ঠিক তিন বছর আগে জুলাই মাসের শেষে বাংলায় রাজ্যপালের পদে বসেছিলেন জগদীপ ধনকড়। শনিবারের সন্ধ্য়ায় এনডিএ-র তরফে উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হিসাবে বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের নাম ঘোষণা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। টানা তিনবছর রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘাতের আবহাওয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন ধনকড়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আদিবাসী প্রার্থী নিয়ে অনেকটাই ঢোক গিলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, উপরাষ্ট্রপতিপদে ধনকড়কে প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে বাংলা থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে পরিত্রাণ দিল? তবে বিগত কয়েকদিন বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে রাজ্যপালের কাছে তৃণমূলের দরবার করা, দার্জিলিংয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ধনকড়ের সাক্ষাৎ নিয়ে নানা জল্পনা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
২০১৯-এর ৩০ জুলাই রাজ্যপাল হওয়ার পর থেকেই জগদীপ ধনকড় সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘাত জড়িয়েছেন। বারে বারে তিনি বাকবিকতন্ডায় জড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিন বছরে শতাধিকবার রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ধনকড়। বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সংঘর্ষ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন রাজ্য সরকারকে। রিপোর্ট দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। কথায় কথায় তলব করেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের। এমনকী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের দ্বারা আটকে থাকা তৎকালীন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করতে নজিরবিহীন ভাবে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন ধনকড়। মোদ্দা কথা রাজ্যপাল ধনকড় তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে 'গোলাপের কাঁটা' হয়েছিলেন। রাজ্যপালকে সরানোর জন্য রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ পর্যন্ত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের মতে, আপাতত জগদীপ ধনকড় প্রার্থী হওয়ায় সেই অবস্থা থেকে স্বস্তি পেতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে বাংলায় নয়া রাজ্যপাল কে হবেন তা নিয়েও ইতিমধ্যে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- বড় চমক, NDA-র উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়
সম্প্রতি জগদীপ ধনকড়ের কাছে নানা ইস্যু নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের দরবার করেছেন। যে রাজ্যপালকে সরানোর তোড়জোর করেছে তৃণমূল কংগ্রেস, রাজভবনকে বিজেপির দলীয় কার্যলয় বলে আখ্যা দিয়েছেন, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে নালিশ করতে রাজভবনে গিয়েছেন। কেন হঠাৎ করেই তৃণমূল কৌশল বদল করেছিল, তা নিয়েও বিস্তর গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যাঁর বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ তাঁর কাছেই বিচার চাইতে যাওয়া এই কৌশলে বিভ্রান্ত হয়েছে রাজনৈতিক মহলও। শেষমেশ দার্জিলিংয়ে রাজ্যপাল ধনকড়, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়েও চর্চা বেড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস দায়িত্ব নিয়ে বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে একজোট করার উদ্যোগ নিয়েছিল। দলীয় নেতা যশবন্ত সিনহাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করেছে অবিজেপি জোট। তারপরই আবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের দ্রৌপদী মুর্মুর জয়ের ইঙ্গিত দেন। বিতর্ক বাড়ে রাজনৈতিক মহলে। এবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ধনকড়কেই প্রার্থী করে চমকে দিয়েছে এনডিএ। সেক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস কী ফের অবিজেপি দলগুলিকে নিয়ে জোট করে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে উদ্যোগ নেবে? তৃণমূল কংগ্রেস কী ভূমিকা নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল।