দলের দুই সাংসদের বাংলা ভাগের দাবি ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। বাঙালি আবেগকে হাতিয়ার করে বিজেপি বিরোধীতায় সোচ্চার তৃণমূল। পাল্টা উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলের বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে গেরুয়া বাহিনী। কিন্তু, অস্বস্তির কাঁটা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। পৃথক রাজ্যের দাবি আগেই উড়িয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এবার জঙ্গলমহলে দাঁড়িয়ে সৌমিত্র খাঁ, জন বার্লার দাবি নস্যাৎ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সাফ জানালেন, 'রাজ্য ভাগের পক্ষে ভারতীয় জনতা পার্টির মত নেই।'
কী বলেছেন শুভেন্দ অধিকারী?
প্রথম জন বার্লা, তারপর সৌমিত্র খাঁ। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ প্রথম পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি তোলেন। এরপর, একই দাবিতে সরব বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্রও। দীর্ঘ বঞ্চনার যুক্তিতেই পৃথর রাজ্যের দাবি বলে জানান এই দুই গেরুয়া সাংসদ। এরপরই তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। প্রশ্ন ওঠে তাহলে কী ভোটে বাংলা। দখল না করতে পেরেই এবার পশ্চিমবঙ্গ ভাগের পরিকল্পনা করছে বিজেপি?
পৃথক রাজ্য ইস্যুতে পদ্মবনের অন্দরেও প্রবল বিতর্ক দানা বেঁধেছে। হিমশিম অবস্থা বিজেপি নেতৃত্বের। বাংলা ভাগের দাবি বাঙালি আবেগকে আঘাতা করতে পারে, তা আঁচ করেই সৌমিত্র খাঁকে দিল্লিতে ডেকে পাঠান সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। সূত্রের খবর, দুই বিজেপি সাংসদকেই সতর্ক করে দেয় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু শোনা যাচ্ছে এরপরও নিজেদের দাবিতে অনড় সৌমিত্র, জন বার্লা। ফলে অস্বস্তির কাঁটা রয়েই গিয়েছে।
আরও পড়ুন- Ram Mandir: ইউপি ভোটে অযোধ্যাই বিজেপির ব্রহ্মাস্ত্র! ভার্চুয়ালি যোগীদের সেই ক্লাস নিলেন মোদী
এই পরিস্থিতিতে দলীয় কাজে শনিবার জঙ্গলমহলের গোপীবল্লভপুর গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে বাংলা ভাগের প্রসঙ্গ উঠতেই দলীয় দুই সাংসদের দাবি খারিজ করেন শুভেন্দু। তিনি বলেছেন, 'যাঁরা পৃথক রাজ্যের কথা বলেছেন, তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত মত দিয়েছে। পশ্চিমভঙ্গ ভাগ নিয়ে দলের মত জানিয়েছেন রাজ্য সভাপতি, আমার বক্তব্য সেটাই। দল রাজ্য ভাগের কথা বলেনি। ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য ভাগের পক্ষের মত নেই।' বিরোধী দলনেতার মন্তব্য কার্যত সৌমিত্র, বার্লাকেও বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- জম্মু বিমানবন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ
যদিও, দলীয় লাইন মেনেই জঙ্গলমহলের বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তাঁর অভিযোগ, 'জঙ্গলমহলকে, উত্তরবঙ্গকে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চাকরি থেকে বঞ্চিত দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটা লোক। এঁদের বাড়ির বিলাতি কুকুরও চাকরি পায়। কিন্তু জঙ্গলমহলের আদিবাসী ছেলেরা চাকরি পায় না। দক্ষিণ কলকাতার কটা লোক রাজ্য চালাবে, আমরা গ্রামের লোকেরা বানের জলে ভেসে যাবে- তা চলবে না।'
শনিবার উত্তরবঙ্গে সফরে গিয়েও একই সুর শোনা যায় রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখে। পৃথক রাজ্য ইস্যুতে তিনি বলেছেন, 'এখানকার মানুষ বঞ্চিত। স্বাধীনতার সত্তর বছরও পরও এঁদের দাবি-দাওয়া পূর্ণ হয়নি। বিজেপিতেই আস্থা রেখেছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ। এখানকার বাসিন্দারা তৃণমূলের বঞ্চনা, অথ্যাচার থেকে পরিত্রাণ পেতে পৃথক রাজ্যের দাবি করেছেন জনপ্রতিনিধির কাছে। তিনি সেটাই বলেছেন। কিন্তু, চাইলেই তো আর মেলে না। আলোচনা হবে, তারপর দেখা যাবে। তবে এখনই বিজেপি এসব নিয়ে ভাবছে না।'
পদ্ম শিবির যে কোনও মতেই বাংলা ভাগের পক্ষে নয়, এখন তা প্রমাণে মরিয়া বঙ্গ বিজেপির মসিহারা। তাই দলের অন্দরের ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে শুভেন্দু-দিলীপ সম্পর্ক অবনতির গুঞ্জন থাকলেও এই ইস্যুতে এক রা বিরোধী দলনেতা ও রাজ্য বিজেপি সভাপতির।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন