লোকসভা নির্বাচনের মুখে সারদাকাণ্ডে নিয়ে ফের তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি। রবিবার কোচবিহারের সভা থেকে সারদা-নারদ কেলেঙ্কারি নিয়ে মমতাকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, সারদা মা গোটা দেশে পূজিত হন। কিন্তু বাংলায় সারদা বলতে সারদা কেলেঙ্কারির কথা সকলে জানেন। মোদীর সারদা খোঁচার পাল্টা জবাব হিসেবে মমতা বলেন, সারদাকাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্তকে নিয়েই ‘মিটিং’ করছেন প্রধানমন্ত্রী। নাম না নিলেও সারদাকাণ্ডের ‘অন্যতম অভিযুক্ত’ বলতে যে মুকুল রায়কেই বোঝাতে চেয়েছেন মমতা, তেমনটাই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। মমতার সেই তীক্ষ্ণ জবাবের প্রত্যুত্তর দিতে গিয়ে মমতার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন একদা তাঁরই সেনাপতি তথা বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়।
রবিবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মুকুল রায় বলেন, ‘‘কোচবিহারে অসাধারণ জনসমাগম দেখে মমতার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। হেরে যাবেন বুঝতে পেরে উল্টোপাল্টা কথা বলছেন।’’ এরপরই সারদাকাণ্ড নিয়ে মমতার অভিযোগের পাল্টা হিসেবে মুকুল বলেন, ‘‘ওঁর সৎসাহস নেই। তাই তিনি নাম উচ্চারণ করতে পারছেন না। নাম বললে তো আইনি লড়াই লড়া যায়। সারদার ঘটনায় সবথেকে বড় সুবিধাভোগীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার দৌলতেই আমি প্রথম ডেলোয় সুদীপ্ত সেনকে দেখি। তার আগে দেখিওনি, চিনতামও না। এরপর মমতার সৌজন্যেই কলকাতার নিজাম প্যালেসে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।’’
আরও পড়ুন: ‘সারদা-নারদের সবচেয়ে বড় দালাল’ মোদীর পাশে, আক্রমণ মমতার
এ প্রসঙ্গে মুকুলের হুঁশিয়ারি, ‘‘অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে বলছি, সারদার ঘটনায় যদি আমায় অভিযুক্ত করা হয়, প্রমাণ করুন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে, আমি আমার রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর নেব। সন্ন্যাস নেব। কিন্তু যিনি এই অভিযোগ করেছেন, তা যদি প্রমাণ না করতে পারেন, তাহলে কি তিনি রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর নেবেন?’’
সারদাকাণ্ডের প্রসঙ্গে টেনে মমতার দিকে চাঞ্চল্যকর প্রশ্ন ছুড়েছেন মুকুল। এদিন মুকুল বলেন, ‘‘সিট তদন্ত চালাচ্ছিল। সিটের প্রধান ছিলেন রাজীব কুমার। গোটা তদন্তের সবটা দেখাশোনা করতেন মমতা। সারদার ঘটনায় আমি যদি অভিযুক্ত হই, তাহলে সেসময় সিটের প্রধান কেন আমায় ডাকলেন না? সেসময় পুলিশমন্ত্রী মমতা, সিট তাঁর নিয়ন্ত্রণে, তাহলে কেন আমায় ডাকলেন না? অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে বলছি আমি কোনও অনৈতিক কাজ করিনি।’’
আরও পড়ুন: “বাংলায় রাজনৈতিক জমি হারাচ্ছেন দিদি”
এ প্রসঙ্গে মমতার বিরুদ্ধে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন মুকুল। একদা মমতা ঘনিষ্ঠ মুকুল বলেন, ‘‘মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য চ্যানেল, খবরের কাগজ করা হয়েছিল। এসব করে বাজে বিনিয়োগ করে সারদা উঠে গিয়েছে।’’
অন্যদিকে, নারদকাণ্ড নিয়েও এদিন মুখ খুলেছেন মুকুল রায়। নারদকাণ্ডের কথা টেনে মুকুল বলেন, ‘‘নারদ মামলা বিচারাধীন, তাই কিছু বলব না। তবে নারদায় হাত পেতে টাকা নিয়েছেন বলে আজ মন্ত্রীর সঙ্গে অতিরিক্ত পদমর্যাদা জুড়ে দেওয়া হয়েছে ফিরহাদ হাকিমকে। কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাহলে তিনি সত্যিই অভিযুক্ত? অপরূপা পোদ্দারকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাহলে তিনিও অভিযুক্ত? তাহলে মমতা কেন তাঁকে মনোনয়ন দিলেন?’’