ত্রিপুরা, অসম, গোয়ার পর এবার তৃণমূলের চোখ উত্তরপ্রদেশে। সোমবারই হাত ছেড়ে ঘাস-ফুলে যোগ দিলেন ললিতপতি ও রাজেশপতি ত্রুপাঠী। এঁরা প্রয়াত কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমলাপতি ত্রিপাঠীর নাতি ও তাঁর ছেলে। রাজেশ প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক এবং লতিতপতি দলের প্রদেশ শাখার প্রাক্তন সহ-সভাপতি ও বিধায়ক ছিলেন। মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এ দিন শিলিগুড়িতে তৃণমূলে যোগ দেন ললিতপতি ও রাজেশপতি। বাংলার শাসক শিবিরের যোগ দানের আগে এই দু'জনেই কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে ঘোষণা করেন খোদ তৃণমূল নেত্রী।
Advertisment
এ দিন শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক বৈঠক শেষে এই যোগদান পর্ব চলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ছট পুজোর পর সময় ও সুযোগ বুঝে বারাণসীতে যাবেন তিনি। বলেন, 'আমাকে ললিত ও রাজেশ উত্তরপ্রদেশে যেতে বলেছেন। আমি বলেছি, কালী পুজো-ছট পুজো হয়ে যাক। তারপর ওঁদের আমন্ত্রণের ভিত্তিতে সময়, সুযোগ করে বারাণসী যাবো। অভিষেকও যাবে। লখনউ আমাদের অচেনা নয়, এলাহাবাদও আমরা চিনি। বাংলা তো আমার হাতের মুঠোয়। মানুষ যখন চাইছে তখন আমরা অন্য রাজ্যেও যাবো।' বারাণসীতে ত্রিপাঠীদের একসময়ে রাজনৈতিক প্রতাপ ছিল বলে খবর।
কংগ্রেস ছেড়ে বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক শীর্ষ নেতা তৃণমূলে যোগদান করছেন। নজির অসমের সুস্মিতা দেব, গোয়ার লুইজিনহো ফেলেইরো। আর এতেই নানা প্রশ্ন উঠছে। ২০২৪-কে বিবেচনা করে বিজেপি বিরোধী জোটের কথা যখন চলছে ঠিক তখনই তৃণমূলের বিরুদ্ধে দল ভাঙানোর অভিযোগে সরব হাত শিবির। এদিন এই অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন তৃণমূল নেত্রী। আক্রমণ শানিয়েছেন কংগ্রেসকে।
Advertisment
তৃণমূলের যোগদানের মুহূর্তে সোমবার মমতা বলেন, 'ললিতপতি ও রাজেশপতি ত্রিপাঠী কংগ্রেস থেকে পদত্যাগের পরই আমাদের দলে এসেছেন। রীতি মেনেই আমাদের দলে স্বাগত জানানো হয়ে থাকে।' দল ভাঙানোর বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, 'গত সাত বছরের বেশি সময় ধরে কংগ্রেস কেন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করলো না। নোটবন্ধি থেকে সিএএ এনআরসি, জ্বালানি, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তৃণমূল লড়ছে, আওয়াজ তুলেছে। কংগ্রেস লড়েনি বলেই তো তৃণমূলকে এগিয়ে আসতে হয়েছে। হাতরাস, লখিমপুরে যখন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা লড়াই করে পৌঁছে গেল তখন কংগ্রেস সার্কিট হাইসে ছিল। আমরা মাথা নুইয়ে চুপ করে বসে থাকতে রাজি নই।'
ত্রিপুরায় বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলে নেতা, কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। নেত্রীর দাবি, এ দিন গোয়ায় তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন 'কেন উত্তরপ্রদেশের হাতরাস, লখিমপুরে সবাইকে যেতে আটকানো হয়েছিল?' মমতার দাবি, 'তৃণমূল তৃণমূল সর্বভারতীয় দল। কিন্তু আমাদের সর্বত্র ওরা আটকাচ্ছে। এভাবে সম্ভব নয়। উত্তরপ্রদেশে আমি ও আমাদের দলের নেতারা যাবই। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো। আমাকে কেউ ডাকলে আমি যাবো। তৃণমূলকে মানুষ বিশ্বাস করে।' রাজনৈতিক মহলের মতে দেশব্যাপী বিরোধী শক্তি হিসাবে কংগ্রেসের বিকল্প যে তৃণমূলই, তা প্রতিপদে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিরোধী জোটের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে এদিনও সওয়াল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, 'বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। আমরা পরিবারের মতো কাজ করবো।' তবে জোটের নেতৃত্বের ভবিষ্যত নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তৃণমূল সুপ্রিমো।