আর রাখঢাক নয়। ২০২৩-এ ত্রিপুরা জয়ের লক্ষ্যেই যে তৃণঁমূল কোমর বেঁধে ঝাপিয়েছে তা সোমবার আগরতলায় স্পষ্ট করে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমকে টেনে হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেছেন, 'সিপিএম পারেনি, বিজেপিতো নেহাত শিশু।' গেরুয়া শিবিরকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের চ্যালেঞ্জ, 'আটকাতে গিতে বিপ্লব সরকার তৃণমূলকে যত তাকাবে ততই আমাদের শ্রী বৃদ্ধি হবে। আজকের তারিখটা লিখে রাখুন, দেড় বছর পর ত্রিপুরায় তৃণমূলের সরকার হবে।' শুধু হুঁশিয়ারি বা বিজেপি সরকারকে আক্রমণই নয়। কেন উত্তর পূর্বের এই ছোট্ট রাজ্যে তৃণমূল সরকার গড়তে মরিয়া, বাংলায় জোড়া-ফুল সরকারের উদাহরণ টেনে তা বুঝিয়েছেন অভিষেক।
সাংবাদিক বৈঠকের আগাগোড়াই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষের মনোবল, রাজ্যপাটে বদলের ইচ্ছা শক্তি, তৃণমূল সরকারের গণতান্ত্রিক অবস্থান, প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরেছেন। দেড় বছর বাদে উত্তরপূর্বের এই রাজ্যে পরিবর্তন হলে সেখানেও যে বাংলার মতোই উন্নয়নের জোয়ার বইবে সেই প্রতিশ্রুতি দেন তৃণমূলের এই সর্বভারতীয় নেতা।
আরও পড়ুন- ‘ত্রিপুরায় মা-মাটি-মানুষের খেলা শুরু’, বিজেপিকে হুঁশিয়ারি অভিষেকের
ত্রিপুরায় গণতন্ত্র প্রশ্নের মুখে। তাঁর কনভয়ে হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে এই অভিযোগ করেছেন অভিষেক। বলেছেন, 'যাঁরা গণতন্ত্রের বড় বড় কথা বলে তাদের আমলেই গণতন্ত্রের কী হাল বোঝা যাচ্ছে। আমি সাংসদ আমার উপর হামলা চলছে। তাহলে সাধারণের মানুষের অবস্থা বোঝাই যায়। আমরা ক্ষমতায় এলে বাংলাই হবে ত্রিপুরার উন্নয়নের মডেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছেন। আর এ রাজ্যে বিজেপি সরকার দুয়ারে গুন্ডাবাহিনী পৌঁছে দিয়েছে। তৃণমূল ক্ষমতায় এলেই ত্রিপুরাতেও বাংলার মতো দুয়ারে সরকার, দুয়ারে রেশন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার হবে।'
আরও পড়ুন- ‘অতিথি দেব ভবো-র উদাহরণ দেখলাম’, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকে কটাক্ষ অভিষেকের
এরপরই কর্মসংস্থানের ইস্যুকে হাতিয়ার করে বাংলার সঙ্গে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার পার্থ্যক্য তুলে ধরেন অভিষেক। তাঁর কথায়, 'বিজেপি বলেছিল মিসড কল মারলেই চাকরি। কিন্তু কোথায় কর্মসংস্থান? বেকারত্ব বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী জবাব দিন। শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। আর দেখুন বাংলার দিকে। ছোট খুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশের মধ্যে এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। সম্ভাবনা থাকলেও বিজেপি ত্রিপুরায় তা করতে ব্যর্থ।'
বাংলায় ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে বিস্তর অভিযোগ বিজেপির। তুলনা করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের জবাব, 'এখানো ২০১৮ সালে বিজেপি ক্ষমতায় এসেই মার্কসের মূর্তি ভেঙেছিল। ২০১১ সালের পর বাংলায় এমন উদাহরণ পাবেন না। বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর মূর্তি ভাঙার নজির পাবেন? প্রমাণ করতে পারবে সিপিএমের একটিও পার্টি অফিস দখল হয়েছে?
আরও পড়ুন- ‘এমন আচরণ বাংলায় বিরোধীদের সঙ্গে রোজই হয়’, অভিষেককে পাল্টা বিজেপি
একুশের বিধানসভায় বাংলায় উন্নয়নের জন্য রাজ্যে ডবল ইঞ্জিন সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন মোদী-শাহরা। অভিষেক সাংবাদিক বৈঠকে ত্রিপুরায় বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, 'বাঙালির জন্য কী করেছে ডবল ইঞ্জিন সরকার? চাকরি নেই। রান্নার গ্যাস, জ্বালানির দাম বাড়ছে। কেন চিকিৎসা করাতে বাংলায় যেতে হয় এখানকার মানুষদের? বাংলায় তো সিঙ্গল ইঞ্জিন মমতা সরকার। রাজ্যকে প্রতি পদে বঞ্চিত করছে কেন্দ্র। এখানে তো ডবল ইঞ্জিন। তাহলে উন্নয় হচ্ছে না কেন? আসলে ওরা শুধু ভাঁওতা দেয়। আচ্ছে দিনের সরকার মানে মোদী-শাহ-বিপ্লব দেবের সরকার। আর উন্নয়ন মানেই মমতার সরকার।'
চড়া সুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, 'বিজেপির দিল্লির নেতারা ত্রিপুরায় যতবার আসবেন তার চেয়ে বেশি আসবো। প্রতি দু'সপ্তাহে আসবো। ত্রিপুরায় বিজেপির বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছে। লক্ষ্য ২০২৩, এবার ত্রিপুরাই তৃণমূলের পাখির চোখ। সে রাজ্যের বাসিন্দাদের অভয় দিয়ে অভিষেকর প্রশ্ন, 'বাংলা পারলে ত্রিপুরায় নয় কেন?'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন