লকডাউন চলছে ঠিকই কিন্তু এরমধ্যেই রীতিমত সরব বাংলার রাজনীতি। পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছে ঘুঁটি সাজানোর কাজ। তবে দলের অন্দরে ক্ষমতার মানচিত্র বদল হতেই পদ্মশিবিরে শোরগোল।
আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনকে কার্যত পাখির চোখ করে বঙ্গে ক্ষমতা বিস্তার করতে মরিয়া বিজেপি। সেই মোতাবেক তৈরি হয়েছে নতুন রাজ্য কমিটি। তবে দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতাদের সরিয়ে কেন তৃণমূল-সিপিএমত্যাগী নেতাদের বিজেপি রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হল তা নিয়েই দলের অন্দরে প্রশ্ন তুলেছেন গেরুয়া শিবিরের ‘আদি নেতারা’। বিজেপিতে যোগ দেওয়া বেশ কয়েকটি নতুন মুখকে বিভিন্ন মোর্চার প্রধান করার মত সিদ্ধান্ত নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করছে দলেরই একাংশ।
আরও পড়ুন, বিজেপিকে প্রশ্ন মুকুলের, কেন ‘বঞ্চিত’ বাংলা
সম্প্রতি রদবদল ঘটানো হয় রাজ্য বিজেপির মহিলা, যুব মোর্চা এবং এসসি-এসটি শাখায়। হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফ্যাশন ডিজাইনার-রাজনীতিক অগ্নিমিত্রা পলকে। সাংসদ সৌমিত্র খাঁ পেয়েছেন যুব মোর্চা প্রধানের দায়িত্ব। উল্লেখ্য, গত বছর লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সৌমিত্র খাঁ। এছাড়াও কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া দুলাল বর-কে এসসি মোর্চা সভাপতির পদে নিয়োগ করা হয়েছে। সিপিএম থেকে যোগ দেওয়া সাংসদ খগেন মুর্মুকে এসটি মোর্চার প্রধান করা হয়েছে। দলের এমন সিদ্ধান্তেই অসন্তোষের মেঘ তৈরি হয়েছে বর্ষীয়াণ নেতাদের মনে। এও অভিযোগ করা হয়েছে যে নতুন নেতাদের হাতে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অপর্ণ করে পুরানোদের কোণঠাসা করতে চাইছে দল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বর্ষীয়াণ বিজেপি নেতা বলেন, "যাঁরা সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেলের, তাঁরা মূলত বহিরাগত। যাঁরা এতদিন ধরে দলের খারাপ এবং ভালো সময়ে পাশে থেকেছেন, দলের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে এসেছেন, তাঁদেরই এখন দল উপেক্ষা করল। এইসব নতুন নেতারা সুবিধাবাদী। আগের দলে সুবিধা করতে না পেরে দলবদল করেছেন।"
আরও পড়ুন, গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযানে কেন নেই বাংলার ১১ লক্ষ পরিযায়ী?, বঞ্চনার অভিযোগ অভিষেকের
তবে কেবল সৌমিত্র-অগ্নিমিত্রারাই নন। যেভাবে রাজ্যে বিজেপির সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পেয়েছেন একদা তৃণমূলের নেতা অর্জুন সিং, সেখানেও প্রশ্ন তুলছে ‘আদি ব্রিগেড’। এমনকি নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এবং নতুন রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়াকেও ভালো চোখে দেখছেন না গেরুয়া শিবিরের দীর্ঘদিনের কর্মীরা।
বিজেপির এক নেতার কথায়, "আমরা বাইরের লোকদের উপর সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারি না। তাহলে তা এতদিন যারা দলের জন্য নিরলস কাজ করে গিয়েছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাঁদের কাছে ভুল বার্তা পাঠাবে। রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বের অবশ্যই উচিত প্রবীণদের অগ্রাধিকার দেওয়া।"
যদিও এই বিষয়টি নিয়ে মেদিনীপুরের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "রাজ্য কমিটিতে কাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, কাকে করা হবে না সে সম্পর্কে দলের পক্ষে সকলকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। এটি একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। নতুন কমিটি গঠনের পরপর নেতাদের কাছ থেকে এ জাতীয় প্রতিক্রিয়া আসা স্বাভাবিক। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে।"
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন