Parliament Waqf Bill : 'সরকারের ব্যর্থতা আড়ালের চেষ্টা', ওয়াকফ বিলের বিরোধীতায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস

Waqf amendment bill 2024: বুধবার লোকসভায় ওয়াকফ বোর্ড সংশোধনী বিল পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় এটি উপস্থাপন করা হবে। সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ।

Waqf amendment bill 2024: বুধবার লোকসভায় ওয়াকফ বোর্ড সংশোধনী বিল পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় এটি উপস্থাপন করা হবে। সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ।

author-image
IE Bangla Web Desk
আপডেট করা হয়েছে
New Update
Mamata

সরকারের ব্যর্থতা আড়ালের চেষ্টা, ওয়াকফ বিলের বিরোধীতায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস

Waqf amendment bill 2024:  'ওয়াকফ বিল সংবিধান বিরোধী', সংখ্যালঘুদের প্রতি সরকারের সহানুভূতি মিথ্যা, তাদের ঈদের নামাজও পড়তে দেওয়া হয়নি', ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে সংসদে হট্টোগোলের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। তিনি বলেন, "ওয়াকফ সংশোধনী বিল সংবিধানের মৌলিক অধিকার এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আক্রমণ। এর লক্ষ্য হলো সংবিধানকে দুর্বল করা, বিভ্রান্তি ছড়ানো, সংখ্যালঘুদের অপমান করা এবং ভারতীয় সমাজকে বিভক্ত করা"। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন সরকার এই বিলটি এনে ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আরও কোনঠাসা করার একটা চক্রান্ত। সরকারের উচিত এই বিল প্রত্যাহার করা। তিনি আরও বলেন,  'বিজেপি ওয়াকফ বিলের নামে রাজনীতি করছে'

Advertisment

 বুধবার লোকসভায় ওয়াকফ বোর্ড সংশোধনী বিল পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় এটি উপস্থাপন করা হবে। এই বিলটি নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মত পার্থক্য যার জেরে সকাল থেকেই উত্তাল সংসদ। সরকারের লক্ষ্য যে কোন মূল্যে এই বিল পাস করানো। অন্যদিকে বিরোধীরা বিলটিকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করে সরকারের বিরুদ্ধে আসরে নেমেছে। সরকারের পক্ষে বিলের পক্ষে উভয় কক্ষেই ৮ ঘন্টা করে এই বিষয়ে আলোচনার জন্য সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। বিলটি পাস করতে এনডিএ তাদের সাংসদদের বিলের সমর্থনে ভোট দেওয়ার জন্য হুইপ জারি করেছে। এনডিএ-র প্রধান মিত্র দলগুলি - টিডিপি, জেডিইউ, শিবসেনা এবং এলজেপি (রাম বিলাস) তাদের সাংসদদের বিলের সমর্থনে সরকারের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। এখন সকলের নজর শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠীর উপর, যারা জেডিইউ, টিডিপি এবং ইন্ডিয়া জোটে অন্তর্ভুক্ত। এই বিলটি গত বছর উত্থাপন করা হয়েছিল এবং তারপরে এটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। এখন এই বিলটি লোকসভায় আলোচনার জন্য পেশ করা হয়েছে। 

সরকারের তরফে বিলের সমর্থনে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, '৩৭০ ধারার জন্যও একই রকম প্রতিবাদ হয়েছিল, লোকসভায় বিরোধীদের প্রশ্ন করার সময় তিনি বলেন, সিএএ-র বিরুদ্ধেও একই ঘটনা ঘটেছে। সরকারের  দাবি, ওয়াকফ আইন, ১৯৯৫ সংশোধনের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করাই এই বিলের উদ্দেশ্য। বিলের মূল প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- আইনের নতুন নামকরণ, ওয়াকফের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো।

Advertisment

লোকসভায় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৪ বিলের উপর আলোচনা শুরু হয়েছে। লোকসভায় বিলটি পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু।  কংগ্রেস শুরু থেকেই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।  ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন সংশোধনের ঘটনা এই প্রথম ঘটনা নয়। ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকারের সময়ও এই আইনটি সংশোধন করা হয়েছিল। বিলটি পাশ করাতে আজ লোকসভায় ২৭২ জন সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন। 

লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করা হয়েছে। লোকসভায় এই বিল পেশ করেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। এই বিলের উপর আলোচনার জন্য ৮ ঘন্টা সময় বরাদ্দ করা হয়েছে কিন্তু সরকার বলেছে যে যদি হাউস সম্মত হয়, তাহলে আলোচনার সময় বাড়ানো যেতে পারে। এর আগে, ক্ষমতাসীন দল বিজেপি তাদের সকল সাংসদদের আজ সংসদে উপস্থিত থাকার জন্য হুইপ জারি করেছিল। একইভাবে, টিডিপি, জেডিইউ, আরএলডি তাদের সাংসদদের জন্য হুইপ জারি করেছে। অন্যদিকে, বিরোধীরাও ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে সরকারের বিরোধীতায় আসরে নামে।

এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে সংসদে ওয়াকফ বিল পাস করানো নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি। এই মুহূর্তে লোকসভায় বিজেপিৃর সাংসদ সংখ্যা ২৪০। NDA সরকারের শরিক দলগুলির মধ্যে TDP, JDU ইতিমধ্যেই ওয়াকফ বিলকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। সবমিলিয়ে NDA-র সাংসদ সংখ্যা ২৯৫। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২ সাংসদের সংখ্যার চেয়ে বেশি। সেই নিরিখে কংগ্রেস এবং বিরোধী শিবির 'ইন্ডিয়া'-র সাংসদ সংখ্যা ২৩৪। ফলে বিল পাস করাতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কেন্দ্রের।

বিরাট খবর অর্জুন সিংকে নিয়ে! কী জানাল কলকাতা হাইকোর্ট?

লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশের পর আলোচনার সময় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, 'ওয়াকফ বিল কোনও ধর্মীয় ব্যবস্থা, কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা কোনও ধর্মীয় রীতিতে কোনওভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না।' তিনি বলেন, 'এখন ওয়াকফ বোর্ডে শিয়া, সুন্নি, বোহরা, পিছিয়ে পড়া মুসলিম, মহিলা এবং বিশেষজ্ঞ অমুসলিমরাও থাকবেন।' কাউন্সিলে সর্বাধিক ৪ জন অমুসলিম সদস্য থাকতে পারবেন এবং তাদের মধ্যে অন্তত ২ জন মহিলা হতে হবে। 

বুধবার লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। লোকসভায় ওয়াকফ বিল নিয়ে আলোচনার সময় তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে ওয়াকফ বিলে ধর্মীয় কার্যকলাপে হস্তক্ষেপের কোনও বিধান নেই। তিনি আরও দাবি করেন যে, যদি সংশোধনীটি না আনা হত, তাহলে এই সংসদ ভবনটিও ওয়াকফ সম্পত্তি হত।

অপর দিকে সিনিয়র বিজেপি নেতা তথা সাংসদ রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেছেন- দরিদ্র মুসলিমদের কল্যাণের জন্য এই বিল আনা হয়েছে। শাসক দলের পক্ষে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন, তিনি যে বিহার থেকে এসেছেন, সেখানে প্রচুর সংখ্যক দরিদ্র মুসলিম বাস করেন। সরকার তাদের কল্যাণের জন্য এই বিল এনেছে। এতে দরিদ্র মুসলমানরা উপকৃত হবে।

লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪ পেশ করা হয়েছে। এই সময় কংগ্রেস সংসদে ব্যাপক হট্টগোল সৃষ্টি করে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এদিন কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন। সরকার যখন বিলটিকে মুসলিমদের স্বার্থে একটি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করছে তখন বিরোধীরা বিলটির তীব্র বিরোধিতা করেছে। বিরোধী দলগুলি বলছে যে বিলটি সংবিধানের মৌলিক ধারাকে লঙ্ঘন করছে  এবং এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী।

পাথরপ্রতিমার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, অবশেষে পুলিশের জালে চন্দ্রকান্ত

লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের জবাবে বিজেপি সাংসদ রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন যে এই বিলটি কোনওভাবেই অসাংবিধানিক নয়। তিনি বিরোধী দলের দ্বৈত মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে বিরোধীদের জবাবে রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন যে বিরোধীরা এই বিলটিকে অসাংবিধানিক বলছে, যেখানে সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে মহিলাদের প্রতি কোনও ধরণের বৈষম্য করা হবে না এবং সরকার এই বিষয়ে আইন তৈরি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, “যদি এই বিলটি ওয়াকফ ব্যবস্থাপনায় নারী এবং পিছিয়ে পড়া মুসলিমদের সুযোগ দেওয়ার বিধান করে, তাহলে এতে সমস্যা কোথায়?” বিরোধীরা সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ (ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার) উদ্ধৃত করলে তিনি বলেন, “যদি ওয়াকফ জমির অপব্যবহার, লুণ্ঠন বা অবৈধভাবে দখল করা হয়, তাহলে সংবিধানের ২৫(২) অনুচ্ছেদ সরকারকে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের পূর্ণ অধিকার দেয়।” সরকার দরিদ্র মুসলমানদের উপকার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রবি শঙ্কর প্রসাদ আরও বলেন, "দেশে অনেক পিছিয়ে পড়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ আছেন যারা ওয়াকফ ব্যবস্থাপনায় সুযোগ পান না। তাদের সুযোগ দেওয়ার জন্যই এই বিল আনা হয়েছে।" তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে এই বিলটি কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয় বরং দরিদ্র মুসলিমদের স্বার্থে আনা হয়েছে। 

লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করার সময়, কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন যে দেশে ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, "আগে ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা ছিল ৪.৯ লক্ষ, যা এখন বেড়ে ৮.৭২ লক্ষে দাঁড়িয়েছে।" রিজিজু বলেন, "যদি এই ৮.৭২ লক্ষ ওয়াকফ সম্পত্তি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে এটি কেবল মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি করবে না, বরং সমগ্র দেশের ভাগ্যও বদলে দিতে পারে।"  রিজিজু জোর দিয়ে বলেন যে ওয়াকফ সম্পত্তি গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে, এটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা উচিত যাতে দরিদ্র মুসলমানরা প্রকৃত সুবিধা পেতে পারে"।   

'পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ বানানোর চেষ্টা, ওপার দেখে এপারেও ভয়', রামনবমীর আবহে সোচ্চার দিলীপ

লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিলের আলোচনার সময়, বিরোধী কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ সরকারের উপর তীব্র আক্রমণ করে বিলটিকে সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আক্রমণ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, সরকার বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সমাজকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। গগৈ বলেন, "আজ সরকার নিজেদের সংখ্যালঘুদের শুভাকাঙ্ক্ষী বলে দাবি করছে, কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আগে অনেক রাজ্যে নামাজ পড়ার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। এই সরকারের আগে বলা উচিত তাদের সংখ্যালঘু সাংসদের সংখ্যা কত।" তিনি অভিযোগ করেন যে সরকার একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে টার্গেট করছে এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।

ওয়াকফ সংশোধনী বিল সম্পর্কে, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) সাংসদ ডি রাজা বলেছেন যে সিপিআই সহ বাম দলগুলি এই বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেবে। তিনি বলেন যে এই বিল সংখ্যালঘুদের অধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে এবং তাই তার দল এর বিরোধিতা করবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে লক্ষ্য করে ডি রাজা বলেন যে এই সংশোধনী সম্পূর্ণরূপে সংখ্যালঘু বিরোধী এবং এটি ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বিরোধী দলগুলিকে এই বিলের বিরোধিতা করার জন্য আবেদন জানান।  বিলের বিরোধিতা সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব। তিনি বলেন, এনডিএ সরকারের ব্যর্থতা লুকানোর জন্যই এই বিল এনেছে।

আপনাদের জানিয়ে রাখি যে, ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। সরকার এটিকে স্বচ্ছতা আনার পদক্ষেপ বলছে, অন্যদিকে বিরোধী দলগুলি এটিকে সংখ্যালঘু বিরোধী বলে উল্লেখ করেছে।  

rahul gandhi CONGRESS India NDA modi Waqf bill