ফোনে যোগাযোগ করলেই বলছে সুইচড অফ বা অস্তিত্ব নেই। দলীয় নেতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছেন না দলীয় কর্মীরাও। মারধর দিয়ে দুটি ফোনই নাকি কেড়ে নিয়ে গিয়েছে। ত্রিপুরার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা দলের অন্য়তম শীর্ষ নেতা আশিসলাল সিং জানিয়েছেন, পরপর দুদিন তাঁর ওপর আক্রমণ হয়েছে। গাড়ি ভেঙেছে, মোবাইল দুটোও ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছে। ২০১৮ সালের পর থেকে ৫ বার তাঁর ওপর হামলা হয়েছে। ত্রিপুরার পুরসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে লাগাতার হামলার অভিযোগ করে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
ঢাকঢোল পিটিয়ে ত্রিপুরায় পুরনির্বাচনে নেমেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এরাজ্য় থেকে একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব বারে বারে গিয়েছেন আগরতলায়। পরশি রাজ্য়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নীট ফল আমবাসা পুরসভায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সুমন পালের জয়। আকাসকুসুম কল্পনা ধাক্কা খাওয়ার পিছনে ত্রিপুরা তৃণমূল কংগ্রেস একাধিক কারণ খুঁজে পেয়েছে। সূত্রের খবর, তার মধ্য়ে অন্য়তম ভূমিপুত্রদের গুরুত্ব না দেওয়া।
ত্রিপুরা তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের বক্তব্য়, ত্রিপুরার দলের কোর কমিটির অন্য়তম সদস্য আশিসলাল সিংয়ের ওপর হামলার ঘটনা একটা উদাহরণ মাত্র। নির্বাচন হয়েছে এরাজ্য়ে। ত্রিপুরার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা প্রতিনিয়ত আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কলকাতার নেতৃত্বের ওপরও হামলা হয়েছে। কিন্তু বারে বারে কলকাতার নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ভূমিপুত্রদের কথা সেভাবে তুলে ধরা হয়নি। ত্রিপুরায় ভোট হবে, ভূমিপুত্ররা অবহেলিত হবে, তার ফল কখনও ভালো হতে পারে না বলে দলের ওই অংশের বক্তব্য। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের হয়ে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, বিরোধীদলের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন ত্রিপুরার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা, আর প্রচারের আলোর ছটা পড়েছে বঙ্গের নেতাদের ওপর, এটা ত্রিপুরার আমজনতাও মেনে নিতে পারেনি।
আরও পড়ুন: ‘২০২৪-এর লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ৩০০ আসন পাবে না’, দলের অস্বস্তি বাড়ালেন আজাদ
হারের গলদটা কোথায়? ত্রিপুরা তৃণমূল নেতৃত্বের একটা বড় অংশের বক্তব্য, নির্বাচন হয়েছে ত্রিপুরায়। তৃণমূল ভোট পরিচালনা করেছে কলকাতা কেন্দ্রীক। চলতি বছরে বঙ্গে বিজেপির যে হাল হয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় সেই হাল হয়েছে ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের। ত্রিপুরার আদি তৃণমূল নেতাদের আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার হিরিক পড়ে গিয়েছিল। ত্রিপুরায় পুরনির্বাচনের আগে বিজেপি থেকেও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন অনেকেই। এই যোগদান দলের নীচুতলার একটা বড় অংশ মেনে নেয়নি বলেই অভিমত অভিজ্ঞমহলের। তারই ফল মিলেছে পুরনির্বাচনে। এমনকী সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়ও সেই সমর্থন মেলেনি ঘাসফুল শিবিরের।
তৃণমূলের একাংশের মতে, রাজ্য়ের পুরনির্বাচনে আগরতলাকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে গিয়েই ডুবতে হয়েছে দলকে। রাজ্য়ের অন্য় পুরসভাগুলিকে একটু বেশি গুরুত্ব দিলেই কোনও না কোনও পুরসভা তৃণমূলের দখলে আসত। এমনটাই মনে করছেন দলের ওই অংশ। তাঁদের বক্তব্য, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আগরতলায় সভা-সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু অন্য় পুরসভায় তাঁরা কর্মসূচিতে অংশ নেননি। তাছাড়া প্রচার-কর্মসূচি বা নির্বাচনী কাজে আর্থিক ভাবেও লড়াইতে বিরোধীদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেনি।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে এরাজ্য়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা বিরোধী বা ভূমিপুত্রদের অধিকারের দাবি তুলেছিল, এবার ত্রিপুরায় সেই দাবি বুমেরাং হয়ে গেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিশেষত দলের অভ্যন্তরেই সেই কাটাছেড়া চলছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন