বাংলার রাজনীতিতে আজীবন বর্ণময় থেকে গিয়েছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রিয়-সুব্রত জুটি নিয়ে নানা ঘটনা প্রবাদে পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। একসঙ্গে রাজনীতি করতে গিয়ে তাঁরা দুজন যেন দুই অঙ্গে এক রূপ হয়ে গিয়েছিলেন। শোনা যায়, ছাত্র রাজনীতি করার সময় একই পাঞ্জাবীও তাঁরা ভাগাভাগি করে পরতেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলেন। একদিকে তৃণমূল পরিচালিত কলকাতা পুরসভার মেয়র ছিলেন, অন্যদিকে কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসির রাজ্য সভাপতিও ছিলেন সুব্রতবাবু।
চার বছর আগে কোনও একদিন দুপুর তিনটে নাগাদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জের ফ্লাটে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম বিজয়া দশমীর কুশল বিনিময় করতে। তখন বিশ্রাম করছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক। আমরা এসেছি শুনেই চোখ কচলাতে কচলাতে বৈঠকখানায় চলে এলেন। কিন্তু তাঁর চোখে-মুখে বিরক্তির লেশমাত্র নেই। তারপর তিনি নানা জানা-অজানা রাজনৈতিক গল্প শুরু করলেন।
প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির সঙ্গে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বয়সের পার্থক্য ছিল মাত্র এক থেকে দেড় বছর। কিন্তু সবসময় তাঁর মুখে লেগে থাকতো, প্রিয়দা। একবছর আগেই প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর প্রসঙ্গ উঠতেই আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রিয়দা বলেই নানান কথা শুরু করলেন। বাংলার রাজনীতির নানা ইতিহাস আউড়ালেন। ছাত্রজীবনের রাজনীতির কথা বললেন সুব্রতবাবু। প্রিয়দার সঙ্গে কীভাবে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে চলেছেন, এমন নানা ঘটনার স্মৃতিচারণা করলেন। তারপরই আলোচনা প্রসঙ্গে এসে গেল প্রিয়দা বেঁচে থাকলে আপনি কি করতেন? তিনি ডাকলে কি কংগ্রেসে না গিয়ে পারতেন?
আরও পড়ুন- প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়, আজ শেষকৃত্য
সেদিন বর্ষীয়ান রাজনীতিক কিন্তু ওই প্রশ্নের জবাবে সরাসরি না বলতে পারেননি। সুব্রতবাবু বলেছিলেন, 'প্রিয়দা থাকলে সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। একমাত্র প্রিয়দার জন্যই হয়তো কংগ্রেস রাজনীতিটাও ফের করতাম। এ বিষয়ে কোনও দ্বিধা নেই। দীর্ঘ দিন রাজ্যে ক্ষমতা ছাড়া তো রাজনীতি করেছি।' কিন্তু কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে উস্মা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। প্রবীণ তৃণমূল নেতা ও বরিষ্ঠ মন্ত্রী হয়েও তিনি বলেছিলেন, শুধু প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির সঙ্গে রাজনীতি করার জন্য তিনি কংগ্রেসে ফিরতে পারেন। তৃণমূলে থাকলেও প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সিও যে তাঁর নেতা সেকথা সবসময় স্বীকার করতেন তিনি। তাঁদের দুজনের 'বন্ডিং' যে কতটা অটুট ছিল, তা একেবারেই স্পষ্ট।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন