গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হিসাবে আব্রাহাম লিঙ্কনের অতি জনপ্রিয় 'অফ দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল'-এর উদ্ধৃতি প্রায়শই শোনা যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। কিন্তু, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের ময়দানে বিজেপি-র রাম রাজনীতির সঙ্গে যুঝতে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এবার 'মা দুর্গা'কে নিজেদের নেতা হিসাবে বেছে নিলেন।
জঙ্গলমহল সফররত মুখ্যমন্ত্রী সোমবার জামবনিতে সভা করেন। সেই সভাতেই বিজেপি-র রাম রাজনীতিকে তুলোধনা করেন মমতা। তিনি বলেন, একটা মন্দির বানানোর কথা বলে বিজেপি রাজনীতি করে। কিন্তু, রামচন্দ্র যাঁর পুজো করেছিলেন আমরা তাঁর (দুর্গার অকাল বোধনের আখ্যান) পুজো করি। এরপরই তিনি বলেন, "ওদের নেতা না কি জয় শ্রীরাম। তাহলে, আমাদের নেতা মা দুর্গা"। তবে বিজেপি রামের পুজোর নাম করে আদপে 'রাবন' ভজনা করে বলেও দাবি করেছেন মমতা। তৃণমূল সুপ্রিমোর ভাষায়, বিজেপির রাম পুজো আসলে 'লোক দেখানো, ভোট দেখানো এবং জনতার মধ্যে আগুন জ্বালানো'। তবে, বিজেপি যাই করুক, তৃণমূল কংগ্রেস যে সব ধর্মের সঙ্গেই রয়েছে, এদিন সেই বার্তাও স্পষ্ট করে দেন মমতা। কিন্তু সাধারণ মানুষকে বিজেপির বিভেদের রাজনীতির থেকে দূরে থাকতে বলেছেন মমতা। একাজে 'কন্যাশ্রী'দের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় ভাতা পাওয়া মেয়েদের লেখাপড়া ও ভবিষ্যতের দায়িত্ব সরকারের। শিক্ষার আলোয় আলোকিত এই নারী শক্তিকেই এদিন বিজেপি-র এই বিভাজনের রাজনীতির প্রতিরোধে এগিয়ে আসার জন্য ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কন্যাশ্রীদের এই কাজটা একেবারে পরিবারের অন্দর থেকে শুরু করতে হবে বলেও জানিয়েছেন মমতা।
এদিনের সভায় মমতা এক হাত নিয়েছেন সিপিএম-কেও। তাঁর দাবি, দীর্ঘ ৩৪ বছর চরম অত্যাচার করেছে সিপিএম। আর এখন সকালে লাল জামা পড়া সিপিএমকর্মীরা রাতে গেরুয়া জামা পড়ে কাজ করছে বলেও মমতার অভিযোগ। তাই, সিপিএম-এর থেকেও সাবধান থাকার বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ডিসেম্বর মাসেই রাজ্য জুড়ে রথযাত্রার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিজেপি। এদিকে, রাম মন্দির নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের যুব সমাজকে বার্তা দিতে বিশেষ পদক্ষেপ করছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এই ডিসেম্বরেই রাজ্যের অন্তত ২০টি এলাকায় 'হিন্দু সম্মেলন' আয়োজন করছে এই সংগঠন। উল্লেখ্য, রবিবার অর্থাৎ গতকাল থেকে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতৃত্বে শুরু হয়েছে ধর্মসভা। ফলে লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে গেরুয়া শিবির যে দেশ রাম রাজনীতিতে গতি এনেছে তা স্পষ্ট। এরমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের মন্তব্যকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ।