সেই স্মৃতি এখনও দগদগে। জঙ্গি বিমান আছড়ে পড়েছিল মার্কিন গর্বের সৌধে। সেটা ছিল সেপ্টেম্বরের ১১। তারপরে অনেক জল বয়ে গিয়েছে হাডসন নদী দিয়ে। বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। তারপর থেকেই সমস্যা তীব্র হয়েছে ক্রীড়াবিদদের জন্য। ক্রীড়া সরঞ্জাম নিয়ে মার্কিন মুলুকে প্রবেশ করার সময় কঠোর বিধিনিষেধের মুখে পড়তে হয় তারকাদের। টেনিস তারকাদের ক্ষেত্রে ব্যাগেজের মধ্যে টেনিস রাকেট নিয়ে যাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
লিয়েন্ডার পেজের স্মৃতিতে সেই ঘটনা এখনও টাটকা। নিউইয়র্ক থেকে ফ্র্যাঙ্কফুর্টের বিমানে ছিলেন টেনিস নক্ষত্র। সেই সময়েই জার্মান নিরাপত্তাকর্মীরা হানা দেয় সেই এয়ারক্রাফটে। বিমানে থাকায় সেই সময়ে নিউইয়র্কে জঙ্গি হামলার খবর তখনও পাননি তিনি। পুরো উড়োজাহাজ তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালানোর পরে পেজ সহ সমস্ত যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফ্র্যাঙ্কফুর্ট থেকে ভারতের বিমানে ওঠার আগে এক নিরাপত্তাকর্মীকে লিয়েন্ডার জিজ্ঞাসাই করে ফেলেন ব্যাপারটা কী!
আরও পড়ুন: ম্যাঞ্চেস্টার কেলেঙ্কারিতে ভিলেন শাস্ত্রী-কোহলি! ক্ষোভে ফুঁসছে সৌরভের বোর্ড
"নিরাপত্তা প্রধান আমাকে বগলদাবা করে তাঁর অফিসে নিয়ে গিয়ে আমার সামনেই টিভি চালিয়েছিলেন। তখনই দেখি টুইন টাওয়ার ধুলোয় মিশে যাচ্ছে।" স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলছিলেন লিয়েন্ডার। গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত ঘটনা হল, ৯/১১-এর একদিন আগে ৯/১০-এ লিয়েন্ডার গিয়েছিলেন টুইন টাওয়ারেই।
ইউএস ওপেনে ডাবলস ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন পেজ-ভূপতি। প্রথম রাউন্ডেই ভারতীয় জুটি বিদায় নেয়। তবে নর্থ ক্যারোলিনার উইন্সটন সালেমে একমাস পরেই ডেভিস কাপ খেলার কথা ছিল দুজনের। গ্রাউন্ড জিরোর ধ্বংসস্তুপ থেকে ৭২ ব্লক দূরেই ছিল মহেশ ভূপতির এপার্টমেন্ট। নিজের এপার্টমেন্টে আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে সেই ধ্বংসলীলা দেখছিলেন ভূপতি। "প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম প্লেন ক্র্যাশ। তারপরেই দেখলাম দ্বিতীয় একটি প্লেন বিল্ডিংদের দিকে উড়ে যাচ্ছে। আমাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে গিয়েছিল। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কাছাকাছি আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধব রয়েছে। যাঁরা বেরোতে পারেনি।"
শনিবারই মার্কিন সেই ট্র্যাজেডির ২০ বছরের পূর্তি। জঙ্গি বিমান হানায় প্রাণ গিয়েছিল ২০ হাজার নিরীহ মানুষের। সেই দুর্ঘটনার দুদিন আগেই ইউএস ওপেনে প্ৰথমবার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন লেটন হিউইট। আর দশদিন পরেই ডেভিস কাপে প্লে অফ টাই-য়ে ভারতের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ভূপতি বলছিলেন, "সেই সময় আমরা কেউই টেনিসের কথা ভাবছিলাম না। সেই ঘটনার সময় সকলেই নিজেদের প্রাণ নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছিল। দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে গিয়েছিল।"
আরও পড়ুন: বাতিল টেস্টে জয়ী কে! বেনজির ঝামেলায় জড়ালো ভারত-ইংল্যান্ড বোর্ড
তবে পেশাদার হিসাবে কোর্টে ফিরতে হয়েছিল তারকাকে।।সেবারই তিনবারের ডেভিস কাপের ফাইনালিস্ট ভারতের সঙ্গে মুখোমুখি হয় টুর্নামেন্টের সবথেকে সফলতম দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গি আক্রমণের জেরে সেই টাইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। সেপ্টেম্বর থেকে ডেভিস কাপের টাই পিছিয়ে দেওয়া হয় অক্টোবরে।
বিশ্বের প্রাক্তন ৪ নম্বর এবং বর্তমানে মিয়ামি মাস্টার্সের ডিরেক্টর জেমস ব্লেক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলছিলেন, "সেই সময় টেনিসে মনোসংযোগ করা রীতিমত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই ঘটনার পরে ট্র্যাভেল করাও আতঙ্কের হয়ে দাঁড়ায়।"। ঘটনার সময় ব্লেক জর্জিয়ার অগাস্টায় ছিলেন। পেজ-ভূপতিদের মত তিনিই বন্ধুদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডকে ডুবিয়ে দিল ভারত! বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সৌরভ-কোহলিদের তুলোধোনা ভনের
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে উইনস্টন সালেমে ডেভিস কাপের টাইয়ে অংশ নিতে উড়ে যান লিয়েন্ডার পেজ, মহেশ ভূপতি, হর্ষ মানকাদ এবং ফজলুদ্দিন সৈয়দ। টুর্নামেন্টে তাঁদের কীভাবে দর্শকরা গ্রহণ করবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন লিয়েন্ডাররা। তবে শেষমেশ দেখা যায়, বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবেই ভারতীয়দের স্বাগত জানিয়েছেন টেনিসপ্রেমীরা।
ডেভিস কাপের টাইয়ে অবশ্য ভারত দাঁড়াতে পারেনি। ব্লেক এবং এন্ডি রডিক প্রথমেই জোড়া সিঙ্গলস জিতে টাইয়ে ২-০ এগিয়ে যান। তবে ডাবলসে ভেলকি দেখান লি-হেশ জুটি। ডোনাল্ড জনসন-জারেড পারমারকে হারিয়ে টানা ২৪টি ডাবলস ম্যাচ জেতার কীর্তি অর্জন করেন। তবে ফিরতি সিঙ্গলসে পেজ এবং মানকাদকে হারিয়ে দেন রডিক এবং ব্লেক। টাইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৪-১ ব্যবধানে জেতে।
কুখ্যাত হামলার পরেই সেই টাই! আজীবন মনে রাখবেন পেজ-ভূপতিরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন