Arnab Das Pathachakra: চুল উসকো-খুসকো। পরনে ধরাকাছা। হাতে একটা হলুদ-কালো রংয়ের ব্যাগ। পাঠচক্রের জার্সিটা গায়ে চাপিয়ে ধীর পায়ে বেরিয়ে আসছেন মাঠ থেকে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে এই ছবিটা গোটা বাংলার ফুটবল আবেগের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ঠিকই ধরেছেন। ছবিটা অর্ণব দাসের। মাত্র দেড়দিন আগে মাতৃহারা হয়েছেন তিনি। কিন্তু, একজন মানুষের দায়িত্ববোধ যে কতখানি থাকতে পারে, সেটা নিষ্প্রভ মুখেই বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন। চলতি কলকাতা ফুটবল লিগে (CFL 2025-26) ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal FC) বিরুদ্ধে শুধুমাত্র সিংহবিক্রমে পাঠচক্রের দূর্গই রক্ষা করলেন না। দলের জয়ে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও।
যাইহোক, এই ছবি ভাইরাল হওয়ার পর চারিদিকে 'আহা-উহু' শুরু হয়ে গিয়েছে। কর্তব্যের দাঁড়িপাল্লায় নিক্তিতে মাপা হচ্ছে অর্ণবকে। গতকাল নবাব ভট্টাচার্যের একটি ফেসবুক পোস্টের পরই গোটা বিষয়টা প্রকাশ্যে এসেছে। তিনি লিখেছিলেন, 'দিনের শেষে ফুটবল জেতে। যে সাহসী ঈশ্বর তার সঙ্গ দেয়। আজকের খেলার পরে ম্যান অফ দা ম্যাচ অর্ণব দাস। ধরাকাছা পড়ে বাড়ির পথে। সেই বাড়িতে যেখানে আর বাবা - মা কেউ নেই। খেলার পরের খাবার সাবু আর ফল। খেলার আগে শুধুই সাবু। যতই খারাপ সময় আসুক, ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব সঙ্গে আছে আর থাকবে।'
Mohun Bagan vs East Bengal: টাকা বাঁচাতেই কল্যাণীতে ডার্বি? বিস্ফোরক অভিযোগ মোহনবাগান কর্তাদের
পুরো দেশকে গর্বিত করবে: শৌভিক
এবার এই পোস্টের সূত্র ধরেই সহানুভূতি জানালেন ইস্টবেঙ্গলের তারকা ফুটবলার শৌভিক চক্রবর্তী (Souvik Chakraborti)। ফেসবুকে শৌভিক লিখেছেন, 'নবাবদার ফেসবুক পোস্ট থেকে তোমার গল্পটা জানতে পারলাম। যদিও আমরা কখনও দেখা করিনি বা কথা বলিনি এবং আজ তুমি বিপক্ষে ছিলে, তবুও তোমার প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা আছে। খুব কম খেলোয়াড়ই এই ধরণের মানসিকতা ধারণ করে। আমি সত্যিই আশা করি তুমি সেই খেলোয়াড় হয়ে উঠবে যা তুমি হওয়ার কথা এবং তোমার মা, বাবা এবং পুরো দেশকে গর্বিত করবে। দৃঢ় থাকো এবং তোমার যাত্রায় বিশ্বাস রাখো! তোমাকে শুভেচ্ছা।'
East Bengal Transfer Update: ঘর ভাঙল ইস্টবেঙ্গলের, শত্রু শিবিরে যোগ দিলেন তারকা ফুটবলার
গত রবিবার (১৩ জুলাই) অর্ণবের জীবনে নেমে আসে চরম দুঃসংবাদ। মা চলে যাওয়ার পর শিমুরালির এই তরুণ ফুটবলারের কাছে গোটা পৃথিবীটাই কার্যত থমকে গিয়েছিল। কিন্তু, সোমবার তাঁকে মাঠে দেখতে পেয়ে অবাক সকলেই। এসেছেন অনুশীলনে। কী কঠিন মানসিকতা থাকলে বুটজোড়া গলিয়ে মাঠে নামা যায়, সেটা দেখিয়ে দিলেন অর্ণব। মতি নন্দীর 'স্টপার' উপন্যাসে একটা বিখ্যাত লাইন রয়েছে। 'ব্যালেন্স, কমল, ব্যালেন্স কখনও হারাসনি।' কমল আর অর্ণব যে একই সুতোয় বাঁধা, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়ে গেল। ফুটবলই যাঁদের জীবন, ব্যালান্স তো তাঁদের রাখতেই হবে।