এনআরএসকাণ্ডে তৃণমূল নেতৃত্বের ‘নীরবতা’ দেখে ‘লজ্জিত’ কলকাতার মহানাগরিক কন্যা শাব্বা হাকিম। নীলরতন সরকার হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার নিগ্রহকাণ্ডে সরব হয়েছেন পেশায় ডাক্তার শাব্বা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কন্যার এমন মন্তব্যে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এনআরএসকাণ্ডে এই মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ রাজ্য। মুকুল রায়ের দাবি, তৃণমূলের নেতৃত্বে এই কাণ্ড ঘটেছে এবং একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে আড়াল করতে চাইছে শাসক দল। বামেরাও এই ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায় চাপিয়েছে তৃণমূল সরকারের উপর। আর এসবকে ছাপিয়ে দলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করতে বসে স্বয়ং মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আহত ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের নামটাই সঠিকভাবে উচ্চারণ করে উঠতে পারেননি। ফলে এই ইস্যুতে সব মিলয়ে রীতিমতো ব্যকফুটে মমতা প্রশাসন। আর ঠিক এই সময়ে নিজেকে তৃণমূল সমর্থক বলে দাবি করে ববি-কন্যার এমন মন্তব্য প্রশ্নাতীতভাবে অস্বস্তিতে ফেলেছে ঘাসফুল শিবিরকে।
আরও পড়ুন: Doctors’ Protest Live: ফের রক্ত ঝরল এনআরএসে
কী লিখেছেন শাব্বা?
বুধবার রাতে একটি ফেসবুক পোস্টে ডাঃ শাব্বা হাকিম লেখেন, ‘‘এ রাজ্যের সরকারি ও অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে আউটডোর বয়কট করেছেন ডাক্তাররা। কিন্তু জরুরি বিভাগে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। মানবিকতার খাতিরেই আমরা অন্য পেশার মতো কাজ বন্ধ করতে পারি না। যদি বাস বা ট্যাক্সি ধর্মঘট হয়, তবে একজন ট্যাক্সি চালক-বাসচালকও আপনাকে পরিষেবা দেবেন না, সে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন। যাঁরা বলছেন, ‘অন্য রোগীদের কী দোষ?’ তাঁরা দয়া করে সরকারকে জিজ্ঞেস করুন, সরকারি হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তাঁরা কেন ডাক্তারদের নিরাপত্তা দিতে পারলেন না? দয়া করে জিজ্ঞেস করুন, যখন ২টি ট্রাকে করে গুন্ডারা এল, কেন সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হল না? কেন হাসপাতাল চত্বরে এখনও গুন্ডারা ঘুরে বেড়াচ্ছে? শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে আমাদের। নিরাপদে কাজ করার অধিকার রয়েছে আমাদের’’। এরপরই আত্মসমালোচনার সুরে ফিরহাদ কন্যা 'বিশেষ দ্রষ্টব্য' সহকারে লেখেন, ‘‘একজন তৃণমূল সমর্থক হিসেবে আমাদের নেতৃত্বের নীরবতা দেখে আমি খুবই লজ্জিত’’। শাব্বার এই লেখা নিয়েই চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
আরও পড়ুন: ‘কী নাম ওঁর, প্রতিভা না পরিভা’? ডাঃ পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের নামই বলতে পারলেন না অভিষেক
এদিকে, এনআরএসকাণ্ড নিয়ে মেয়ের এহেন বক্তব্য প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘শাব্বা একজন ডাক্তার। ও ডাক্তার হিসেবে ওর বন্ধুদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি ফেসবুক করি না। দেখিওনি ওর পোস্ট। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই’’।
আরও পড়ুন: সন্দেশখালির পর এনআরএস, বিরোধীদের জোড়া ফলায় মমতা
প্রসঙ্গত, নীলরতন সরকার হাসপাতালে রোগী মৃত্যুকে ঘিরে এই মুহূর্তে উত্তাল রাজ্যের চিকিৎসক মহল। সোমবার রাতে অশীতিপর মহম্মদ সঈদের মৃত্যু হয়। পরিজনদের অভিযোগ, চিকিৎসার গাফিলতিতেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এরপরই জুনিয়র ডাক্তারদের মারধর করা হয়। নিহত রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে অমানবিক আক্রমণের অভিযোগ ওঠে। এই মুহূর্তে কলকাতারই এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। আরেক প্রহৃত চিকিৎসক যশ টেকওয়ানিও এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন।
আরও পড়ুন: NRS doctors’ protest Live: এনআরএসে খুলল জরুরি বিভাগ, বন্ধ আউটডোর
এদিকে, এনআরএসকাণ্ডে এখনও সে অর্থে মুখ খোলেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরশু থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে কার্যত থমকে গিয়েছে চিকিৎসা পরিষেবা। এহেন পরিস্থিতিতে রোগী থেকে জুনিয়র ডাক্তার, সকলের একটাই দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা নিক’’। কিন্তু এখনও প্রকাশ্যে একটা কথাও বলেননি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (স্বাস্থ্য দফতরের একটি বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে যা বলা হয়েছে, তিনি সবরকম পদক্ষেপ করছেন)। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পাশে থাকার আশ্বাস দিলেও তা কাজে আসেনি। সেই প্রেক্ষাপটে মমতারই অত্যন্ত আস্থাভাজন ফিরহাদ হাকিমের মেয়ের এহেন ফেসবুক পোস্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।