তিনি তৃণমূল নেতা নন, তবে তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন। আদপে জেডিইউ নেতা। তবে, দুই দলেরই ভোট ভাগ্য সুনিশ্চিত করার গুরু দায়িত্ব তাঁরই কাঁধে। এমতাবস্থায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) ঘিরে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান এখন কার্যত প্রশ্নের মুখে। কারণ, ক্যাব ইস্যুতে যে দলে তিনি আছেন সেই দলের সুরে সুর না মিলিয়ে বরং যে দলের জন্য তিনি কাজ করছেন, তাদের মতো বিরোধীদের অবস্থানকেই সরব সমর্থন করেছেন তিনি। তিনি নির্বাচনী কৌশলী তথা সংযুক্ত জনতা দলের সদস্য প্রশান্ত কিশোর। সোমবারই লোকসভায় ক্যাব পাস হয়েছে। আর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে সমর্থন জানিয়েছে এনডিএ শরিক জেডিইউ। এর পরই জেডিইউ নেতৃত্বের সঙ্গে পিকের মতান্তর প্রকাশ্যে চলে এল।
আরও পড়ুন: বড় বিপাকে মুকুল রায়, খুনের মামলায় আগাম জামিনের আর্জি খারিজ হাইকোর্টে
ঠিক কী বলেছেন পিকে?
টুইটারে প্রশান্ত কিশোর লিখেছেন, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে সমর্থন করেছে জেডিইউ। এই সিদ্ধান্তে আমি হতাশ। যে বিল ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করবে, সেই বিলকে সমর্থন করল! এটা দলের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে বেমানান। যে দলের নেতৃত্ব গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত, সেই দল এই বিলকে সমর্থন করল!’’
আরও পড়ুন: ক্যাব তরজা: স্বামীজি ঠিক না শাহ? প্রশ্ন অভিষেকের
Disappointed to see JDU supporting #CAB that discriminates right of citizenship on the basis of religion.
It's incongruous with the party's constitution that carries the word secular thrice on the very first page and the leadership that is supposedly guided by Gandhian ideals.
— Prashant Kishor (@PrashantKishor) December 9, 2019
আরও পড়ুন: ‘সাবধান! মমতার পুলিশ ধর্ষণের মামলায় ফাঁসিয়ে এনকাউন্টার করবে’
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি ১৮টি আসন জেতার পর তৃণমূল পিকের শরণ নিয়েছে। তৃণমূলকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করার দায়িত্ব নিয়েই পেশাদার ঢঙে একাধিক পদক্ষেপ করেছে তাঁর সংস্থা 'আইপ্যাক'। রাজ্যের তিন বিধানসভা আসনে সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনের ফলেও ১০০ শতাংশ জয়যুক্ত হয়েছে তৃণমূল। আর এর পিছনে পিকে বাহিনীর মগজের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের অন্যতম কারণ হিসাবে এনআরসি ভীতিকে তুলে ধরা হচ্ছে। বিজেপি নাগাড়ে বলে যাচ্ছে বাংলা-সহ সারা দেশে এনআরসি করা হবে। এর ফলে একাংশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভীতি সঞ্চারিত হয়েছে। এমতাবস্থায় পোড় খাওয়া ভোট কৌশলী পিকে তাঁর 'মক্কেল' তথা তৃণমূল নেতৃত্বকে এই ইস্যুকেই পাখির চোখ করার পরামর্শ দেন। মনে করা হচ্ছে, একাধিক জনসংযোগকারী কর্মসূচির পাশাপাশি এই এনআরসি ইস্যুতে লাগাতার প্রচার করেই সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। এবার সেই এনআরসি-র প্রাথমিক ধাপ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক অভিমত স্পষ্ট করে পেশার উপরে নৈতিকতাকে স্থান দিলেন, পিকে এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। আবার অনেকে মনে করছেন, পিকের এই ট্যুইট হয়ত তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বার্তাবাহী।
প্রসঙ্গত, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের তীব্র বিরোধিতা করে প্রথম থেকেই সোচ্চার হয়েছে তৃণমূল। সোমবারও সংসদে এই বিলের বিরোধিতায় গর্জে উঠতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়দের। শুধু তৃণমূলই নয় সংসদের অধিকাংশ বিরোধী দলই এই বিলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। লোকসভায় যখন ক্যাব পেশ হচ্ছে তখনই খড়গপুরে উপনির্বাচনে ঘাসফুল ফোটার পর প্রথমবার জনসভায় গিয়ে মোদী সরকারকে এ ইস্যুতে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভয়বাণী, ‘‘ভয় পাবেন না। আমরা আছি। কোনও এনআরসি হবে না’’।