কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির কাছে পরাজিত হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনের মুখে তৃণমূল নেতা নিশীথ অধিকারী বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। আর তাতেই বাজিমাত করেছিল পদ্মশিবির। সেই পরাজয় নিয়ে সোমবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের মুখে শোনা গেল আপশোসের সুর। মমতার খেদ, "এখন যে কাজটা করছেন তা ছয় মাস আগে করলে বিজেপি এখানে জিততে পারত না। কোনওরকম গোষ্ঠীবাজি বরদাস্ত করা হবে না।" এদিন কোচবিহার পুরপ্রধানকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
উত্তরবঙ্গ সফরের প্রথম দিন সোমবার মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় কোচবিহারে দলীয় কর্মসূচিতে বক্তব্য় রাখছিলেন। মঞ্চ থেকেই দলনেত্রীর হুঁশিয়ারি, "তোমরা ঝগড়া করবে না। একটা কথা জেনে রাখো, তোমরা ভাষণ দেবে আর পার্টি বিষ গিলবে, সেটা হবে না।" দলের কর্মীদের এককাট্টা করতে তাঁর বক্তব্য়, "তৃণমূল কংগ্রেসে কোনও গোষ্ঠী নেই। এখানে নেতা বড় নয়। কর্মীরাই দলের সম্পদ। আমরা সবাই সমান। তৃণমূল কংগ্রেসের আদর্শ আছে, বাকিদের কারও সেটা নেই। কোচবিহারে গুন্ডামির কাছে হেরেছি আমরা। মা বোনেরা হাতে হাতা খুন্তি নিয়ে ওঁদের সামলে নেবেন।"
আরও পড়ুন- মোদীর মুখে বিজেপির সমালোচনা, গুণ গাইলেন অন্য দুই দলের
তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়নের কথা সাধারণ মানুষকে জানানোর নির্দেশও দেন মমতা। পাশাপাশি বিজেপি ব্য়াঙ্কিং ক্ষেত্রে যে সর্বনাশ করছে সে বিষয়েও অবগত করেন। দলের নেতা-কর্মীদের তিনি বলেন, "আমরা যে কাজগুলো করছি সেগুলো মানুষকে জানাতে হবে। বিজেপির কাছে প্রচুর টাকা আছে। এমনকী ব্যাঙ্ক থেকেও ওরা টাকা নিচ্ছে। আগামীদিনে মানুষ টাকা পাবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। খুব খারাপ ভবিষ্যত আসছে। ফলে জিনিষের দাম বেড়েছে, টাকার দাম কমেছে, মানুষের দাম কমেছে, জীবনের দাম কমেছে।"
আরও পড়ুন- ‘কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই কাটআউট রয়েছে, আমার তো নেই?’
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গে একটিও লোকসভা আসনে জয় পায়নি ঘাসফুল শিবির। কোচবিহার আসনে হার যে কিছুতেই মন থেকে মানতে পারেননি তা প্রতি পদে বুঝিয়ে দেন মমতা। বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, "ভোটের সময় অপপ্রচার, কুৎসা, পেশিবল, টাকার কাছে অনেকেই মাথা নত করেছে এখানে। আমার খারাপ লেগেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করেছে এখানে।" এদিন একগুচ্ছ জেলা কর্মসূচিও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- তৃণমূল অফিসে পড়ল ‘কার্তিক’, বিরোধীদের চক্রান্ত নয় তো?
পাশাপাশি পদ্মশিবিরকে এদিন কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী। এনআরসি থেকে ব্য়াঙ্কিং সেক্টর সহ নানা বিষয়ে সমালোচনা করেন গেরুয়া শিবিরের। বিজেপিকে এদিন "গেরুয়া কমরেড" বলে সম্বোধনও করেন মমতা। তাঁর বক্তব্য়, বাকি কী থাকল কমরেড? সিপিএমকে আগে কমরেড বলা হত। আর এখন হার্মাদগুলো বিজেপিতে ওস্তাদ হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে বিজেপিদের কমরেড নয়, কী কমরেড বলব! আগে বলতাম লাল কমরেড, তাহলে ওরা গেরুয়া কমরেড।
প্রসঙ্গত, এনআরসি নিয়ে রাজ্য় ব্য়াপী আন্দোলন ঘোষণা করেছিলেন দলনেত্রী। কোচবিহারের অনেকটা অংশই বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া। এদিন এনআরসি নিয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, "এটা সীমান্তবর্তী এলাকা। এনআরসি করে মানুষকে অধিকার দেবে না। ভেদাভেদ লাগিয়ে দিচ্ছে। আসামে দেখেছেন কী করেছে ওরা? নাগরিক পঞ্জি সংশোধনী বিল আনতে চাইছে বিজেপি। জেনে রাখবেন ওটা হল খুড়োর কল। ছ' বছরের জন্য বিদেশী বানিয়ে দেবে। এরপর ওরা যখন থাকবেন না, তখন আর ওরা কী করবেন? আমার রাজ্যে সবাই নাগরিক।"