আর তিন মাস। তার পরেই জীবনের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার, নতুন বছরের প্রথম দিনে একেবারে কঠিন সব বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। তাতে রয়েছে রামমন্দির, রয়েছে উর্জিত প্যাটেলের পদত্যাগ, এমনকী রাম মন্দির এবং তিন তালাকের প্রসঙ্গও।
রাম মন্দির নিয়ে নরেন্দ্র মোদী
বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী এবং আরএসএস রাম মন্দির নিয়ে নিয়ে যে শোরগোল তুলেছে, তা নিয়ে এতদিন চুপই ছিলেন মোদী। এ বিষয়ে তাঁর প্রথম মন্তব্য শোনা গেল মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে রায় দিলে, একমাত্র তারপরেই রাম মন্দির বিষয়ক অর্ডিন্যান্সের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। শীর্ষ আদালতে কংগ্রেসের আইনজীবীদের তৈরি করা বিরোধিতার কারণেই বিচারপদ্ধতির গতি শ্লথ হয়ে গেছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
“আইনি প্রক্রিয়া শেষ হতে দিন। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে আমাদের সরকারের তরফে যা যা দায়িত্ব তা আমরা সম্পন্ন করার সর্বতো রকম চেষ্টা করব। সংবাদসংস্থা এএনআই-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলা উঠবে শুক্রবার। ওইদিন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলা শোনার জন্য নতুন তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ স্থাপন করবে।“
কংগ্রেসকে এ ব্যাপারে আর সমস্যা না তৈরি করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক ভাবে এ বিষয়টি ওজন করবেন না। কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে গত ৭০ বছর ধরে যারা সরকারে আসীন ছিল তারা (অযোধ্যা) ইস্যুটিকে জিইয়ে রেখেছে।“
আরও পড়ুন, প্রধানমন্ত্রীর সম্মানহানির ভয়ে কালো রঙে নিষেধাজ্ঞা
উর্জিত প্যাটেল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী
উর্জিত প্যাটেল ৬-৭ মাস আগেই তাঁকে পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলেন বলে এদিন সাক্ষাতকারে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক চাপ ছিল বলে যে গুজব রটেছে তা উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উনি নিজেই ব্যক্তিগত কারণে (পদত্যাগের) অনুরোধ করেছিলেন। আমি এই প্রথমবার এ কথা বলছি। পদত্যাগের ছ-তাস মাস আগেই উনি আমার কাছে এ বিষয়ে জানিয়েছিলেন। এমনকী উনি লিখিত আকারেও তা জানিয়েছিলেন। রাজনৈতিক চাপের কোনও প্রশ্নই নেই। উনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে ভাল কাজ করেছেন।“
নোটবন্দি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী
মোদী সরকারের সময়কালে সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরের ঘোষিত ৫০০ ও ১০০০ টাকা নিষিদ্ধ করার ঘোষণা। এদিনের সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন নোটবন্দির সিদ্ধান্ত কোনও ঝটকা ছিল না। কালো টাকা নিয়ে আগেই জনতাকে সাবধান করা হয়েছিল।
“এটা কোনও ঝটকা ছিল না। আমরা এক বছর আগেই জনতাকে সাবধান করে দিয়ে বলেছিলাম যদি আপনাদের এরকম কোনও সম্পত্তি (কালো টাকা) থাকে, তাহলে সেগুলো জমা করুন, জরিমানা দিন, আপনাদের সাহায্য করা হবে। তবে ওঁরা ভেবেছিলেন, মোদীও অন্যদেরই মত, তাই খুব কম লোকজনই স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিলেন।“
প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন যে নোটবন্দির কারণেই বিজয় মালিয়া এবং নীরব মোদীরা পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এরা কেন পালিয়েছে, নোট বন্দির জন্যে। যারা এ সরকারের সময়ে পালিয়ে গেছে, তাদের সরকার ফেরত আনবেই, আজ হোক কিংবা কাল। যারা এ দেশের টাকা চুরি করে পালিয়েছে তাদের প্রতিটি পয়সার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
তবে ৯৯ শতাংশ কালো টাকাই আবার বাজারে ফিরে গেছে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রিপোর্ট দেওয়ায় বিরোধীরা এই ইস্যুতে সরকারকে কোণঠাসা করার অস্ত্র পেয়ে গেছে নিঃসন্দেহেই।
আরও পড়ুন, ইয়েস স্যার নয়, জয় হিন্দ বা জয় ভারত!
