সোমবার মধ্যরাতেই লোকসভায় ৩১১-৮০ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। বিতর্কিত এই বিল নিয়ে সরগরম দেশের রাজনীতি। লোকসভার রায় পদ্ম শিবিরের পক্ষে গেলেও 'ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি', এই মর্মে বহু রাজনৈতিক দলই বিরোধিতা করেছে এই বিলের। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক রাজনীতিকরা কে কী বলেছেন-
নরেন্দ্র মোদী, প্রধানমন্ত্রী: আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে বহু চর্চা ও বিতর্ক শেষে লোকসভায় এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯ পাস হয়েছে। এই বিলটি বহু শতাব্দী ধরে ভারতের মূল্যবোধ এবং প্রাচীন বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়েই চলছিল।
অমিত শাহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: এটা সবারই জানা যে সংখ্যালঘুরা পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানকে তাঁদের আবাসভূমি হিসাবে বেছে নিয়েছিল, তাঁরা এদেশে সংশয় নিয়ে বাস করতেন। মোদী সরকার কর্তৃক সংশোধিত এই আইন ভারতে তাঁদের মর্যাদা এবং জীবন পুনর্নির্মাণ করতে সহায়তা করবে।
রাজনাথ সিং, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী: বিলটি জাতীয় স্বার্থে পাস হয়েছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়ন ছিল, যার কারণে সকলে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। বিলটি এনে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
আরও পড়ুন: “নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর ছক”
রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস: নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল এনে ভারতীয় সংবিধানের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। যারা এই বিলটিকে সমর্থন করছে তারা আমাদের দেশের ভীত নষ্ট করার চেষ্টা করে চলেছে।
পি চিদাম্বরম, কংগ্রেস: ক্যাব অসাংবিধানিক। লোকসভায় যে বিলটি পাস হয়েছে তা স্পষ্টতই অসাংবিধানিক এবং ভবিষ্যতে এই বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হবে।
শশী থারুর, কংগ্রেস: যদি এই বিলটি পাস হয় সেক্ষেত্রে মহম্মদ আলি জিন্নার চিন্তাভাবনারই জয় হবে। পাকিস্তানের মতো একই যুক্তি সাজিয়ে পাকিস্তানকে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। তাৎপর্যপূর্ণভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদী বিজেপি জিন্নার ভাবাবেগকেই সমর্থন করছে।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, কংগ্রেস: ধর্মান্ধতা এবং সংকীর্ণতা যে ভারতকে গ্রাস করছে, গতকাল মধ্যরাতে ক্যাব পাস সেই চিন্তাকে সিলমোহর দিল। আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের স্বাধীনতার জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সেই সাম্য, ধর্মের স্বাধীনতা এবং সংবিধানকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। আমরা আমাদের তরফে সবরকম চেষ্টা করব সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।
আরও পড়ুন: ক্যাবের প্রতিবাদে উত্তাল উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি, বিপর্যস্ত জনজীবন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেস: এটি একটি বিভাজনের বিল। যে কোনও মূল্যে এর বিরোধিতা করা উচিত। ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ধর্মের ভিত্তিতে কখনও নাগরিকত্ব দেওয়া যায় না।
আসাউদ্দিন ওয়াইসি, এআইএমআইএম: আপনি ধর্মের নামে দেশকে ভাগ করছেন। আগামিকাল সর্দার প্যাটেলের নামে ভাষাতেও এই বিভাজন করা হবে। এটি একটি সাম্প্রদায়িক অ্যাজেন্ডা, সংবিধানের পরিপন্থী। আমি নিশ্চিত যে এটি সুপ্রিম কোর্টে ঠাঁই পাবে না।
প্রশান্ত কিশোর, জেডি(ইউ): নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে সমর্থন করেছে জেডিইউ। এই সিদ্ধান্তে আমি হতাশ। যে বিল ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করবে, সেই বিলকে সমর্থন করল! এটা দলের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে বেমানান। যে দলের নেতৃত্ব গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত, সেই দল এই বিলকে সমর্থন করল!
সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই(এম): এটি করে তারা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে আরও তীক্ষ্ণ করতে চায়। তারা ভারতের জনগণকে বিভক্ত করতে চায় এবং আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চায়।
রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, কংগ্রেস: এটি ভারতের উপর সরাসরি আক্রমণ। ৭২ বছর আগে ব্রিটিশ, সাভারকার এবং জিন্নার ভ্রষ্ট চিন্তাধারায় ভাগ করা হয়েছিল ভারতকে। ফের আমাদের মূল্যবোধকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি।
উদ্ধব ঠাকরে, শিবসেনা: আমাদের এই ধারণাটি পরিবর্তন করতে হবে যে বিলের জন্য বিজেপিকে যারা সমর্থন করছেন তাঁরা একজন দেশপ্রেমিক এবং যাঁরা বিরোধিতা করছেন তাঁরা দেশবিরোধী। সরকারের উচিত এই বিলের প্রেক্ষিতে ওঠা সমস্ত প্রশ্নের জবাব দেওয়া।
বাইচুং ভুটিয়া, হামরো সিকিম পার্টি: আমরা ক্যাব নিয়ে গভীরভাবে হতাশ। নাগাল্যান্ড, মেঘালয় এবং অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যেকে বাদ দেওয়া হলেও এই বিলে সিকিমকে বাদ দেওয়া হয়নি। অবশ্যই এই বিলের মাধ্যমে ৩১৭এফ ধারাটি হ্রাস করার একটি উপায় মাত্র।
Read the story in English