ক্রিকেট অন্ত প্রাণ। প্রবল ইচ্ছে ইংল্যান্ডে বসে অ্যাসেজ উপভোগ করার। তবে পকেট বড় বালাই! রেস্ত নেই যে। তাই চার বছর ধরে জঞ্জাল সাফ করে টাকা জমিয়ে সেই ইংল্যান্ডে আসা। ১২ বছরের ম্যাক্স ওয়েটের কাণ্ড দেখে কুর্নিশ করছে ক্রিকেট বিশ্ব। অ্যাসেজে ফয়সালা হতে পারে ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টে। স্টিভ স্মিথের ব্যাটে ভর করে প্রথম রাউন্ডে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে মাঠের বাইরেও টানটান উত্তেজনা। ম্যাক্স ওয়েট হাজার হাজার মাইল পেরিয়ে কুইন্সল্যান্ড থেকে চলে এসেছেন ইংল্যান্ডে। অ্যাসেজের উত্তেজনা উপভোগ করার জন্য়।
ম্যাক্সের বয়স যখন মাত্র ৮, তখন ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০১৫ সালে। সেই সময়েই শিশু ম্যাক্স বাবা-মায়ের কাছে আবদার করেছিল ইংল্যান্ডে অ্যাসেজ দেখার জন্য। তবে ম্যাক্সদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। নাছোড় ম্যাক্স মায়ের সঙ্গে পরিকল্পনা করে টাকা জমানো শুরু করে। কীভাবে? প্রতিবেশীদের জঞ্জাল সাফ করার পরিবর্তে অর্থোপার্জন। ম্যাক্সের বাবা ড্যামিয়েন ছেলেকে বলেন, কোনওভাবে জঞ্জাল সাফ করে যদি ১৫০০ ডলার জোগার করতে পারে, তাহলে বাকি টাকা তিনি দিয়ে দেবেন।
আরও পড়ুন স্মিথের ডাবল সেঞ্চুরিতে মুগ্ধ বাইশ গজ, শচীন বোঝালেন কোথায় আলাদা অজি স্টার
শীঘ্রই ম্যাক্স প্রতিবেশীদের চিঠি লিখে জঞ্জাল সাফ করার বিষয়ে জানায়। শুরুতেই ছোট্ট ম্যাক্সের কাছে দশজন প্রতিবেশী-গ্রাহক জুটে গিয়েছিল। ম্যাক্স অস্ট্রেলীয় প্রচারমাধ্যমে ইংল্যান্ডে বসে জানিয়েছে, "আমরা প্রত্যেক প্রতিবেশীদের কাছে আমাদের পরিকল্পনা চিঠি লিখে জানাই। দশ জন প্রতিবেশী রাজি হয়েছিলেন। এই কাজ প্রায় চার বছর ধরে করার পরে টাকা জমিয়ে ইংল্যান্ডে আসি।" প্রতি সপ্তাহে প্রত্যেক গ্রাহকদের কাছ থেকে তার উপার্জন ছিল ১ ডলার।
আরও পড়ুন আইসিসি ট্রোল করল ডেভিড ওয়ার্নারকে, কিন্তু কেন?
পাশাপাশি ক্রিকেট ভক্ত ম্যাক্স জানাচ্ছে, "গোটা বছর ধরে কেউ কেউ ৫০ ডলার দিয়েছিল। কয়েকজন আবার জঞ্জালের বিনের মধ্যে ডলার আঠা দিয়ে সেঁটে দিত।" চার বছর ধরে ম্যাক্স প্রতিবেশীদের জঞ্জাল সরিয়েছে। রবিবার সন্ধেয় সেই বিন নিয়ে সোমবারেই ফিরিয়ে দিয়ে আসত ম্যাক্স। অসুস্থ হলে ম্যাক্সের পরিবর্তে এই দায়িত্ব সামলাতেন মা-বাবা অথবা ছোট ভাই। জঞ্জাল সাফাই করতে গিয়ে জীবনের শিক্ষাও পেয়েছে। ক্রিকেট ভক্ত অস্ট্রেলীয় জানাচ্ছে, বাবা-মা বলতে, এটা কোনও সমস্যার বিষয়ই নয়। কারণ সপ্তাহে মাত্র ২০ মিনিট ব্যয় করতে হত।
ক্রিকেট অস্ট্রেলীয়.কম.এইউ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যাক্স বলেছে, চলতি অ্যাসেজ তার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, স্টিভ ওয়া, জাস্টিন ল্যাঙ্গার, নাথান লিঁয়নদের পাশে বসে খেলা উপভোগ করেছে সে। "জাস্টিন ল্যাঙ্গার আমাকে প্ল্যান-বুক দেখিয়েছিল। নোটবুকের নোটস দেখে রীতিমতো আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি। স্টিভ ওয়ার সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতাও অবিস্মরণীয়।" বলছে ছোট্ট ম্যাক্স। পাশাপাশি সংযোজন, "স্টিভ স্মিথ এবং প্যাট কামিন্স আমার প্রিয় ক্রিকেটার। ওদের কথা কথা বললাম, কীভাবে ওরা টেস্টের প্রস্তুতি সারে। পুরো বিষয়টা বেশ এনজয় করেছি। ক্রিকেট খেলা দেখা এবং খেলা রীতিমতো উপভোগ করি। এটা আমার কাছে প্যাশন।"
আর ম্য়াক্সের মা অ্যালি বলেছেন, "চার বছর ধরে ও অ্যাসেজ দেখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। স্থানীয়দের মধ্যেও ম্য়াক্স বেশ জনপ্রিয়। ম্যাক্সের এই উদ্যোগ আমাদের সকলকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।"
Read the full article in ENGLISH