অর্জুন পর্ব কী শীঘ্রই সমাপ্তির দিকে? যেভাবে ক্রমাগত দলের বাইরে প্রকাশ্যে বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন তা কিসের ইঙ্গিত? মূলত কোন আতঙ্ক ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদকে গ্রাস করেছে তা কিন্তু ইতিমধ্যে খোলসা করেছেন তিনি। একেই নিজের রাজ্যপাটে দাপট তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তারওপর রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা বিশেষে করে সদ্যসমাপ্ত আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচনের দলের হাল দেখে তাঁর চোখ কপালে উঠে গিয়েছে। তাঁর কথাতেই তা স্পষ্ট। এতদিন ছিল পাটবিদ্রোহ, এবার সরাসরি সাংগঠনিক বিদ্রোহ!
আসানসোল উপনির্বাচনে দলের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে মাথা ঘুরেছে অর্জুন সিংয়ের। তাঁর বক্তব্য়, 'তিনি আগেই দলকে বলেছেন আসানসোলে ৯০০ বুথে এজেন্ট দিতে পারছে না। সেক্ষেত্রে ৩ লক্ষের ওপর ভোটে হারবে বিজেপি প্রার্থী।' টানা দুবার যে সিটে ব্যাপক মার্জিনে জয় পেয়েছে বিজেপি প্রার্থী। সেই আসনে এমন হাল দেখে চমকে গিয়েছেন অর্জুন। সেই আশঙ্কার কথাই বলেছেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২১ বিধানসভা ভোটের পর থেকে রাজ্যের নানা প্রান্তে সাংগঠনিক ভাবে বিজেপি দুর্বল হয়েছে। একথা উপলব্ধি করতে পেরেছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ। তার ফলেই কী গলার স্বর ক্রমশ চড়ছে? এই প্রশ্নও উঠছে। সামনেই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন।
ভাটপাড়া পুরসভার একসময়ের একচ্ছত্রাধিপতি এখন সেখানেই রাজনৈতিক রোষানলে পড়ছেন। একের পর পুলিশি মামলায় জড়িয়েছেন সাংসদ। ছোটখোট গন্ডগোলেও চুনোপুটি তৃণমূল নেতা প্রকাশ্যে তাঁকে চমকে দিচ্ছেন। পুরভোটের দিন ইট-পাটকেল, ডাব উড়ে এসেছে সাংসদকে লক্ষ্য করে। পুলিশ কোনওরকমে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। পুরসভা ভোটে ব্যারাকপুর লোকসভার প্রতিটি পুরসভায় ল্যাজেগোবরে অবস্থা হয়েছে সাংসদের।
ভাইপো সৌরভ সিং-সহ একাধিক আত্মীয় পদ্মশিবির ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েছেন। তাঁর এই ভাইপোর শেষ মুহূর্তে পুরভোটে বিজেপি প্রার্থী না হয়ে ঘরে (তৃণমূলে) ফিরে যাওয়ায় রাজনৈতিক মহল ভ্রু কুঁচকেছিলে। প্রশ্ন উঠেছিল, সৌরভ সিংয়ের দলবদলের সিদ্ধান্ত কী একান্তই নিজের? এর পিছনে কার পরামর্শ রয়েছে?
পাটচাষী ও চটকল শ্রমিকদের 'স্বার্থে' গলা ফাটানো আসলে কীসের ইঙ্গিত তা ক্রমশ নিজেই পরিস্কার করে দিচ্ছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও অর্জুন সিং নিজে বলছেন তিনি চটকল নিয়ে কোনও রাজনীতি করতে চান না। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গেও মাঠে-ময়দানে লড়াইতে প্রস্তুত, একথা তিনি ঘোষণা করেছিলেন। প্রাক্তন তৃণমূলীর ওই ঘোষণার পর থেকে আশ্চর্যজনক ভাবে নরম সুর শোনা যাচ্ছে তৃণমূলের গলাতেও। বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও এবার ক্ষোভের কথা প্রকাশ্যে বলছেন দলের রাজ্য সহ সভাপতি। তৃণমূল থেকে এসেছেন বলে তাঁদের বহিরাগত বলছেন বলেও তিনি দাবি করছেন। এক্ষেত্রেও রাজনৈতিক সুড়সুড়ি রয়েছে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
আরও পড়ুন- নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর অফিসে পুলিশ কেন? জানতে চেয়ে মুখ্যসচিবকে তলব রাজ্যপালের
দুই দশক আগে এরাজ্যে দমদম ও কৃষ্ণনগরে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জয় পেয়েছিল। তারপর ক্রমশ এরাজ্যে সাংগঠনিক দিক থেকে বিজেপি ফিকে হয়ে গিয়েছিল। মোদী জমানায় মূলত আসানসোল লোকসভা নির্বাচনে ২০১৪-এ বিজেপি প্রার্থীর জয় নতুন করে এরাজ্যে লড়াইয়ের পথ দেখায় গেরুয়া শিবিরকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই আসানসোল কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দলের সাংগঠনিক দৈন্য দশা দেখেই অর্জুন সিংয়ের মনে সংশয় জাগে। নির্বাচনের ফল বের হওয়ার পর থেকেই পাটশিল্প নিয়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন ডাকাবুকো সাংসদ। এবার সংগঠন নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তিনি। আসানসোলের ভোট পর্যবেক্ষণ এমন পরিস্থিতি তৈরি করার কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনের আগে একাধিক বিধানসভার উপনির্বাচনে ময়দানে দাঁড়াতেই পারেনি বিজেপি। পুরসভা ও কর্পোরেশন নির্বাচনেও গেরুয়া শিবিরের তথৈবচ অবস্থা। যদিও বিজেপির দাবি, প্রতিটি নির্বাচনে ভোট লুঠ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ঘাসফুল শিবির ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ যাই হোক না কেন সাংগঠনিক শক্তি হারিয়েছে বিজেপি।
এমতাবস্থায় রাজ্যের যে কোনও লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হলে তৃণমূলের জয় একপ্রকার নিশ্চিত। অবাঙালি অধ্যুষিত আসানসোলে বিজেপির হার সেই ধারনা আরও দৃঢ় করেছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আসানসোলে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন, 'খেলা এখনও শুরু হয়নি। আসানসোলে জেতার পর দরজা খুলব কে কোথায় আসবে, আর কে কোথায় জিতবে দেখবেন।' সেদিন কীসের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যুবরাজ? সেই চর্চাও চলছে রাজনৈতিক মহলে।