পাকিস্তান এবং সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
মিশন সফল বা ব্যর্থ যাই হোক না কেন, সূর্য ওঠার আগে ফিরে আসবেন। ২০১৬-র উরি হামলার পর নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জঙ্গি শিবিরে হানা দিতে যাওয়ার আগে কম্যান্ডোদের এ কথাই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই অপারেশন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান আক্রমণের দিন দু দুবার বদলানো হয়েছিল বাহিনীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে।
সীমান্ত সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মোদী বলেছেন পাকিস্তানকে শোধরাতে আরও সময় লাগবে। তিনি বলেন, “একট যুদ্ধেই পাকিস্তান বদলে যাবে, এ কথা ভাবলে খুবই ভুল হবে। পাকিস্তানকে শোধরাতে এখনও সময় লাগবে।“
আরও পড়ুন, ইশরাত জাহান সংঘর্ষ মামলায় জামিনপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের পদোন্নতি
রাফাল চুক্তি নিয়ে মোদী
রাফাল চুক্তি নিয়েও এদিন মুখ খুলেছেন মোদী। তাঁর বিরুদ্ধে ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের অভিযোগ যারা আনছে, তারা আসলে নিরাপত্তা বাহিনীকেই দুর্বল করতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন মোদী।
“যারা সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে চায়, তারাই অভিযোগ আনছে। আমি ঠিক করেছি আমার বিরুদ্ধে যত কুৎসাই করা হোক না কেন, আমি সততা এবং দেশের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পথেই হাঁটব। আমি আমার সেনা জওয়ানদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেব না। যাই প্রয়োজন হবে, তাই আমি সংগ্রহ করব। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও আমি এ কাজ করবই।“
আরও পড়ুন, নবজাগরণের মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরতে কেরালায় ৬২০ কিমির মানবী প্রাচীর
তিন তালাক ও শবরীমালা প্রসঙ্গে
তিন তালাক ও শবরীমালা ইস্যুর সঙ্গে তুলনা টানতে অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি লিঙ্গসাম্যের প্রশ্ন এবং অন্যটি ঐতিহ্যের প্রশ্ন। তিনি বলেন, প্রায় সমস্ত মুসলিম দেশই তিন তালাক নিষিদ্ধ করেছে। ফলে এটা কোনও ধর্ম বা বিশ্বাসের প্রশ্ন নয়। এমনকী পাকিস্তানেও তিন তালাক নিষিদ্ধ। ফলে এটি লিঙ্গসাম্যের প্রশ্ন, একটি সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্ন। এ কোনও বিশ্বাসের প্রশ্ন নয়।
শবরীমালা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বেশ কিছু মন্দির রয়েছে, যেখানে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য অনুসারে পুরুষদের প্রবেশাধিকার নেই। এক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের এক মহিলা বিচারপতির নির্দিষ্ট কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলকে জড়ানোর প্রয়োজন নেই। এ নিয়ে বিতর্ক হওয়া উচিত।“
লোকসভা ভোট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী
এ ভোট হবে জনতা বনাম জোটের। গোবলয়ের তিন রাজ্য ছত্তিসগড়, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-র হার এং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাজোটের উজ্জ্বল সম্ভাবনার মুখে দাঁড়িয়ে মোদী নিজের মুখে বলেছেন, “মোদী হল জনতার ভালবাসা এবং আশীর্বাদের এক উদ্ভাস।“
Read the Full Story in English