Advertisment

বিধান ভবনে ‘আলিমুদ্দিন’, ইতিহাসে ‘প্রথমবার’!

‘‘সোমেন মিত্র অফার করলেন, চা খেয়ে যাবেন না? আমরা বলেছি, হ্যাঁ, খাওয়াই যায়! বাঙালি চা খাওয়ার সময় টুকটাক কথা বলে। আমরাও কথা বলেছি’’।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Biman Bose, বিমান বসু, Somen Mitra, সোমেন মিত্র, suryakanta mishra, সূর্যকান্ত মিশ্র, left, বাম, congress, কংগ্রেস

বিমান বসু ও সোমেন মিত্র।

স্থান- বিধান ভবন, কলকাতা। কাল- সোমবার বিকেল। পাত্র- বিমান বসু, সোমেন মিত্র, সূর্যকান্ত মিশ্র। পাশাপাশি বসে চায়ের কাপে তুফান তুলছেন বিমান বসু-সোমেন মিত্র-সূর্যকান্ত মিশ্র, সোমবার এই দৃশ্যই দেখলেন তামাম পশ্চিমবঙ্গবাসী। শেষ কবে এমন ঘটনা ঘটেছে, যখন আলিমুদ্দিন এসেছে বিধান ভবনে? একযোগে সোমেন-বিমানের উত্তর, ‘‘সম্ভবত এই প্রথমবার’’। এর আগে খোদ কলকাতার বুকে একই মালায় রাহুল গান্ধী ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে চাক্ষুষ করেছিলেন বঙ্গবাসী। এরপর সোমবারের এই ফ্রেম। বাম-কংগ্রেসের জোটের জল্পনায় জল-হাওয়া দিয়ে বিমান বসু এদিন বললেন, ‘‘আগামী দিনের কথা আগামী দিনে বলা যাবে’’। আর সোমেন মিত্রের মন্তব্য, ‘‘যাত্রা শুরু হল’’। সবমিলিয়ে তৃণমূল বনাম বিজেপি সংঘাতের প্রেক্ষিতে বাংলার মাটিতে তিক্ততা ভুলে বাম-কংগ্রেসের এদিনের বন্ধুত্ব প্রদর্শন রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

Advertisment

সোমবার বিধানভবনে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে চা পান করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। এরপর তিনজন একসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সিপিআইএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তথা বর্তমান ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এদিন বলেন, ‘‘সোমেন মিত্র অফার করলেন, চা খেয়ে যাবেন না? আমরা বলেছি, হ্যাঁ, খাওয়াই যায়! বাঙালি চা খাওয়ার সময় টুকটাক কথা বলে। আমরাও কথা বলেছি’’।

আরও পড়ুন: ‘গণশক্তি পড়ে জেনেছিলাম, বাবা রাজ্য সম্পাদক হয়েছেন’

কিন্তু শুধুই কি কথা, নাকি জোটের কথা? এই প্রশ্নের জবাবে বিমান বসু বলেন, ‘‘আগামী দিনের কথা আগামী দিন বলবে। যদি প্রদেশ কংগ্রেস মনে করে, তাহলে এ ধরনের কর্মসূচি হতে পারে। দেশ ও দেশের মানুষের স্বস্তিতে বাস করা গুরুত্বপূর্ণ। সেটা এখন বিপদের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। ধর্মের ভিত্তিতে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মনে যে উন্মাদনা তৈরির জন্য রাজনৈতিক প্রয়াস, তাতে সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের এক হওয়া উচিত’’। অন্যদিকে বিমানের পাশে বসে সোমেন মিত্র বললেন, ‘‘যাত্রা শুরু হল’’।

আরও পড়ুন: আমাদের দম আছে, বাংলায় এনআরসি হবেই: দিলীপ

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে লড়লেও উনিশের লোকসভার আগে আসন রফা নিয়ে চরম নাটকের পরেও শেষ পর্যন্ত পৃথকভাবেই লড়েছে হাত ও লাল পতাকা। এরপর উনিশের নির্বাচনে একটাও আসনে জয়ের মুখ দেখেনি বামেরা। আর কংগ্রেসের ঝুলিতে জুটেছিল ২টি আসন। তবে এই নির্বাচনেই বেনজির সাফল্য পেয়েছে গেরুয়া শিবির। লোকসভা ভোটের ফলাফলে বিজেপির এই ‘বাড়বাড়ন্তের’ জন্য বাম-কংগ্রেসকেই দুষেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মমতা অভিযোগ করেছিলেন, লোকসভা নির্বাচনে বামেদের হারানো ভোটের শতাংশ বিজেপির বেড়ে যাওয়া ভোট শতাংশের সমান। এরপর বিধানসভার অন্দর ও বাইরে বাম-কংগ্রেসকে হাতে হাত দিয়ে লড়াইয়ের বার্তাও দিয়েছেন মমতা। তবে শুধু মমতার বার্তাই নয়, এ রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের ফল স্পষ্ট করে দিয়েছে এই দু’দলেরই অস্তিত্বই সংকটের মুখে। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগের সেই অনড় মনোভাব ছেড়ে সম্ভবত নমনীয় হওয়ার বাস্তবতা অনুভব করেছে দু’দলই, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। ফলে বিধান ভবনে সোমবারের এই চা-চক্র আগামী দিনে রাজ্যের রাজনৈতিক চক্রের ক্ষেত্রে বিশেষ ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু উপয়পক্ষেরই হাই-কমান্ড বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান গ্রহণ করে, তার উপরই সামগ্রিক প্রেক্ষাপট নির্ভর করছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

CONGRESS biman bose Left
Advertisment