Advertisment

নুসরতের সিঁথির সিঁদুর নিয়ে তৃণমূলেই ‘ক্ষোভ’, পাশে লকেট!

‘‘সমালোচনা হচ্ছে। আমার কাছে বহু লোক আপত্তি জানিয়েছেন। শুধু মুসলিম নন, হিন্দুদের অনেকও বলছেন এটা কী! সে নিজে ঠিক করুক, সে কি মুসলিম? বিভ্রান্তি হচ্ছে সে মুসলিম না জৈন? অনেকে প্রশ্ন করছে...’’।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
nusrat jahan, নুসরত জাহান

ইদ্রিশ আলি, নুসরত জাহান, লকেট চট্টোপাধ্যায়।

বেগুনি পাড়ের সাদা রঙের শাড়ি, দু’হাতে চূড়া, হাত ভর্তি মেহেন্দি, গলায় মঙ্গলসূত্র, সিঁথিতে সিঁদুর- এমন বেশে সংসদে শপথ বাক্য পাঠ করে এই মুহূর্তে শিরোনামে তৃণমূলের নবাগতা সাংসদ তথা অভিনেত্রী নুসরত জাহান। মুসলিম মহিলার সিঁথিতে সিঁদুর! গলায় মঙ্গলসূত্র! এ কারণেই তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ। নুসরতের বেশভূষা নিয়ে ইতিমধ্যেই ‘আপত্তি’ তুলেছেন দেওবন্দের এক মৌলবী। তবে শুধু দেওবন্দের মৌলবীই নন, সিঁদুর-মঙ্গলসূত্র পরায় এবার দলেরই একাংশের ‘ক্ষোভ’-এর মুখে পড়েছেন তৃণমূলের এই তারকা সাংসদ। যে বহসিরহাট থেকে এবার সাংসদ হয়েছেন নুসরত, সেখানকারই প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী ইদ্রিশ আলির তোপের মুখে পড়লেন সিঁদুর-মঙ্গলসূত্রের অভিনেত্রী সাংসদ।

Advertisment

নুসরত জাহানের সিঁদুর-বিতর্ক প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলি বলেন, ‘‘আমি নিজে কোনও মন্তব্য করব না। সমালোচনা হচ্ছে। আমার কাছে বহু লোক আপত্তি জানিয়েছেন। শুধু মুসলিম নন, হিন্দুদের অনেকও বলছেন, এটা কী! সে নিজে ঠিক করুক, সে কি মুসলিম? মানুষ বিভ্রান্তি হচ্ছে, সে মুসলিম না জৈন? অনেকে এই প্রশ্ন করছেন। আমার মনে হয় ও যা করছে ঠিক নয়। ও একটা অবস্থান ঠিক করুক। মুসলিম হলে মুসলিম ধর্ম মেনে চলতে হবে। হিন্দু হলে হিন্দু ধর্ম মেনে চলতে হবে। (এমন করলে) না ঘর কা না ঘটকা হয়ে যাবে তো। ’’। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই তুরস্কে ব্যবসায়ী নিখিল জৈনের সঙ্গে বিয়ে হয় নুসরত জাহানের। বিয়ের পরই সংসদে ‘নুসরত জাহান রুহি জৈন’ হিসেবে শপথ পাঠ করেন বসিরহাটের সাংসদ।

আরও পড়ুন: লোকসভায় গিয়ে প্রথম কী চাইলেন মিমি-নুসরত?

অন্যদিকে, ভরা সংসদে লোকসভার অধ্যক্ষকে নুসরতের প্রণাম জানানো নিয়েও আপত্তি তুলেছেন তৃণমূলের ইদ্রিশ। এ প্রসঙ্গে বসিরহাটের প্রাক্তন সাংসদ বলেন, ‘‘এটা সংস্কৃতি নয়। বিজেপি সাংসদরাও করেননি, উনিই শুধু করেছেন এসব। প্রণাম করা, শ্রদ্ধা জানানো ব্যক্তিগত রুচির ব্যাপার। কিন্তু সেটা তো সব জায়গায় হয় না। বাইরে করতে পারতেন’’।

অন্যদিকে, বিতর্ক-সমালোচনা নিয়ে সরব হয়েছেন স্বয়ং নুসরত জাহানও। টুইট করে নুসরত জানিয়েছেন, ‘‘ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের করা মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানালে ঘৃণা ও হিংসা বাড়ে, ইতিহাসেই তার প্রমাণ রয়েছে। আমি বহুত্ববাদী ভারতের প্রতিনিধি, যা জাতপাত, ধর্মীয় বেড়ার ঊর্ধ্বে। আমি সব ধর্মকেই সম্মান করি...আমি একজন মুসলিম। আমি কী পরব, তা নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে পারেন না। ধর্ম পোশাকের ঊর্ধ্বে...’’।

আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল হওয়া নিয়ে কী বললেন নুসরত?

নুসরতের সিঁদুর ও মঙ্গলসূত্র নিয়ে ইদ্রিশ ফের বলেন, ‘‘আমরাও দুর্গাপুজোর মণ্ডপে যাই, সেখানে তো মুসলিম হয়ে দুর্গাপুজো করি না। মুসলিম হয়ে যদি পাথর পুজো করি, সেটা তো হয় না। একটা ধর্ম মেনে চলা উচিত। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। আমরা যখন নমাজ পড়ি, উনি যান, সেখানে কি নমাজ পড়েন উনি? নমাজকে শ্রদ্ধা জানান। অনেকে বাজে প্রচার করেন এটার। কোরানে অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা জানানোর কথা বলা আছে’’।

নুসরতের পাশে দাঁড়িয়েছেন যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। মিমি বলেন, ‘‘আমার বন্ধু যেটা করবে সেটাকে সবসময় সমর্থন জানাব। সে সিঁদুর পড়ুক বা চূড়া পড়ুক, আমি সমর্থন জানাব। আমরা তো প্রথম দিন থেকে ট্রোলড হচ্ছি। একটা মানুষের ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে, সেটাকে সম্মান জানাতে হবে। যে জায়গায় বসে আমরা গোটা দেশ গড়ছি, সেখানে নারীদের সম্মান জানাতে হবে’’।

অন্যদিকে, নুসরত জাহানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। হুগলির বিজেপি সাংসদ বলেন, ‘‘শাঁখা-সিঁদুর পরবেন কি পরবেন না, শপথপাঠের জন্য কী পোশাক পরবেন, সেটাও কি জিজ্ঞেস করতে হবে, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত নুসরতের পাশে দাঁড়ানো। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়’’। নুসরতের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির শাহনওয়াজ হুসেনও।

tmc All India Trinamool Congress Nusrat Jahan
Advertisment