বিধানসভার ফলপ্রকাশের দু'মাস হতে চললেও ভোটগণনায় কারচুপি নিয়ে বিজেপি এখনও সেভাবে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেনি। এরইমধ্যে রাজ্যের পাঁচ কেন্দ্রের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। ইতিমধ্যে নন্দীগ্রামের পুনর্গণনা মামলার শুনানি শুরু হতেই জোরদার বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে পুনর্গণনা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ না হওয়ায় রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকরা হতাশ।
নন্দীগ্রামের নির্বাচনের ফল নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছেন তৃণমূলপ্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি ময়না, বনগাঁ দক্ষিণ, গোঘাট ও বলরামপুরের তৃণমূল প্রার্থীরাও বিচারের আশায় হাইকোর্টে মামলা করেছেন। এদিকে সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর কাউন্টিং পদ্ধতি তথা ইভিএম নিয়ে বিজেপি প্রার্থীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে তা নিয়ে হইচই হয়েছিল। গেরুয়া শিবিরের বুথ পর্যায়ের কর্মী থেকে দলের নেতৃত্বের একাংশের দাবি ছিল, ভোট পুনর্গণনার জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্ব উদ্যোগ নিক। কিন্তু সেই উদ্যোগে ঢিলেমি দেখা যাওয়ায় ক্ষোভও দানা বাধতে থাকে।
আরও পড়ুন- আরও ৪ আসনে ভোটের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের, হাইকোর্টে মামলা
আদৌ কি পুনর্গণনার দাবি জানাবে বিজেপি? এবিষয়ে বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের একাধিক নেতাকে প্রশ্ন করা হলেও তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, মামলার প্রস্তুতি তো দূরের কথা তাঁরা এবিষয়ে কিছু জানেন না। শুনেছেন মামলা হবে। কত আসনে, কবে হবে তা তাঁরা জানেন না। বিস্তারিত বলতে পারবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশও পুনর্গণনা সংক্রান্ত মামলা নিয়ে অবগত নয় বলেই মন্তব্য করেছেন। এরইমধ্যে নন্দীগ্রাম মামলা নিয়ে হাইকোর্টে বিতর্ক দানা বাধায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পুনর্গণনা নিয়ে আদালতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস ২০০-ওপর আসন জয়ের পরও মুখ্যমন্ত্রীসহ পাঁচ আসনের প্রার্থীরা পুনর্গণনার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। সেক্ষেত্রে এখনও পুনর্গণনা নিয়ে মামলা করতে পারেনি গেরুয়া শিবির। তৃণমূল মামলা করার পর যেন টনক নড়েছে বিজেপির।
আরও পড়ুন- নন্দীগ্রাম পুনর্গণনা মামলা: বিচারপতির এজলাস নিয়ে প্রশ্ন তৃণমূলের
বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবির এরাজ্যে সাফল্য পাবে বলে একপ্রকার ধরেই নিয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন, এরাজ্যে ২০০-র ওপর আসন পাবে বিজেপি। হাবেভাবে রাজ্য নেতাদের একাংশ তা প্রকাশও করছিলেন। নির্বাচনে ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল ঘোষণার সংখ্যা দূরস্ত, তিন অংকের সংখ্যায়ই পৌঁছায়নি বিজেপি। ৭৭ আসনেই থমকে গিয়েছে দৌড়। এই নির্বাচনে প্রবাসী বিজেপি নেতারাও পরাজিত হয়েছেন। পরাজিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ সাংসদও।
রাজ্যের একাধিক কেন্দ্রে অল্প ভোটের ব্যবধানে হার-জিৎ হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভোটগণনা নিয়ে প্রার্থীরাও প্রশ্ন তুলেছেন। দলীয়কর্মীরাও সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে পুনর্গণনার জন্য দলের কাছে আবেদন রেখেছেন। ২ হাজারের কম ব্যবধানে পরাজিত কেন্দ্রে পুনর্গণনার কথা ভাবনাচিন্তা করলেও আদৌ কটা আসনের জন্য বিজেপি আবেদন করে সেটাই এখন দেখার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন