বিজেপিতে পদত্যাগের ছায়া এবার খোদ কলকাতায়। দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতির ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে পদত্যাগ করেছেন জেলা সম্পাদক তমসা চট্টোপাধ্যায়। এর আগে একাধিক রাজ্য ও অন্যান্য জেলা পদিধিকারী দলের পদ ছেড়েছেন। এমনকী দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও রাজ্য কমিটির কার্যকলাপ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
দক্ষিণ কলকাতা বিজেপির সম্পাদক তমসা চট্টোপাধ্যায় পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন জেলা সভাপতি সংঘমিত্রা চৌধুরীকে। একইসঙ্গে প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক(সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে। একের পর এক পদাধিকারী পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়ায় তোলপাড় গেরুয়া শিবির। এরইমধ্যে আগামী ৪ মে কলকাতায় আসার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী তথা দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। জেপি নাড্ডা দলের সভাপতি হলেও বাংলার সংগঠনের খোলনলচে সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত অমিত শাহ।
তমসা চট্টোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'আমি জেলার সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছি কিন্তু রাজ্য বিজেপির মিডিয়া প্যানেলিস্ট থেকে পদত্যাগ করিনি। এটা দলের অভ্যন্তরের বিষয়। এটা নিয়ে দলের বাইরে আমি কিছু বলব না। আমার যা বলার দলেই বলব।' গত কর্পোরেশন নির্বাচনে তমসা কলকাতার ৮৪ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী ছিলেন। এদিকে সংঘমিত্রা চৌধুরী বলেন, 'ওকে কেউ হয়তো বুঝিয়েছে। কি হয়েছে, কে জানে। আমরা একটা পরিবারের মতো। পরিবার থেকে বেরিয়ে যাওয়া দুঃখ জনক। ওকে আমি খুব স্নেহ করি।'
সূত্রের খবর, পদত্যাগপত্রে এক জায়গায় তমশা লিখেছেন, 'এই জেলা গঠিত হওয়ার পর থেকে কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে দক্ষিণ কলকাতা জেলা সেইভাবে পথে নামেনি, নামতে চায়নি এবং বলাবাহুল্য যাঁরা নামতে চেয়েছিল তাঁদের আন্দোলনে পথে নামতে দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর বাসস্থান দক্ষিণ কলকাতায়। জেলা বিজেপির আন্দোলনে অনীহা তৃণমূলকে প্রকাশ্যে অক্সিজেন জুগিয়ে চলেছে। এতে যেমন হতাশ হচ্ছে নীচু তলার কর্মীরা তেমনি আঙ্গুল উঠছে জেলা কমিটির বিশ্বাসযোগ্যতায়। এজেন্ডাবিহীন বৈঠক নিয়েও সরব হয়েছেন এই নেত্রী। যদিও সংঘমিত্রা চৌধুরী জানিয়েছেন, 'আমরা নিয়মিত পথে নামছি। গতকালও হরিদেবপুরের ঘটনা নিয়ে মিছিল করেছি। থানা ঘেরাও করে স্মারকলিপি দিয়েছি।'
আরও পড়ুন- প্রয়াগরাজ রওনা তৃণমূলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের
রাজ্য বিজেপির একটা বড় অংশ সংগঠনের কার্যকলাপ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ, সম্পাদক অনুপম হাজরা, সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কার্যকলাপ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। আদি বিজেপি ও দলের লড়াকু অংশরা যাতে দল ছেড়ে না বেরিয়ে যায় তার জন্য পদক্ষেপ করতে বলেছেন দিলীপ ঘোষ ও অনুপম হাজরা।
অন্যদিকে, জেলাগুলিতে ভাঙন-অস্বস্তি তীব্র হচ্ছে বিজেপিতে। চলতি মাসেই মুর্শিদাবাদ জেলা বিজেপি সভাপতির কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্য কমিটির সম্পাদক পদ ছেড়েছিলেন মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ। পদ ছেড়েছেন বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র-সহ তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা।
এবার ফের এক দফায় ভাঙন সেই মুর্শিদাবাদেই। মুর্শিদাবাদ জেলা বিজেপি (দক্ষিণ) সভাপতি শাখারভ সরকারের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে রবিবার দলীয় পদ ছাড়লেন লালবাগের দুই বিজেপি নেতা। ইস্তফা মুর্শিদাবাদ জেলা (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ হালদার এবং মুর্শিদাবাদ দক্ষিণ জেলা কর্মসমিতির সদস্য তড়িৎকান্তি সরকারের।
দলের নেতাদের একাংশের সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁ-ও। অমিত শাহ বাংলায় আসার আগে গেরুয়া শিবিরে এই পদত্যাগ পর্ব চলতেই থাকে কিনা সেটাই দেখার। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য সংগঠনের বিষয়ে কোনও নতুন সিদ্ধান্ত নেয় কিনা সেই অপেক্ষায় রয়েছে বঙ্গ বিজেপির একাংশ।