ইতিমধ্যে রাজ্যে চার পুরসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনের 'রিপিট টেলিকাস্ট' বলে দলের ভিতর থেকেই দাবি উঠছে। আগামির অশনি সংকেতের কথা বলছে যুব নেতৃত্ব। তৃণমূলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এদিকে 'এক ব্যক্তি এক পদ নীতি' নিয়েও তৃণমূল ঢোক গিলছে। যদিও তা নিয়ে দলের যুব ও মাদার সংগঠনের মধ্যে প্রকাশ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে রয়েছে আইপ্যাকের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের বিরাট জল্পনা। কিন্তু এখনও মুখ খোলেননি তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাও কী রাজনীতির নতুন কৌশল? না প্রকৃতই পুরনো ও নতুনদের মতবিরোধ? এই প্রশ্নই দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের প্রার্থী নির্বাচন থেকেই ঘটনার সূত্রপাত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তারপর ফিরহাদ হাকিম কলকাতার মেয়র হতেই দলের অভ্যন্তরে 'এক পদ এক নীতি' নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেদিন মেয়রের নাম ঘোষণার অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর রাজ্যের চার কর্পোরেশনের প্রার্থী ঘোষণা। পরবর্তীতে বাকি ১০৮ পুরসভার প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে মতানৈক্য প্রকাশ্যে আসে। পুরপ্রার্থী তালিকা নিয়েই বিস্তর বিভ্রান্তি, বিভ্রাট। এমনকী ঘনঘন প্রার্থী বদল করে তৃণমূল কংগ্রেস। গত কয়েক দিনের তৃণমূল নেতৃত্বের ঘটনাক্রম বিতর্ক আরও বাড়িয়েছে। শুক্রবার যুব নেতৃত্ব ও সিনিয়র নেতৃত্বের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধ চরমে ওঠে।
আরও পড়ুন- শনিবার কালীঘাটে তৃণমূলের বৈঠক ডাকলেন মমতা, শীর্ষ নেতাদের থাকতে নির্দেশ
রাজ্যে ২১৩টি আসনে জয় পেয়ে ক্ষমতা দখল করার পর তৃণমূলের নয়া সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নতুন দিশার কথা ঘোষণা করেছিলেন। প্রথম ঘোষণা ছিল 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি নিয়ে দল চলবে। পরে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ও ঘোষণা করেছিলেন দল শুধু তাঁর ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম করেছে। তারপর কখনও প্রকাশ্যে 'এক ব্যক্তি এক পদ নীতি'-র পরিবর্তনের কথা প্রকাশ্যে বলেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন ভাবে দলের সাংগঠনিক নির্বাচন হয়েছে। নয়া সভানেত্রী হওয়ার পরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নীতি নিয়ে নতুন কোনও ঘোষণা করেননি। শুক্রবার মমতার নির্দেশের কথা শুনিয়ে নতুন বিতর্ক শুর হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসে। এরইমধ্যে পুরনির্বাচনের কো-অর্ডিনেটর বদল হয়েছে। বদলের পর ফের বদল হয়েছে। এর আগে ডায়মন্ড মডেল ঘোষণা করেও অভিষেক জানান দিয়েছিলেন তিনি রাজ্যের অন্য সাংসদদের থেকে আলাদা। তা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। সমস্ত বিষয়টাই প্রকাশ্যে হওয়ায়, রাজনৈতিক মহলও নজর রাখছে পুরো দৃশ্যপটের ওপর।
এদিকে পিকের টিমের সঙ্গে বিবাদও প্রকাশ্যে এনেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের পর আইপ্যাক ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে নতুন ভাবে চুক্ত সম্পন্ন হয়েছিল বলে জানা গিয়েছিল। যেখানে পিকের সঙ্গে পুর্নাঙ্গ চুক্তি কী হয়েছে তা তৃণমূল কখনও প্রকাশ্যে আনেনি, সেখানে একটা মেসেজের তথ্য প্রকাশ্যে আসার মধ্যে রাজনৈতিক রণরকৌশল দেখছে রাজনৈতিক মহল। তার পাশাপাশি মমতা মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আইপ্যাকের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ করেছেন। আই প্যাক ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, একটা ক্রোণোলজি চলছে তৃণমূল কংগ্রেসে। যা সময়ের সঙ্গে স্পষ্ট হবে। একমসয়ের তৃণমূলের দাপুটে নেতা শুভেন্দু অধিকারী আই প্যাক নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিলেন। তৃণমূলের একটা বড় অংশ যেভাবে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার বিরোধিতা করছে তাতে মুচকি হাসছে রাজনৈতিক মহল। তাদের প্রশ্ন, তাহলে কী শুভেন্দুর তত্বকে শীলমোহর দেওয়া হচ্ছে। এদিকে যেভাবে দলের নয়া প্রজন্ম ও পুরনোরা এক পদ এক নীতি ইস্যিতে প্রকাশ্যে মতবিরোধে জড়িয়েছে, এর পিছনে কী রয়েছে তা নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক মহল। শুধুই কি মতবিরোধ, নাকি সত্যি অভিষেকের ঘোষণা মানতে চাইছে না আদি তৃণমূল নেতৃত্ব? এটাই এখন মূল প্রশ্ন। এই আবহেই আগামিকাল কালীঘাটে বৈঠকে বসতে চলেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।