বিজেপিতেই থাকবেন নাকি তৃণমূলে ফিরবেন? এই জল্পনার আবহেই শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিজেপি নেতাদের কুকথা নিয়ে মুখ খুললেন অধ্যাপিকা তথা শোভন-বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসুদের নাম না করেই বিজেপি-তে যোগ দেওয়া বৈশাখী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, ‘‘কুকথা বললে গৌরব বাড়ে না। নিজেদের কদর্যতাই প্রকাশ পায়। বিশিষ্ট লোকেদের আক্রমণ করে বিশিষ্ট হওয়া যায় না...আমি তো বিজেপির প্রশান্ত কিশোর নই যে ওঁদের (বিজেপি নেতাদের) বার্তা দেব, কোন পথে চলবেন’’।
ঠিক কী বলেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়?
সিএএ বিরোধী বুদ্ধিজীবীদের লাগাতার কুকথা বলে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসু, সৌমিত্র খাঁ। বিজেপি নেত্রী বৈশাখীকে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতির অঙ্গনকে কলুষিত না করলেই ভাল। সে যে দলই হোক না কেন। সে বিজেপি হোক বা অন্য কোনও দল। কাউকে কুকথা বলে গৌরব বাড়ে না। নিজের নিরাপত্তাহীনতা-কদর্যতা প্রকাশ পায়। কুকথার ভাষণগুলো বন্ধ হলে আমাদের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনটা অনেক বেশি নান্দনিক হবে। সব দলেরই এটা মানা উচিত’’। এরপরই বৈশাখী বলেন, ‘‘আমি তো বিজেপির প্রশান্ত কিশোর নই যে ওঁদের বার্তা দেব, কোন পথে চলবেন। তবে আমার মনে হয়, বুদ্ধিজীবীদের আক্রমণ করলেই তাঁরা সেই আক্রমণের জন্য স্তিমিত হয়ে যান। বুদ্ধিকে জীবিকা করেই বুদ্ধিজীবী হয়েছেন। নিজের বুদ্ধিকে সিন্দুকে না পুরে তাঁদের গালিগালাজ করলে নিজের গরিমা বাড়বে না। কখনও নীরবতা প্রতিবাদের জোরালো ভাষা হতে পারে। আমরা এখন এত কথা বলতে ব্যস্ত যে নীরব থাকতে ভুলে গেছি। এসব কথা যত উপেক্ষা করা যায়, ততই ভাল। কলরব একসময় থামেই, কোলাহল থেমে যাবে। এগুলো বলে, কিছু বিশিষ্ট লোকেদের আক্রমণ করে বিশিষ্ট হওয়া যায় না’’।
আরও পড়ুন: ‘কুকথাই সবসময় বলি, কিছু যায় আসে না’, দিলীপ আছেন দিলীপেই
উল্লেখ্য, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন বৈশাখী। এরপর থেকেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে শোভন-বৈশাখীর। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভাইফোঁটায় মমতার বাড়িতে গিয়ে তৃণমূলের কাছে আসার বার্তা দেন শোভন-বৈশাখী। কিন্তু এরপরও বঙ্গ রাজনীতির এই বহুলচর্চিত জুটির রাজনৈতিক অবস্থান ঘিরে কার্যত ধোঁয়াশা জারি রয়েছে। পুরভোটের আগে শোভনের সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে এখনও। এমন সন্ধিক্ষণে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই বলেই এদি জানিয়েছেন বৈশাখী। দিলীপ ঘোষকে বিজেপি সভাপতি হিসেবে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করা হলে, শোভন-বান্ধবী বলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে তো যোগাযোগই নেই। ফলে শুভেচ্ছা আসবে কোথা থেকে’’। তবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁদের ‘কুশল বিনিময়ে’র সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন শোভন-বান্ধবী। যদিও বিজেপি সভাপতি হিসেবে জে পি নাড্ডাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কিনা, সেই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এই তিনি বলেন, এই তো আপনাদের মাধ্যমেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ফলে এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক ও বিজেপি নেতাদের কুকথা নিয়ে যেভাবে মুখ খুললেন শোভন-বান্ধবী, তা রাজনৈতিকভাবে রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।
আরও পড়ুন: ‘দিলীপ ঘোষকে খাঁচায় ভরে রাখা হবে’
এদিকে, জেএনইউ ইস্যুতে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অধ্যাপিকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেএনইউ ঘটনায় তদন্ত চলছে। অধ্যাপিকা হিসেবে মনে করি ছাত্র-ছাত্রীরা সন্তানতুল্য। কোনও ছাত্রছাত্রী আঘাত পেলে আমার কষ্ট হয়। যেখানে আমি উপস্থিত নেই, সেখানে এ পক্ষ ভুল, আর এই পক্ষ ঠিক, একথা বলা ঠিক নয়। ছাত্রছাত্রীরা মস্তিষ্ক চর্চা করুক, কারও মস্তিষ্ক থেকে রক্তক্ষরণ যেন না হয়’’।
আরও পড়ুন: ‘ভাইপোর স্ত্রীর পদবী জানি না, জানতেও চাই না’
অন্যদিকে, তৃণমূলে ফেরার জল্পনা প্রসঙ্গে এদিন বৈশাখীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য ও নেতা ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। আমার সঙ্গে শিক্ষক সংগঠনের সম্পর্ক ছিল। বৃহত্তর দলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। শোভনদাই বলতে পারবেন কী সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে রত্নার সঙ্গে একমঞ্চে রাজনীতি করবেন না শোভন, সেকথা সর্বোচ্চ নেত্রীকে জানানো হয়েছে। পার্থদাকেও বহুবার জানানো হয়েছে একথা’’। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে শোভনের দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী রত্না চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আজকে শোভনবাবুর যদি মনে হয়ে থাকে যে আমার সঙ্গে একমঞ্চ শেয়ার করতে পারবেন না, তাহলে তো তিনি সে পথ বেছেই নিয়েছেন। উনি তো অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। উনি ঘটা করে যে দলের সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন, সেরকম ঘটা করেই তৃণমূলেই যোগ দিন, তারপর ভাবব আমি কী করব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী অবস্থান নেন এ ব্যাপারে, তারপর ভাবব। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় তো শোভনের মুখপাত্র।’’।