আমাদেরও ভুল হয়েছে, স্বীকারোক্তি মমতার। নাম না করে ফের মুকুল প্রসঙ্গেই ভুল স্বীকার করলেন মমতা। সাম্প্রতিককালে এই নিয়ে দু'বার 'ভুল করেছি' বললেন মমতা। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে তৃণমূলের আসন কমার পর এবার সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে মমতার ঘোষণা, "আমরা ভুল করেছিলাম, তা সংশোধন করতে হবে।" কিন্তু, কোন ভুলের কথা বললেন মমতা?
নোয়াপড়ার বিধায়ক সুনীল সিং সোমবার দিল্লিতে বসে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি সম্পর্কে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের ভগ্নীপতি। এর আগে অর্জুন ছিলেন ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক ও ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান। মমতার স্বীকারোক্তি, "যে বিকাশকে সিপিএমের আমলে খুন করল তাদেরই টিকিট দিলাম। তাঁর (বিকাশের) স্ত্রীকে টিকিট দিইনি। আত্মীয়ের কথায় টিকিট দিয়েছিলাম। এটা আমাদের ভুল ছিল। বেশি ভালবেসে ফেলেছিলাম। এই ভুলগুলো আমাদের সংশোধন করতে হবে।" তাঁর আত্মপোলব্ধি, "ভুল শুধু কর্মীরা করে না, আমাদেরও ভুল হয়। এটা আমাদের ভুল।"
আরও পড়ুন- ‘মমতাকে ধীরে ধীরে ব্যথা দেব’
মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুকে বীজপুর বিধানসভার টিকিট দেওয়া নিয়েও আপশোস করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভানেত্রী। তিনি বলেন, "বাবা দল করতেন, তাই বাবার ছেলেকে টিকিট দিয়েছিলাম"। এর আগে কাঁচরাপাড়ায় মমতা বলেছিলেন, "বিশ্বাস করে তাঁকে ফের দলে নিয়ে ভুল হয়েছিল"। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য়, ঘর ভাঙানোর খেলায় মুকুল যে এ বাংলায় সবার থেকে এগিয়ে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে আর কেউ ভাল জানেন না। তৃণমূলনেত্রীকে এভাবে প্রকাশ্যে সচরাসচর ভুল স্বীকার করতে খুব একটা দেখা যেত না। কিন্তু যে ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ঢল চলছে তাতে এছাড়া আর কোনও উপায় নেই। দলের অভ্যন্তরে যেভাবে অবিশ্বাস শুরু হয়েছে তা যতদিন যাবে, ততই বাড়ার সম্ভাবনা। যাঁরা বিজেপিতে যাবেন বলে পা বাড়িয়ে রয়েছেন, তাঁরাও এই সভায় যোগ দিয়েছেন বলে খবর। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ভুল স্বীকার করে কর্মীদের সঙ্গে এক আসনে বসার চেষ্টা আদপে মমতার দল ধরে রাখার এক কৌশল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন- বিজেপিকে ময়লাকুড়ুনি বললেন মমতা
এই মুহূর্তে তৃণমূলনেত্রীর সব থেকে বড় মাথা ব্যথার কারণ মুকুল - অর্জুন জুটি। এই জুটিই সব থেকে বেশি বেগ দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলনেত্রী এঁদের ওপর ভরসা করেছিলেন একটুই বেশিই। উত্তর ২৪ পরগনায় তাই সহজেই একের পর এক তৃণমূলী খুঁটি উপড়ে ফেলছেন মুকুল-অর্জুন। সে জন্যই বারবার এঁদের নিয়ে মেজাজ হারিয়ে মন্তব্য করছেন মমতা। নৈহাটি ও কাঁচরাপাড়ার দলীয় সভাতেও তোপ দেগেছিলেন এই দুই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। এবার শহরের নজরুল মঞ্চেও তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তব্য়ে পরোক্ষভাবে টার্গেট হয়ে উঠলেন তৃণমূলের এই দুই প্রাক্তনী।
২০২১ সালের বিধানসবা নির্বাচনের আগে রাজ্যের বেশ কিছু পুরসভার নির্বাচনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সেমি ফাইনাল। তাছাড়া, পুরভোটে তৃণমূলের ফলাফলই ঠিক করে দেবে গেরুয়া আগ্রাসনের মুখে কর্মীদের মনোবল আদৌ টিকে থাকবে কি না।