মূলত সিঙ্গুর আন্দোলনকে সাঙ্গ করেই সাড়ে তিন দশকের বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস। আন্দোলনের জেরে পাততাড়ি গোটাতে হয় টাটার মতো দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প সংস্থার ন্যানো কারখানাকে। কিন্তু রাজ্যপাট হাতছাড়া হলেও সিঙ্গুর ইস্যুতে সিপিএম কখনও নিজেদের অবস্থান এক ইঞ্চিও বদলায়নি। আজ অর্থাৎ ১২ সেপ্টেম্বর, সেই সিঙ্গুর থেকেই শিল্পায়নের দাবিতে পদযাত্রা করতে চলেছেন বাম ছাত্র-যুবরা। সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক জমি ফিরে পেতে চায় বামফ্রন্ট।
সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানা এখন অতীত। সেই কারখানা ডিনামাইট দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ন্যানো কারখানার জমিতে চাষাবাদও নৈব নৈব চ। কলকারখানা ও কাজের দাবিতে সেই সিঙ্গুর থেকেই নবান্ন অভিযান করছে বামেদের ১২টি ছাত্র-যুব সংগঠন। রয়েছে ছাত্রদের একগুচ্ছ দাবিও। আজ, বৃহস্পতিবার, মিছিল শুরু হবে সিঙ্গুর থেকে। ডানকুনিতে রাত্রিযাপন। শুক্রবার হাওড়া স্টেশন থেকে নবান্ন অভিযান।
আরও পড়ুন: ‘মমতা গ্রেফতার হবেন ৮ কোটি টাকা চুরির দায়ে’
এর আগে শিল্প ও কৃষি ক্ষেত্রের নানা দাবি নিয়ে সারা ভারত কৃষক সভা সিঙ্গুর থেকে রাজভবন অভিযান করেছিল। গত বছর ২৮ নভেম্বর রাজ্যে শিল্পায়নের দাবিতে সিঙ্গুর থেকে কলকাতা পর্যন্ত পদযাত্রা করেছিল সিপিএম-এর কৃষক সংগঠন। পদযাত্রার শেষে ২৯ নভেম্বর কলকাতার রানি রাসমণি রোডে সভা হয়েছিল। কৃষকসভার দাবি ছিল, সিঙ্গুর-সহ রাজ্যের সর্বত্র শিল্পের জন্য অধিগৃহীত জমিতে অবিলম্বে শিল্প স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। বৃহস্পতিবারও বাম ছাত্র-যুবরা সেই দাবিই জানাবেন পদযাত্রায়। সেদিন রাজভবন অভিযানের যাত্রাপথ বেঁধে দিয়েছিল সিঙ্গুর। এবারও ছাত্র-যুবরা নবান্ন অভিযানে সেই সিঙ্গুরকেই বেছে নিয়েছেন। রাজ্য এসএফআই-এর দাবি, “২০ হাজার ছাত্র-যুব বৃহস্পতিবারের মিছিলে অংশ নেবেন।’’
আরও পড়ুন: বিজেপির মিছিল ঘিরে তুলকালাম, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে ‘মাথা ফাটল’ গেরুয়া কর্মীদের
সিঙ্গুরে টাটা মোটর্সের ন্যানো কারখানার কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্বপ্নের প্রকল্প ছিল সিঙ্গুরের গাড়ি তৈরির কারখানা। কিন্তু জমি আন্দোলন করে কারখানা নির্মাণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস। 'চার ফসলা' জমিতে কেন শিল্প-কারখানা হবে, এই ইস্যুতে 'অনিচ্ছুক' কৃষকদের 'স্বার্থে' আন্দোলন করেছিল ঘাসফুল শিবির।
পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জমি ফিরিয়ে দেওয়া হলেও সমস্ত জমি চাষযোগ্য হয়ে ওঠেনি। এখন খুব সামান্য জমিতেই চাষাবাদ হয়। বামপন্থীরা এখন তাই সিঙ্গুর ইস্যুকেই ফের আন্দোলনের অভিমুখ করতে চাইছেন। তাঁদের বক্তব্য, “ওই জমিতে না হলো শিল্প, না হলো কৃষি। এর দায় তৃণমূল কংগ্রেসেরই।’’ তাই কৃষকসভার মতো রাজ্যের মানুষকেও সিঙ্গুরের কথা মনে করিয়ে দিতেই সেখানে থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত করছে ১২টি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন।
আরও পড়ুন: বিধানসভায় দেবশ্রী রায়, শেষ পর্যন্ত কি তৃণমূলেই?
ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সভাপতি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, “সিঙ্গুর মানে শুধু সিঙ্গুর নয়। রাজ্যে পরপর শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করে। ৯০ শতাংশ নির্মিত কারখানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কারখানা গড়ার স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে তৃণমূল। সিঙ্গুরে বেকারদের কাজ ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। আবার নতুন করে কাজ ফিরিয়ে দেওয়ার নাম হবে সিঙ্গুর।’’
প্রথম তৃণমূল সরকারের আমলে বামেদের নবান্ন অভিযানে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, “পড়াশোনার খরচ কমানো, ছাত্র ভর্তিতে তোলাবজির টাকা ফিরিয়ে দেওয়া, কলেজ ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র ফেরানো-সহ নানা দাবিতে ছাত্ররা মিছিলে অংশ নেবে। রাজ্যের যুবদের চাই কলকারখানা, চাকরি। তা না হলে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে বেকার ভাতা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।’’ তিনি জানান, নবান্ন অভিযানের প্রথম দিন সিঙ্গুর থেকে ডানকুনি যাওয়া হবে। এরপর সেখানেই রাত্রিযাপন। পরের দিন ডানকুনি থেকে হাওড়া স্টেশন হয়ে নবান্ন যাওয়া হবে।