Advertisment

বিজেপিতে যোগ দিতে চান অনুব্রত মণ্ডল! চাঞ্চল্যকর দাবি বিজেপি সাংসদের

‘‘ইচ্ছাপ্রকাশ তো উনি (অনুব্রত) আগেই করেছিলেন। যেহেতু বিজেপিতে যোগদানের ঢল নেমেছে, তাই এখন আমরা চিন্তাভাবনা করে লোকজনকে দলে নিচ্ছি’’।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Anubrata Mondal, অনুব্রত মণ্ডল, Anubrata Mondal news, অনুব্রত মণ্ডলের খবর, Anubrata Mondal bjp, বিজেপিতে অনুব্রত মণ্ডল? অনুব্রত মণ্ডল বিজেপিতে আসতে চান, tmc leader Anubrata Mondal, তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল, বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি, soumitra khan, সৌমিত্র খাঁ, anupam hazra, অনুপম হাজরা, mamata, মমতা, মুকুল mukul

অনুব্রত মণ্ডল কি বিজেপিতে?

অনুব্রত মণ্ডল বিজেপিতে যোগ দিতে চান, একদা তৃণমূল সাংসদ তথা বর্তমানে লোকসভার বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র মন্তব্যে এমন জল্পনাই ছড়াল বঙ্গ রাজনীতিতে। দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত, এমন চাঞ্চল্যকর দাবিই করেছেন সৌমিত্র খাঁ। এই দাবি ঘিরে তোলপাড় তৃণমূল। তবে, ‘কাকু’ অনুব্রতকে দলে (বিজেপি) না নিলেই ভাল হবে বলে মনে করছেন বোলপুরের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা বর্তমান বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা। যদিও, গত লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন অনুব্রতর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা ছড়িয়েছিল তাঁরই ‘ভাইপো’ তথা বিজেপি নেতা অনুপম হাজরার মন্তব্যেই। সদ্য মাতৃহারা অনুব্রতর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বোলপুরের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তখন দাবি করেছিলেন, কানে কানে তাঁকে বিজেপিতে আসার ‘ইচ্ছাপ্রকাশ’ করেছেন বীরভূমের ডাকাবুকো তৃণমূল নেতা অনুব্রত। সৌমিত্র খাঁ-র এ দাবি প্রসঙ্গে এদিনও অনুব্রতর বিজেপিতে আসার সেই ‘ইচ্ছাপ্রকাশে’র কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন অনুপম হাজরা।

Advertisment

ঠিক কী বলেছেন সৌমিত্র খাঁ?

বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, ‘‘১০৪ জন বিধায়ক দলে (বিজেপি) যোগ দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। আমার কাছে খবর রয়েছে, অনুব্রত মণ্ডল বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। ওঁর কেউ কাছের মানুষ দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন’’। যদিও সৌমিত্রের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অনুব্রত মণ্ডলের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি। তাঁর সঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র তরফে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু, তিনি টেলিফোন ধরেননি এবং মেসেজেরও উত্তর দেননি। এ বিষয়ে অনুব্রতর প্রতিক্রিয়া জানা গেলে তা এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে।

soumitra khan, সৌমিত্র খাঁ সৌমিত্র খাঁ। ছবি: ফেসবুক।

আরও পড়ুন: ‘মমতা গ্রেফতার হবেন ৮ কোটি টাকা চুরির দায়ে’

অনুব্রত মণ্ডলের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা অনুপম এদিন ফের উল্লেখ করলেও তাঁকে বিজেপির গ্রহণ না করাই ভাল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। অনুপম বলেন, ‘‘ইচ্ছাপ্রকাশ তো উনি আগেই করেছিলেন। যেহেতু বিজেপিতে যোগদানের ঢল নেমেছে, তাই এখন আমরা চিন্তাভাবনা করে লোকজনকে দলে নিচ্ছি। মনিরুল ইসলামকে দলে নেওয়ায় একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তাই যেসব নেতার ভাবমূর্তি খুব একটা স্বচ্ছ নয়, তাঁদের দলে নেওয়ার আগে এখন চিন্তাভাবনা করতে হবে। আগের মতো সবারে করি আহ্বানের নীতি নেই এখন। দল বড় হচ্ছে, সংগঠন জোরদার হচ্ছে। তবে এটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করছে’’। উল্লেখ্য,অনুব্রতর সুপারিশেই অনুপম একদা তৃণমূলের টিকিট পেলেও অচিরেই 'কাকা-ভাইপো'র সম্পর্কে ফাটল ধরে। কার্যত, অনুব্রতর সঙ্গে বিবাদের জেরেই তৃণমূলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন অধ্যাপক অনুপম হাজরা এবং শেষ পর্যন্ত দল থেকে সাসপেন্ড হয়েছিলেন।

