বিজেপির নবান্ন অভিযানে বলবিন্দর সিংয়ের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। আগ্নেয়াস্ত্রটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বলে দাবি নিরাপত্তা কর্মী বলবিন্দরের। তিনি বিজেপি নেতা প্রিয়াঙ্গু পান্ডের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। এদিকে আগ্নেয়াস্ত্র বিতর্কের মাঝেই বলবিন্দরের পাগড়ি টেনে-হিঁচড়ে খুলে দেওয়ায় সংশ্লিশ্ট পুলিশ কর্মীদের শাস্তি দেওয়ার দাবি উঠেছে। একদিকে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব, এমনকী শিরোমনি অকালি দলও এই ঘটনায় শিখ জাতিকে অপমান করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে মামলা দায়ের করার দাবি জানিয়েছে। পাগড়ি খোলার নয়া বিতর্কে জড়াল বাংলার পুলিশ।
আরও পড়ুন- থানায় বিজেপি সাংসদদের ঘাড় ধাক্কা, লোকসভায় স্বাধিকার ভঙ্গের নালিশ জানাবে পদ্ম ব্রিগেড
একজন শিখের যেভাবে পাগড়ি খুলে দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত অপমানকর ও নিন্দনীয় ঘটনা বলেই দাবি করেছেন শিরোমনি অকালি দলের জাতীয় মুখপাত্র মনিজদার সিং সিরসা। তিনি বলেন, "কলকাতায় বাংলার পুলিশ বলবিন্দর সিংকে মারধর করেছে, তাঁর পাগড়ি খুলে দিয়ে অপমান করেছে। এটা লজ্জা ও নিন্দনীয় ঘটনা। এই ভিডিও দেখে দুনিয়ার শিখরা দুঃখ পেয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ২৯৫এ ধারায় মামলা করা হোক। শাস্তি দেওয়া হোক।"
আরও পড়ুন- পুলিশের ছেটানো বেগুনি রঙের জল নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ দিলীপ ঘোষ
বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পাগড়ি খোলা ইস্যুতে তুলোধনা করেছেন মমতা সরকারের পুলিশকে। তাঁরা শুক্রবার টুইটে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় লিখেছেন, "বৃহস্পতিবারের ওই ছবি দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। বাংলার পুলিশ এ কী কান্ড ঘটিয়েছে! এই ঘটনার জন্য আদালতে মামলা করার অনুরোধ করছি তেজিন্দার পাল সিংকে।" বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র তেজিন্দার পাল সিং বাগ্গা টুইট বার্তায় বলেছেন, "মমতা সরকার যে ভাবে একজন শিখ নিরাপত্তা কর্মীর পাগড়ি খুলে যে অপমান করেছে তাতে ৮৪ সালের দৃশ্য মনে পড়ে যাচ্ছে। দেশের স্বাধীনতায় সব থেকে বলিদান দেওয়া শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা সরকারের ১ মিনিট ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।"
আরও পড়ুন- “বাংলায় নতুন সূর্যোদয় হবেই”, মমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তেজস্বী সূর্য
এরাজ্যে বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ও সহপর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননও বৃহস্পতিবারের নবান্ন অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। লাঠির ঘা খেয়েছেন অরবিন্দ মেনন। কৈলাশ টুইটে লিখেছেন, "একেবারে আপত্তিজনক ঘটনা। শিখেদের পাগড়ি খুব পবিত্র মানা হয়। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ অত্যন্ত অন্যায় কাজ করেছে। পুলিশকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।" অরবিন্দ মেননের বক্তব্য, "বলবিন্দার সিংয়ের পাগড়ি টেনে খুলে বাংলার পুলিশ দেশের সব শিখ জাতিকে অপমান করেছে। মনে হচ্ছে বাংলায় পুনরায় মোঘলদের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এক সম্প্রদায় ছাড়া কোনও সম্প্রদায়ের ভাবনাকে সম্মান দেয় না বাংলার প্রশাসন।"
আরও পড়ুন- লম্ফঝম্ফই সার, পুলিশকে টপকে নবান্নের বক্সেই ঢুকতে পারল না বিজেপি
পাগড়ি খোলা নিয়ে বিতর্ক বেড়েই চলেছে। চাপ বাড়ছে বাংলার পুলিশের ওপর। রাজনীতির পর খেলার জগতেও এই ঘটনার নিন্দার ঝড় বইতে শুরু করেছে। জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন তারকা হরভজন সিং টুইটে লিখেছেন, "এই পাগড়ি খোলার ঘটনার দিকে মমতা সরকার নজর দিন। এটা ঠিক কাজ হয়নি।"
নবান্ন অভিযানে পুলিশের বিরুদ্ধে বোমা ছোড়ার অভিযোগ করেছে বিজেপি। বলবিন্দরের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে। তাঁকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তবে পাগড়ি টেনে খোলার বিতর্ক বিজেপির নবান্ন অভিযানে নতুন মাত্রা পেল।
আরও পড়ুন- ‘দেশের মধ্যে সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার চলছে পশ্চিমবঙ্গে’
এদিকে নবান্ন অভিযানে নেৃতৃত্ব দেওয়া বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করল হেস্টিংস থানার পুলিশ। কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, অর্জুন সিংদের বিরুদ্ধে বেআইনি জমায়েত, মহামারি আইন, সরকারি সম্পত্তি নষ্টসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন