প্রাক্তন ও বর্তমান সভাপতি একযোগে তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। তারপর কাটোয়া গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন সুকান্ত মজুমদার ও দিলীপ ঘোষ।
একে একে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরও যে দলীয় কোন্দল মেটেনি তা এদিনের বিক্ষোভে অনেকটাই স্পষ্ট। যদিও ঘটনার পিছনে তৃণমূলের ইন্ধন দেখছেন দিলীপ-সুকান্ত জুটি। এদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল থেকে আগত হলেও বাকি দু'জন আরএসএস ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। বঙ্গ বিজেপিতে নতুন সমীকরণ কী শুরু হতে চলেছে? তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে গুঞ্জন অব্যাহত।
আরও পড়ুন- দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধেই লাঠি চার্জের হুমকি দিলীপের, ‘তৃণমূলী ইন্ধন’- দাবি সুকান্তর
মুকুল রায় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসার পর থেকে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কোনও বনিবনা ছিল না। তারপর একে একে তৃণমূলের একাধিক নেতৃত্ব বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পয়েছেন। পরাজিত হতেই তাঁরা ফের উল্টোপথে হাঁটা শুরু করেছেন। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর বিজেপির কোন্দল একেবারে প্রকাশ্যে চলে আসে। কারও মুখ বন্ধ করার কোনও উপায় ছিল না। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে প্রকাশ্যে আক্রমণ শুরু করে একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব। হঠাৎই দল বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে সভাপতি ঘোষণা করে। যদিও এখনও রাজ্যে নতুন কোনও কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, দলের প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমান সভাপতি একযোগে ময়দানে নেমে পড়ায়। তাহলে কী নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই সুকান্ত মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন দিলীপ ঘোষ? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পদ্মশিবিরের অন্দরমহলে।
বিজেপি সভাপতি নির্ভর সংগঠন। দলের সার্বিক সাংগঠনিক ক্ষমতা তাঁর হাতেই থাকে। কমিটি গঠনে সর্বাধিক গুরুত্ব পায় সভাপতির মাতমত। অন্যদিকে এরাজ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে 'বালুমাটির শুভেন্দু ও লালমাটির দিলীপ ঘোষ', একথা বলে এলেও আদপে দলীয় আন্দোলনে কতটা বাস্তবতা পেয়েছে তা নিয়েও চর্চা রয়েছে গেরুয়া শিবিরে। এরই মধ্যে জেলা সফরে সুকান্তকে সঙ্গে করে বেরিয়ে পড়েছেন দিলীপ ঘোষ।
আরও পড়ুন- ফের ত্রিপুরায় ‘আক্রান্ত’ তৃণমূল, ‘হেনস্থা’ মহিলা সাংসদকে, বিজেপিকে তুলোধনা অভিষেকের
বিধানসভা নির্বাচনের পর দলের নীচু স্তরের কর্মীরা অত্যাচারের মুখে পরেছিল বলে বিজেপি অভিযোগ করেছিল। কিন্তু দলের স্থানীয় নেতৃত্ব বা শীর্ষ নেতৃত্বকে তখন কাছে না পাওয়ায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বিজেপির তৃণমূল স্তরের কর্মীরা। অনেকেই আবার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। দলের একাধিক জেলা সভাপতির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তাঁরা। যদিও তাঁরা এখন স্বপদে বহাল রয়েছেন। দলের একাংশের বক্তব্য, এই সভাপতিরা অধিকাংশই দিলীপ ঘোষের অনুগামী। সুকান্ত সভাপতি হওয়ায় দলের ওই অংশ মনে করছে জেলা স্তরের সভাপতি বদল করা হবে। কিন্তু প্রাক্তনী যেভাবে বর্তমান সভাপতিকে নিয়ে জেলা ঘুরছেন তাতে জেলা কমিটিতে তাঁর প্রভাব থাকবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অভিজ্ঞমহলের মতে, গণ-আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁর বক্তব্যে ধারও রয়েছে। এদিকে রাজ্যস্তরে দলের সাংগঠন জোরদার করতে মাঠে নেমে পড়েছেন সুকান্ত-দিলীপ। সর্বভারতীয় নেতৃত্বে গিয়েও রাজ্যে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে মরিয়া দিলীপ ঘোষ। এর আগে প্রাক্তন ও বর্তমান সভাপতির এমন জেলা সফর নজরে আসেনি। মুকুল রায় সর্বভারতীয় সভাপতি হলেও রাজ্য বা জেলা সংগঠনে নাক গলানো দূরের কথা কখনও কোনও মন্তব্য পর্যন্ত করতেন না। বলতেন, এটা তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। আগামিতে আদৌ তৃণমূলের বিরুদ্ধে কতটা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে বঙ্গ বিজেপি তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে রাজনৈতিক মহল।
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখনটেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন