জল্পনাই সত্য়ি হল। প্রায় আড়াই দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করে তৃণমূল ছেড়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী (suvendu adhikari)। মন্ত্রী, বিধায়ক পদে ইস্তফার পর তৃণমূলের সমস্ত দল থেকে পদত্য়াগ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে চিঠি লিখে ইস্তফা দিলেন শুভেন্দু। পদত্য়াগপত্রে বুধবারের তারিখ উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
সম্ভবত শনিবারই অমিত শাহের উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। সংবাদসংস্থা এএনআই-কে আসানসোলের পুর প্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানিয়েছেন, ‘‘শুভেন্দু আমাকে বলেছেন, উনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন’’। একুশের মহারণের মুখে শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল ত্য়াগ নিঃসন্দেহে মমতা শিবিরের কাছে ‘বিরাট ধাক্কা’ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
শুভেন্দুর তৃণমূল ত্য়াগ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতারা বলছিলেন, শুভেন্দু তো মন্ত্রীত্ব ছেড়েছেন, কিন্তু দল তো ছাড়েননি। এবার তো দলও ছাড়লেন, কী বলবেন। যদি বাড়িতে কেউ না থাকতে চান, তাঁকে জোর করে ধরে রাখা যায়! যে মুক্তি চাইছেন, উনি রাস্তা খুলে দিয়েছেন, যাঁরা তৃণমূল ছাড়তে চান, তাঁদের জন্য়। শুভেন্দু বিজেপিতে এলে সোনায় সোহাগা হবে’’। অন্য়দিকে, এদিন এসবিএসটিসি-র চেয়ারম্য়ান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী।
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর ইস্তফার পর এবার নজরে তৃণমূলের ৫৫ বিধায়ক-৮ সাংসদ
রাজনীতির ময়দানে শুভেন্দু:
বাবার মতোই রাজনীতিতে পা রাখেন রাজ্য়ের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। কংগ্রেসের হাত ধরেই রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে শুভেন্দুর। প্রথম থেকেই শুভেন্দুর সাংগঠনিক দক্ষতা নজর কেড়েছিল। কাঁথির প্রভাত কুমার কলেজে ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। বাবার সঙ্গেই সমবায় আন্দোলনে শামিল হন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে কাঁথি পুরসভার কাউন্সিলর হয়েছিলেন শিশির-পুত্র।
১৯৯৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে নীতীশ সেনগুপ্তের প্রচারের গুরুদায়িত্ব সামলেছিলেন শুভেন্দুই। ২০০১ সালে তৎকালীন মুগবেড়িয়া কেন্দ্রে বিধানসভা নির্বাচনে লড়ে কিরন্ময় নন্দীর কাছে হেরে যান।
আরও পড়ুন: শুভেন্দু-তৃণমূল মতান্তর কেন?
২০০৪ সালে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে লড়েন। কিন্তু সেবার দোর্দণ্ডপ্রতাপ বাম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের কাছে হেরে যান। এরপর সাফল্য় আসে ২০০৬ সালে। বাবার কেন্দ্র কাঁথি দক্ষিণ থেকে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে বিধানসভায় পা রাখেন শুভেন্দু। ৩ বছর পর ২০০৯ সালে ফের তমলুকে লোকসভা নির্বাচনে লড়ে ২০০৪ সালের হারের বদলা নেন শুভেন্দু। সেবারও শুভেন্দুর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। ২০১৪ সালেও ওই কেন্দ্রে জয় ধরে রাখেন শুভেন্দু।
২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হন। মমতা মন্ত্রিসভায় পরিবহণ দফতরের ভার কাঁধে তুলে নেন শুভেন্দু।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আশঙ্কা, হস্তক্ষেপ চেয়ে রাজ্যপালকে চিঠি শুভেন্দুর
তৃণমূল নেতাদের একাংশ বলছেন, যদি শুভেন্দু ও তাঁর পরিবার বিজেপিতে যোগ দেন, তাহলে শুধুমাত্র ১১০টি আসনেই তার প্রভাব পড়বে না, বরং ২৯৪টি আসনেই প্রভাব পড়তে পারে। দলের একটা বড় অংশ ‘দিদি’-কে ছেড়ে ‘দাদা’র হাত ধরতে পারে। যদিও দলের আরেক অংশের দাবি, সাংগঠনিক স্তরে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ক্য়ারিশমাকে ছুঁতে পারবেন না শুভেন্দু।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন