প্রফেসর অম্বিকেশ মহাপাত্রের সঙ্গেও এই একই ঘটনা ঘটেছে। তবে সেই ঘটনার আবারও পুনরাবৃত্তি ঘটলো সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আমরা এই ঘৃণ্য অত্যাচারী-স্বৈরাচারী রাজ্য সরকার ও তাঁদের পুলিশ প্রশাসনের এহেন কালা কানুনের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলনকে ক্রমশ সংগঠিত করব এবং পথে নেমে এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলব। এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাজীব কুমারের উদ্দেশ্যে সরাসরি পথে নেমে ধর্না ধরেন এবং রাতের অন্ধকারের সেই পুলিশ প্রসাশনকে ব্যবহার করে সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রতিবাদীদের হেনস্থা করেন। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই’’।
আরও পড়ুন: ‘নোবেলজয়ী অভিষেকবাবু’, মমতার মন্তব্যে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি
দলীয় নেতার গ্রেফতারির প্রতিবাদে সরব হয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। ফেসবুকে অধীর লিখেছেন, ‘‘রাজ্যের কংগ্রেস পার্টির অতি পরিচিত মুখপাত্র ও একজন দক্ষ সাংবাদিক সন্ময়বাবুকে পুলিশ বাড়ি ভেঙে গ্রেফতার করল শুধুমাত্র এই সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার জন্য। 'দিদি' আপনার এই কুৎসিত আক্রমণ আমাদের দুর্বল করতে পারবে না। প্রতিবাদ জানাচ্ছি এই জঘন্য রাজনৈতিক সন্ত্রাসের, বাংলার কংগ্রেস কর্মীদের পথে নেমে প্রতিবাদ করার আবেদন জানাচ্ছি ― সন্ময় বাবুকে পুলিশ অপহরণের জন্য। ধিক 'দিদি' ধিক ধিক’’।
বাম-কংগ্রেসের পাশাপাশি এ ঘটনায় শাসকদলের বিরুদ্ধে আসরে নেমেছে বিজেপিও। এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা কিশোর কর বলেন, ‘‘এভাবে বিরোধীদের কন্ঠরোধ করা যাবে না। আমরা প্রতিবাদ জানাব’’। যদিও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উড়িয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। এখানে আমাদের দলের কোনও হাত নেই’’।