Advertisment

পঞ্চায়েত ভোট: এবার মমতার লেখা নাটকের মাধ্যমে তৃণমূলের অভিনব প্রচার কৌশল

সরকারের উন্নয়নমুখী দিক তুলে ধরে নাটক লিখেছেন খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে শাসকদলের এহেন প্রচার কৌশল ইতিমধ্যেই বেশ নজর কেড়েছে গ্রামাঞ্চলে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
tmc, play

কলকাতায় নাটকের একটি দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হল। ছবি- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

রাভীক ভট্টাচার্য

Advertisment

এবার পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারপর্বে এক অভিনব উদ্যোগ নিল তৃণমূল কংগ্রেস। জনসভা, গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের পাশাপাশি এবার গ্রাম বাংলায় নাটক মঞ্চস্থ করে উন্নয়নের প্রচারে নামল শাসকদল। সরকারের উন্নয়নমুখী দিকগুলি জনগণের কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই এই নাটক লিখেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের উন্নয়নের বার্তা তুলে ধরার পাশাপাশি বিরোধীদের কড়া সমালোচনাও করেছে এই নাটক। পঞ্চায়েত ভোটের আগে শাসকদলের এহেন প্রচার কৌশল ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে গ্রামাঞ্চলে।

প্রচারের নির্ধারিত শেষ দিনটি অবধি রাজ্যের প্রায় একশটি ফোক ও ষ্ট্রিট থিয়েটার দল গ্রাম বাংলায় একশ'রও বেশি শো করবে ।

আরও পড়ুন, পঞ্চায়েত ভোট: হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ নির্বাচন কমিশন

শাসকদলের এহেন প্রচার কৌশলের গোটা পরিকল্পনাটি তত্বাবধানে রয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব তথা রাজ্যের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। জয়তু নাটকের নির্দেশক নাট্যকার অভীক চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ব্রাত্য বসু এক সপ্তাহ আগে স্ক্রিপ্টটি দেন আমাদের। কয়েকদিন রিহার্সালের পর আমরা একটি শো করি, যা ভিডিওতে ধরে রাখা হয়েছে।" এই সিডিটি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পথনাটিকা দল ও ফোক থিয়েটার দলকে বাছাই করে, তাঁদের ওই শোয়ের সিডি পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তৃতার চাইতে এ ধরনের নাটক অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে। বর্তমানে অশোকনগর নাট্যমুখ দলের সঙ্গে যুক্ত অভীক চক্রবর্তী আরও বলেন, "১৫ মিনিটের দীর্ঘ এই নাটকটি এই পঞ্চায়েত ভোটের একটি অভিনব প্রচার কৌশল বলে পরিগণিত হবে।"

এ প্রসঙ্গে ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও, তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন, পঞ্চায়েতঃ তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের অলিখিত জোট

জয়তু নাটকের মুল থিমই হল মমতা সরকারের উন্নয়নমুখী দিকগুলি তুলে ধরা। আটজন মুখ্য চরিত্র সমেত এই নাটকটিতে গান এবং কবিতার মাধ্যমে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, রূপশ্রীর মতো সরকারের জনমুখী প্রকল্প তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ২টাকা কেজি দরে চাল, স্কুল পড়ুয়াদের জন্য সাইকেল, রাজ্যে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথাও বলা হয়েছে নাটকে।

এছাড়াও এই নাটকের সংলাপের মাধ্যমে ছাত্র ভাতা, ইমাম ভাতা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু উন্নয়নের কথা ও তুলে ধরা হচ্ছে।

তবে উন্নয়ন বার্তার পাশাপাশি রয়েছে বিরোধীদের উদ্দেশ্যে তির্যক বার্তাও। প্রধানত, সিপিএম ও বিজেপি দুই মুখ্য দলকেই কার্যত একহাত নিয়েছে শাসকদল। বিজেপিকে ভারত জ্বালাও পার্টি ও মানুষ জ্বালাও পার্টি এবং সিপিএমকে লাল পার্টি বলে কটাক্ষ ও করেছে এই নাটক। নাটকের গানে স্থানীয় লোকসঙ্গীতের সুরের প্রভাব বজায় রাখতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় থিয়েটার দলগুলিকে।

আরও পড়ুন, পচা মাংসকাণ্ডের তদন্তে গঠিত হবে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি, নবান্নে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

এই নাটকের মুখ্য একজন চরিত্র মানুষকে ধর্মীয় ভিত্তিতে ভেঙে ফেলতে চায়ন। তাঁর উদ্দেশেই অন্য এক চরিত্রের করা তির্যক মন্তব্য "এই সেই দল যারা নোট বাতিল করে আমাদের বিপদে ফেলেছিল" শুনলে বিজেপির প্রতি খোঁচাটি স্পষ্ট বোঝা যায়। এসব ছাড়াও এই নাটকে উল্লেখ রয়েছে রাম নবমীর অস্ত্র মিছিলের উল্লেখ ও।

নাটকের ছেত্রী নামের এক চরিত্রের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্যোগের কথাও রয়েছে এই নাটকে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এ নাটক মঞ্চস্থ করার মূল দায়িত্বে থাকা কিশলয় নাট্য সংস্থার প্রধান সিদ্ধার্থ কিশোর রায় ভাণ্ডারি বলেন, ‘‘গত তিন দিনে আমরা ২৫টি জায়গায় এ নাটক মঞ্চস্থ করেছি। স্থানীয় মানুষের কথা ভেবে এ নাটকের মূল গানে ঝুমুর নৃত্যের সুর জুড়েছি।’’ তিনি আরও জানান যে, পথসভা ও জনসভায় নেতা-মন্ত্রীদের বক্তৃতার পাশাপাশি এ ধরনের শো করা হচ্ছে। ডেবরায় মঙ্গলবার রাত ১১টায় আয়োজিত একটি শোয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন যে, গ্রাম বাংলায় এ ধরনের শো যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে।

প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে এগারোটা এবং বিকেল পাঁচটা থেকে রাত এগারোটা অবধি টানা নাটক করে যাচ্ছে এই দলগুলি। প্রতিটি দলকে এজন্য শো পিছু দেড় হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

"প্রতিটি শো'তে আমরা অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি। দলনেতাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও আমাদের বিপুল উৎসাহ যোগাচ্ছে," বললেন ভাণ্ডারি।

অনুলিখন: সৌরদীপ সামন্ত

panchayat vote tmc Mamata Banerjee
Advertisment