৭৪ বছরের 'যুবক' সম্মানের লড়াইতে জিততে নেমেছেন পুর নির্বাচনের ময়দানে। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেসের নীতি আদর্শ নিয়ে কোনও কথা বলছেন না। অবহেলা ও হেনস্থার জবাব দিতেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়ে দিলেন ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে অতীতে অনেকেই নির্দল হিসাবে প্রার্থী হয়েছেন, জয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দিয়েছেন। তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনও সিদ্ধান্তই নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন সচ্চিদানন্দ বন্দ্য়োপাধ্যায়। সচ্চিদানন্দবাবু এলাকায় মনুয়াদা নামেই অধিক পরিচিত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বলেন, 'এই লড়াইটা অন্য মাত্রা পেয়েছে। আমার সঙ্গে যে ছেলেগুলো আছে তাঁরা চাকরিও পাবে না। বরং লাঞ্ছিত হতে পারে। তাহলে পড়ে আছে কিসের জন্য? একটা আশা তো আছেই। পজিটিভি। ভোট যদি স্বচ্ছ হয় তাহলে আমি জিতছি।' সবাই কি আপনার সঙ্গে প্রকাশ্যে প্রচারে বের হতে পারছে? মনুয়াদার জবাব, 'রাস্তা-ঘাটে বহু মানুষ বলছেন সঙ্গে থাকতে পারছি না। আপনি লড়ুন। তবে ভোট আপনিই পাবেন। এই কথাটা আমাকে চার্জ করছে। এলাকার বস্তির বাসিন্দা সহ সকলেই আমার পাশে আছে।'
সকাল-সন্ধ্যে বাড়ির দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন এই প্রবীণ নির্দল প্রার্থী। এরই মধ্যে প্রচারে অসুবিধায়ও পড়েছেন। তাঁর ফ্লেক্স ব্লেড দিয়ে ফালা ফালা করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। একসময় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা কমিটির সভাপতিও। কিন্তু কীভাবে এতটা দূরত্ব তৈরি হল দলের সঙ্গে। মনুয়াবাবুর বক্তব্য, 'আমি নানা ভাবে চেষ্টা করেছিলাম দলে সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে। দলের হয়ে কাজ করতে। কিন্তু কোনও কারণে দলীয় নেতৃত্ব সেটা রাখেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার করতে গিয়ে নানা ভাবে দলের অভ্যন্তরেই বাধা পেয়েছি। তখনই বুঝতে পারলাম দূরত্ব অনেকটাই বেশি হয়েছে। দল আমাকে প্রার্থী করবে না।'
১৯৬৭ থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনীতিতে ভোটে দাঁড়ানোর কথা কখনও ভাবেননি তিনি। মনুয়াদা বলেন, '৭২ নং ওয়ার্ডে এক কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়। তখন দলের হয়ে উপনির্বাচনে দাঁড়ানোর কেউ ছিল না। দলনেত্রী এক জিতেছিলেন। ২০০৪ সালে লড়াই করে জয়ী হলাম। ২০০৫-এ ফের ভাল মার্জিনে জয় পেলাম। ২০১০ ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হয়। আমার স্ত্রীকে দাঁড়ানোর কথা বলেছিল দলীয় নেতৃত্ব। আমি দলকে সরাসরি না করে দিই। দল আমাকে ৭০ নম্বরে টিকিট দেয়, সেখানে জয় পাই। কিন্তু পরে যখন মহিলা ওয়ার্ড উঠে গেল তখন কিন্তু আমি আর ৭২-এ ফিরে যায়নি। লোকসভার নিরিখে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৫০০ ভোটে পিছিয়ে ছিল দল। ২০১৫-তে বিজেপির অসীম বসুর কাছে হেরে যাই। যদিও সেই জয় নিয়েও গুঞ্জন ছিল ওয়ার্ডে।'
আরও পড়ুন- দলের গোষ্ঠীকোন্দলে ক্ষুব্ধ মমতা, মহুয়া মৈত্রের নাম নিয়ে কড়া বার্তা
কেন এই লড়াই? সচ্চিদানন্দবাবুর কথায়, 'লড়াই করে হেরে গেলে সম্মান যাবে না। তবে এই অপদস্ত হওয়াটা মেনে নিলে সম্মান থাকবে না। অবহেলা আর সহ্য হচ্ছে না। ফিরহাদ হাকিম আমাকে ফোনে দাঁড়ানোর পর ফোন করে বলেছে, তোমার কথা ভাবা হবে। এতদিন ভাবেনি আর ভাবতে হবে না। বহু নেতা আমাকে ফোন করেছে। বিজেপি জিতে যাবে বলছে। আমি বলেছি, তৃণমূ্লের একাংশের দুর্ব্যবহারে তাঁরা বিজেপি করছে। বিজেপি বলে কিছু থাকবে না।' বর্ষীয়াণ মনুয়াদার স্পষ্ট কথা, 'পার্টিতে ব্রাত্যদের জন্য এই লড়াই। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বলছি না। প্রাপ্য সম্মানের কথা বলছি।' ২৯টি বুথে প্রার্থী দিতে পারবেন? তিনি বলেন, 'এবার নিয়ম হয়েছে এজেন্টকে সংশ্লিষ্ট পার্টের ভোটার হতে হবে। এই নিয়মের গ্যারাকলে সব বুথে এজেন্ট দেওয়া সমস্যা আছে। নির্বাচন কমিশনকে এটা ভেবে দেখতে হবে।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন