Advertisment

এন আর সি: রাজ্যসভায় অধিবেশন মুলতুবি

সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সমস্তরকম সংশোধনের জন্য বিভিন্ন ফর্ম  এনআরসি সেবাকেন্দ্রগুলিতে অগাস্টের ৭ তারিখ থেকে পাওয়া যাবে। ভর্তি করার পর সেই ফর্মগুলি জমা দেওয়া যাবে ৩০ অগাস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।  

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলকাতায় এনআরসি অর্থাৎ দ্য ন্যাশানাল রেজিস্টার ফর সিটিজেন নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি হবে

৪০ লক্ষের এন আর সি-তে নাম না থাকা নিয়ে রাজনৈতিক শোরগোল শুরু হয়ে গেছে। নাগরিকপঞ্জীতে নাম তোলার জন্যে ৩.২৯ কোটি মানুষ আবেদন জমা দিয়েছিলেন। ২.৮৯ কোটি-র নাম উঠেছে তালিকায়। গোটা অসম জুড়ে এখন অস্বস্তির আবহাওয়া। সরকারের তরফ থেকে এই পরিস্থিতিতে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, এই ৪০ লাখের কাউকেই ফরেন ট্রাইবুনালে বা ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে না।

Advertisment

এন আর সি-র রাজ্য কোঅর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা ২.৪৮ লক্ষ মানুষ ৪টি ক্যাটিগরিতে বিভক্ত। ডি ভোটার, ডি ভোটারের উত্তরাধিকারী, যাঁদের মামলা ফরেন ট্রাইবুনালে ঝুলছে এবং তাঁদের উত্তরাধিকারীরা।

 তবে অসম সরকারে আশ্বাস বিন্দুমাত্র তুষ্ট করতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে। তিনি এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন, সংসদে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়েছে, মঙ্গলবার মুলতুবি হয়ে গেছে  রাজ্যসভার অধিবেশনও। সোমবার তৃণমূল কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির সদস্যদের তুমুল হৈ হট্টগোলের জেরে রাজ্যসভায় সব মিলিয়ে মাত্র ১৪ মিনিট অধিবেশন চলে।

আরও পড়ুন, ৪০ লক্ষ নাম বাদ আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা থেকে

লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং অভিযোগ করেন, বিষয়টি নিয়ে অহেতুক রাজনীতি করছেন বিরোধরা। তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস সিপিএম এবং সমাজবাদী পার্টির সাংসদদের অভিযোগ, জনগণের মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারকেই প্রশ্নের মুখে ফেলা হয়েছে। তৃণমূল সাংসদ লোকসভায় এই ইস্যুতে একটি মুলতুবি প্রস্তাবও দিয়েছেন।

রাজ্যসভার অধিবেশন মঙ্গলবার দু দুবার স্থগিত রাখতে হয় এই ইস্য়ুতে তৃণমূল সাংসদদের শ্লোগানের জেরে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ মন্তব্য করেন, কংগ্রেস ১৯৮৫ সালে অসম চুক্তি সবাক্ষর করা সত্ত্বেও এন আর সি লাগু করার সাহস দেখায়নি। অমিত শাহ বলেন, ‘‘রাজীব গান্ধী ১৯৮৫ সালে অসম চুক্তি সই করেছিলেন, যা এন আর সি-রই সমতুল্য। তাদের সেই চুক্তি লাগু করার সাহস হয়নি, আমরা করে দেখিয়েছি।’’

publive-image ৪০ লাখ নামছুট অসমে (ফাইল ফোটো)

সংসদের বাইরে বিরোধীদের নেতৃত্বের দায়িত্বে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণিয়ে বলেন, ভারতের নাগরিকরা উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে, এবং বাংলা ও বিহারের মানুষকে টার্গেট করা হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে  শাসক দল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে  ৪০ লক্ষ লোককে জোর করে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর আছে, যাদের কাছে আধার বা পাসপোর্টের মতন সরকারি নথি রয়েছে তাদেরও তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আজ কেন্দ্রীয় সরকার ও তাদের নীতির জন্য এই মানুষগুলো উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন।’’

বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক, পশ্চিম বঙ্গের দায়িত্বে থাকা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গেও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সম্ভবত কয়েক কোটি। বাংলার যুবকরা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ বাসিন্দাদের চিহ্নিত করতে চান, কারণ তাঁরা ভয়াবহ বেকারি এবং আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যার মুখোমুখি।’’

বাংলায় এন আর সি নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তিনি বলেছেন, তাঁদের সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় এলেই এন আর সি তালিকা প্রকাশ করা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সব কিছু নিয়ে ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করে বেড়ানোর অভিযোগ তোলেনি। দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আমরা যদি বোটে জিতে ক্ষমতায় আসি, তাহলে আমরা এন আর সি লাগু করব। যে সব অবৈধ নাগরিকরা এ রাজ্যে রয়েছেন, তাঁদের সবাইকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যারা তাদের সমর্থন করবে, তাদেরও ঘাড়ধাক্কা দেওয়া হবে।’’

আরও পড়ুন, এন আর সি: নো-ম্যানস-ল্যান্ডের দিকে পা বাড়িয়ে

অসমই ভারতের একমাত্র রাজ্য যার নাগরিক পঞ্জী (এন আর সি) রয়েছে। এরই শেষ খসড়া প্রকাশিত হয়েছে সোমবার। ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জীতে যাঁদের নাম প্রকাশিত হয়েছিল, তাঁরা অথবা তাঁদের বংশধররা, অথবা ১৯৭১-এর ২৪ মার্চ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় বা অন্য কোনও সরকারি নথিতে যাঁদের নাম ছিল, তাঁরা বা তাঁদের বংশধররা এই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। এই নির্দিষ্ট তারিখটিকেই বেছে নেওয়া হয় ১৯৮৫-র অসম চুক্তি অনুসারে। ৬ বছর ধরে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পর অসম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল কেন্দ্র সরকার, অসম সরকার এবং এল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু)।

৪০ লক্ষ নাগরিক এই তালিকায় তাঁদের নাম খঁজে পাননি। ফলে উত্তর পূর্বের এই রাজ্য জুড়ে তৈরি হয়েছে ভয়ের বাতাবরণ। সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সমস্তরকম সংশোধনের জন্য বিভিন্ন ফর্ম  এনআরসি সেবাকেন্দ্রগুলিতে অগাস্টের ৭ তারিখ থেকে পাওয়া যাবে। ভর্তি করার পর সেই ফর্মগুলি জমা দেওয়া যাবে ৩০ অগাস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।

ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল জানিয়েছেন, এনআরসি তালিকার সমস্ত সংশোধনী চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করে ফেলতে হবে।

Assam nrc
Advertisment