পি চিদাম্বরম সিবিআই হেফাজতে, লালুপ্রসাদ যাদব সংশোধনাগারে, মোতিলাল ভোরা, ভূপিন্দর হুডাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করেছে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট এমতাবস্থায় কলকাতার শহিদমিনারের পাদদেশ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এজেন্সিকে ভয় পাই না, আজ আমার ভাইকে ডাকছে, কাল আমায় ডাকবে। এজন্য আমি তৈরি। জেলে যেতে রাজি’’। বুধবার তৃণমূল ছাত্রপরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে মোদী সরকারকে তুলোধনা করে নয়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘দেশ দখল করবে বলে এজেন্সির ভয় দেখাচ্ছে’’, এ ভাষাতেই এদিন আবারও সোচ্চার হলেন মমতা।
ঠিক কী বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
মোদী সরকাররকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘দেশ দখল করবে বলে এজেন্সির ভয় দেখাচ্ছে। কেউ কথা পর্যন্ত বলতে পারছেন না। কিন্তু, আমার কন্ঠ স্তব্ধ করা যাবে না। আমরা এজেন্সিকে ভয় পাই না। আজ আমার ভাইকে ডাকছে, কাল আমায় ডাকবে। এজন্য আমি তৈরি। আমি জেলে যেতে রাজি কিন্তু বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কাছে মাথা নত করব না। জেলে গেলে ভাবব, স্বাধীনতা সংগ্রাম করছি, দেশ পরাধীন হয়ে গিয়েছে’’। মমতা আরও বলেন, ‘‘আজ ভবিষ্যদ্বাণী করে যাচ্ছি, আমার ধারণা, ওরা প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অফ গভর্নমেন্টের দিকে যাচ্ছে। জেনে রেখে দিন, আজ শিক্ষিত সমাজ, বিদ্বজনদের কাছে ভবিষ্যদ্বাণী করে যাচ্ছি, একটা নির্বাচন, একটা নেতা, একটা রাজনৈতিক দল, একটা জরুরি অবস্থা, প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অফ গভর্নমেন্টের দিকে যাচ্ছে ভারতবর্ষ। দুঃখের কথা এজন্য আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লড়াই করেছিলেন...লক্ষ কোটি মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। আর আজ দেশ দখল করবে বলে সবাইকে টাকা দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে’’।
আরও পড়ুন: ‘মমতা ঘনিষ্ঠ’ শীর্ষ আমলার দফতরে সিবিআই হানা, তুঙ্গে জল্পনা
প্রসঙ্গত, এজেন্সির মাধ্যমে 'ভয় দেখানো'র অভিযোগ এর আগেও বহুবার করেছেন তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু উনিশের লোকসভা নির্বাচন মেটার পর থেকে বাংলায় সারদা-নারদ-রোজভ্যালি তদন্তে যেভাবে সিবিআই-ইডি উঠেপড়ে লেগেছে এবং একাধিক তৃণমূল নেতা বা ঘনিষ্ঠদের তলব করা হচ্ছে, সেই প্রেক্ষিতে মমতার এদিনের এমন ‘বিদ্রোহী’ অবতার রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সম্প্রতি চিটফান্ড মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, শতাব্দী রায়, দীনেশ ত্রিবেদীদের তলব করে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পাশাপাশি, নারদ মামলাতেও ফের তৃণমূলের সাংসদ, মন্ত্রীদের তলবের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, সারদা মামলায় খোদ তৃণমূল সুপ্রিমোর দিকেই বিরোধীরা আঙুল তুলেছেন। এ প্রেক্ষিতে এদিন যেভাবে নিজের নাম তুলে ধরলেন মমতা, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।
এক্সক্লুসিভ শোভন: মমতাকে তৈরি করতে সব নষ্ট করে জীবন দিয়েছিলাম, আর উনিই রাজনীতি করলেন
এ প্রসঙ্গে এদিন মমতা আরও বলেন, ‘‘আমার এক বিধায়ক বলল, আমায় একটা এজেন্সি ডাকল, বলল, তোমার দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের সিস্টেম কী? তোমার পার্টি রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়ার সিস্টেম কী? আমি বললাম, আমার দল কী করছে না করছে, এগুলো কি আপনার কাজ?, গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’’।
আরও পড়ুন: মমতা চা বানানোর পর চা খেতে যাচ্ছেন দিলীপ ঘোষ
পাশাপাশি, আরবিআই ও কাশ্মীর ইস্যুতে এদিন মোদী সরকারকে একহাত নিয়েছেন মমতা। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত লোককে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাথায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে বলল, ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিল। কার টাকা? জনগণের টাকা, দেশের টাকা। দেশের যদি বিপদ আসে, তাহলে টাকা থাকবে না। দেশের জন্য গচ্ছিত সোনা থাকে। আজ সেটাও নেই। সব চলে গিয়েছে’’। উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহের শুরুতেই নিজের ভাঁড়ার থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা কেন্দ্রকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরবিআই। প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর বিমল জালানের নেতৃত্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রস্তাব মেনেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে খবর।
অন্যদিকে, কাশ্মীর ইস্যুতেও এদিন মুখ খোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কথা বলার অধিকার নেই। কাশ্মীর নিয়ে এত কাণ্ড হল, তবু কেউ কথা বলতে পেরেছেন? কাউকে ঢুকতে দেয়নি। কাউকে খবর করতে দেয়নি। বন্দুকের নল দিয়ে চেপে রেখেছে সব’’। কেন্দ্রকে বিঁধে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘ভাত দেবে না, চাকরি দেবে না, রুটিরুজি দেবে না। শুধু ধর্মের বাজার চলছে। ধর্মের নামে ভেজাল ধর্মের দোকান চলছে। দেশে আর কিছু নেই’’।