রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত নয়া মোড় নিল। একাধিক ইস্যুতে আবারও মমতা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠকে যোগ দিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমি সংবিধান মেনেই চলি। কখনই লক্ষ্মণরেখা পেরোইনি’’। একইসঙ্গে মমতার নাম করে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ও আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, সে নিয়ে কখনই প্রকাশ্যে বলিনি...রাজ্যপাল সবসময়ই রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করছে। রাজ্যের সঙ্গে কী আলোচনা হচ্ছে, তা প্রকাশ্যে আনা রাজ্যপালের সমীচিন নয়’’।
ঠিক কী বলেছেন রাজ্যপাল?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমার আর মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে যা ঘটেছে, তা নিয়ে কখনই প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া দিইনি...আমি সংবিধান মেনে চলি। রাজ্যপাল হিসেবে কখনই লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করিনি’’। অন্যদিকে, রেড রোডে পুজো কার্নিভালে তাঁকে ‘ব্ল্যাক আউট’ করা হয়েছে বলে ক’দিন আগেই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন রাজ্যপাল। এদিন ফের এ প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘৪ ঘণ্টা ধরে আমায় ব্ল্যাক আউট করা হল। মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা হল। এরকম ঘটনা আর কোথাও ঘটেনি আগে। অনেকে বলেছেন আমি নাকি শুধু প্রচার চাই। যাঁরা একথা বলছেন, তাঁরা নিজেদের দিকে তাকান। আমার প্রচারের দরকার নেই’’। তিনি আরও বলেন, পুজো কার্নিভালে যেমন বাংলার প্রতিভার নিদর্শন তুলে ধরা হয়, তেমনই সেখানে একটা অন্ধকার দিক ছিল। উল্লেখ্য, এ প্রসঙ্গে ক’দিন আগে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মন্তব্য করতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ‘মমতার বিরুদ্ধে মুখ খোলায়’ গ্রেফতার কংগ্রেস নেতা, তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি
অন্যদিকে, কলকাতা পুলিশের বদলে এবার থেকে রাজ্যপালের নিরাপত্তার দায়িত্বে আধা সেনা মোতায়েন থাকবে বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যপালের তুলোধনা করে সরব হন মমতার মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এদিন সুব্রতকে নিশানা করে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘নিরাপত্তা ইস্যুতে কিছু বলব না। তবে রাজ্যের এক শীর্ষ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছেন সংবাদমাধ্যমে, তা একজন মন্ত্রী হিসেবে ঠিক করেননি। আগে তথ্য যাচাই করে কথা বলুন। আমি যখন কোনও বিষয়ে মন্তব্য করি, সে বিষয়ে জেনেবুঝেই মুখ খুলি’’। এ প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘অনেকেই যা খুশি মন্তব্য করছেন, তাঁদের হাতজোড় করে বলছি, আগে সবটা জেনে তবেই মন্তব্য করুন’’।
আরও পড়ুন: ‘নোবেলজয়ী অভিষেকবাবু’, মমতার মন্তব্যে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি
এদিন তাঁর শিলিগুড়ি সফর-বিতর্কেও মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘কেউ বলছেন আমি নাকি পর্যটক, আমি পর্যটক নই। আমি আমার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেছি। আমি স্তম্ভিত এ ধরনের মন্তব্য শুনে’’। উল্লেখ্য, ক’দিন আগে শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল। যে বৈঠক ‘বয়কট’ করে তৃণমূল। এই বৈঠককে ঘিরে রাজ্যপালকে নিশানা করতে আসরে নামে শাসক শিবির।
আরও পড়ুন: ‘রাহুল গান্ধীর ভুল অধীর চৌধুরীও করল, এবার ওকে সারা দেশে দৌড় করাব’
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ‘হেনস্থা’র ঘটনায় রাজ্যপালের ‘ভূমিকা’ একেবারেই ভাল চোখে দেখেনি শাসক শিবির। যাদবপুর ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের বিক্ষোভে আটক বাবুলকে উদ্ধারে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর জলঘোলা হয়। এরপর সম্প্রতি জিয়াগঞ্জে সপরিবারে শিক্ষক খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সরব হন রাজ্যপাল। এ ঘটনাতেও রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করতে মাঠে নামেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। এরপর রেড রোডে পুজো কার্নিভালে তাঁকে অপমান করা হয়েছে বলে সরব হন রাজ্যপাল। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। রাজ্যপালের এহেন মন্তব্যের পাল্টা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যপালের সব কথায় কথা বলতে হবে নাকি!’’। এই আবহে আবারও রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে এদিন রাজ্যপাল সরব হলেন, তাতে এই সংঘাত পর্ব নয়া মাত্রা পেল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।