anubrata mondal, anupam hazra, অনুব্রত মণ্ডল, অনুপম হাজরা লোকসভা নির্বাচনের সময় অনুব্রত-অনুপম সাক্ষাৎ। ফাইল ছবি।

এদিকে, তৃণমূল শাসনে বীরভূম মানেই অনুব্রত গড়। তাঁর, দাপট অনস্বীকার্য। বরাবরই এই এই জেলায় 'কেষ্ট'র (অনুব্রতর ডাক নাম) উপর অগাধ ভরসা রাখেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে, এমন নেতাকে দলে টানতে বিজেপিও লাভবান হবে বলে মনে করছে একাংশের পর্যবেক্ষকরা। অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনে সেই বীরভূমে বিধানসভাওয়াড়ি ফলাফল ‘আশানুরূপ হয়নি’ তৃণমূলের। পাশাপাশি, অনুব্রত গড়েরই বিধায়ক মনিরুল ইসলামের বিজেপিতে যোগদানের জেরে অনুব্রত কার্যত দলের অন্দরে ‘চাপে’ রয়েছেন বলে খবর। সেই প্রেক্ষিতে সৌমিত্র খাঁ-র এহেন দাবি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‘বৈশাখী গেলে যাক, দেবশ্রীকে বিজেপিতে নিন’

এদিকে, এ প্রসঙ্গে অনুপম আরও বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, দলের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে, এ ধরনের কোনও ব্যক্তিকে (অনুব্রত) না নেওয়াই ভাল। আমরা এখন কোয়ালিটি কন্ট্রোল করছি। তৃণমূলের প্রতি বিতৃষ্ণা থেকেই আমরা ১৮টি আসন পেয়েছি লোকসভা ভোটে। যে সব নেতার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে মানুষ, সেই নেতারাই যদি বিজেপিতে আসেন, তাহলে দলের ভাবমূর্তি ঠিক থাকবে না’’।

আরও পড়ুন: বিধানসভায় দেবশ্রী রায়, শেষ পর্যন্ত কি তৃণমূলেই?

প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোট মেটার পরই তৃণমূল দুর্গে কার্যত ভাঙন ধরিয়ে দেন একদা মমতা সৈনিক তথা বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়। মুকুলের হাত ধরেই তৃণমূলের একের পর এক নেতা বিজেপিতে যোগ দিতে থেকেছেন। এই স্রোতেই পা মেলান লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। কিন্তু তৃণমূলের এই ‘কলঙ্কিত’ নেতাকে দলে নেওয়ায় ৬ মুরলীধর সেন লেনের একাংশই অসন্তোষ দেখা দেয়। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিজেপির সমালোচনা করতে শুরু করেন। যার জেরে স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়তে হয় দিলীপ ঘোষদের। আর এরপরই অন্য দলের নেতাদের বিজেপিতে যোগদানের বিষয়ে বিশেষ ছাঁকনি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি নেতৃত্ব। মুকুল রায়কে কার্যত ‘সাইডলাইন’ করে বিজেপি নেতৃত্বের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, দিলীপ ঘোষের সম্মতি ছাড়া কাউকেই দলে নেওয়া হবে না। তবে অর্জুন সিং-এর মতো তৃণমূলের একদা 'বাহুবলী' নেতাকে যখন বিজেপি দলে নিয়েছে এবং প্রার্থী করে 'উপযুক্ত মর্যাদা' দিয়েছে, তখন অনুব্রতর ক্ষেত্রেও সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে রামের ঘরে শেষ পর্যন্ত 'কেষ্ট'র আগমন সত্যিই ঘটে কি না, এখন সে দিকেই তাকিয়ে রাজনীতির কুশীলবরা।

tmc bjp anubrata mondal
Advertisment