তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ঘরে-বাইরে জোর চর্চা চলছে। নাম না করলেও দলের নেতৃত্বকে বার্তা দিতে কখনও তিনি আক্রমাণাত্মক, আবার কখনও তাঁকে নিশানা করছেন তৃণমূল নেতারা। এরই মধ্যে গেরুয়া নেতৃত্ব পদ্ম শিবিরে স্বাগত জানিয়ে রেখেছেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে। তবে কী দল ছাড়ছেন শুভেন্দু? নাকি দলে থেকেই দর বাড়ানোর চেষ্টা? আপাতত তুঙ্গে জল্পনা। এই পরিস্থিতিতেই জোড়া-ফুল শিবিরের একাংশ মনে করছেন, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপেই একমাত্র সমস্যা মিটতে পারে।
শুভেন্দু অধিকারীর মান ভঞ্জনে ইতিমধ্যেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। জানা গিয়েছে, দলের মেজ-সেজ নেতাদের সংগঠনের কাজে হস্তক্ষেপেই ক্ষুব্ধ রাজ্যের শাসক শিবিরের এই দোর্দদণ্ডপ্রতাপ নেতা। শুভেন্দু নাকি তাঁর ক্ষোভের কথা সৌগত রায়ের কাছে খুলে বলেছেন। সূত্রের খবর, আগামিকাল, সোমবার ফের সৌগত-শুভেন্দুর একপ্রস্থ বৈঠক হতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর মুখোমুখি কথা বলানোও চেষ্টা করছেন সৌগত রায়।
আরও পড়ুন- ‘শুভেন্দু বিজেপিতেই-তৃণমূল ছাড়ছেন সৌগত সহ ৫ সাংসদ’, বিস্ফোরক অর্জুন সিং
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল শীর্ষ নেতার কথায়, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শুভেন্দুর কোনও ক্ষোভ নেই। দলের কিছু নেতার কাজে অসন্তুষ্ট তিনি। দিদি একবার ওর সঙ্গে ভালভাবে কথা বললেই শুভেন্দু আর দল ছাড়বেন না।' এরপরই শুভেন্দু অধিকারীকে দলের 'সম্পদ' বলে জানান তৃণমূলের ওই শীর্ষ নেতা। বলেছেন, 'শুভেন্দু আমাদের দলের সম্পদ। আমরা ওকে যেতে দিতে পারি না। ওর প্রচুর জনসমর্থন। বিধানসভা ভোটের আগে ও দল ছাড়লে তৃণমূল প্রবল সমস্যায় পড়বে।'
উল্লেখ্য, রামনগরের সভায় গত বৃহস্পতিবারই পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, 'আমি এখনও একটা দলের সদস্য। এখনও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী আমি। আমাকে মুখ্যমন্ত্রী তাড়াননি, আমিও এখনও দল ছাড়িনি। রাজনীতির জন্য আদর্শকে বিসর্জন দিতে পারব না।' দলনেত্রী ও তৃণমূলের প্রতি গভীর আস্থা থেকেই শুভেন্দুর এই মন্তব্য বলে মনে করছে জোড়া-ফুল শিবির। আর তাতেই বরফ গলার ইঙ্গিত মিলছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- একের পর এক তোপ, তবুও শুভেন্দু প্রসঙ্গে নরম তৃণমূল
গত কয়েক মাস ধরেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সৈনিক শুভেন্দু অধিকারীর। 'দাদার অনুগামী' পোস্টারে ছয়লাম একাধিক জেলা। সেখানে তৃণূলের প্রতীক বা দলনেত্রীর নাম নেই। একের পর এক অরাজনৈতিক সভাতেও মমতার নাম মুখে নেননি রাজ্যের এই মন্ত্রী। তারই মধ্যে ১০ই নভেম্বর নন্দীগ্রামে দাঁড়ি দলীয় নেতৃত্বকে নাম না করেই নিশানা করেছিলেন শুভেন্দু। তীক্ততা স্পষ্ট হয় যখন নন্দীগ্রামে একই দিনে সভা করে শুভেন্দু অধিকারীকে পাল্টা আক্রমণ করেন ফিরহাদ হাকিম, পূর্ণন্দু বসু, দোলা সেনরা। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে সেই তিক্ততা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। পরে হুগলির বলাগড়ে দাঁড়িয়েই নাম না করে কল্যাণের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির চেষ্টা করেন শুভেন্দু অধিকারী।
শাসকের অন্দরের ফাটল চাওড়া। শুভেন্দুকে দলে নিতে আগ্রহী পদ্ম শিবির। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আগেই তা জানিয়েছেন। সেই তালিকায় নাম তুলেছেন অর্জুন সিংও। শনিবারই তিনি বলেছেন, 'বিজেপিতেই আসছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।উনি যেদিন বিজেপিতে যোগ দেবেন সেদিই সরকার ভেঙে যাবে।' ফলে শুভেন্দুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত। এই অবস্থায় তাঁকে দলে রাখতে নেত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জোড়াল হচ্ছে তৃণমূলে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন