Advertisment

দ্রাবিড় শিষ্যকে আজ ফাইনালে আউট করাই চ্যালেঞ্জ ভারতীয়দের

সেমিফাইনালে কাটায় কাটায় ১০০ করার পরই আউট হয়ে গিয়েছেন জয়। ম্যাচের শেষ দিকে এভাবে যে আউট হওয়া উচিৎ হয়নি এটা নিয়ে আফসোসও ঝরেছে তাঁর কন্ঠে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Team India and Joy

ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অস্ত্র জয় (ক্রিকেটারের টুইটার)

গল্পটা মিলে যায় ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি মাষ্টার ব্লাস্টার শচীন টেন্ডুলকারের জীবনের সঙ্গে। ভাইয়ের ক্যারিয়ার গড়ে দিতে নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছিলেন অজিত তেন্ডুলকর। শচীন-অজিতের কাহিনীই এবার পদ্মাপাড়ের ক্রিকেটে। সেমিফাইনালে কিউয়ি ব্রিগেডকে যে একার হাতে হারিয়ে রাতারাতি বিশ্বক্রিকেটের নজরে চলে এসেছেন, সেই মাহমুদুল হাসান জয়ের গল্পটা সেরকমই।

Advertisment

তাঁর চেয়ে বছর দশেকের বড় হবেন বড় ভাই রাশেদুল হাসান জুমন। এমবিএ শেষ করে এখনো বেকারের খাতা থেকে নাম কাটতে পারেননি। এমন নয় চাকরি পাচ্ছেন না। আসলে ছোট ভাই মাহমুদুল হাসান জয়ের যে তিনি ছায়াসঙ্গী। ছোট ভাইয়ের দেখভালের পুরো দায়িত্ব তার ওপরে। ব্যাংকার বাবা ইচ্ছা থাকলেও সময় দেওয়ার উপায় নেই। তাই ছোট ভাইয়ের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন বড় ভাই। যার জন্য চাকরি অফার পেয়েও সেগুলো ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে রাশেদুল হাসান জুমনকে।

আরও পড়ুন বিশ্বকাপে ফাইনালে ভারত বনাম বাংলাদেশ! কোন চ্যানেলে কখন চোখ রাখবেন

২০১২ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ভর্তি হন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি মেরে বাংলাদেশকে ফাইনালে তোলা মাহমুদুল হাসান জয়। তারপর থেকেই ছোট ভাইয়ের পেছনে আঠার মতো লেগে আছেন বড় ভাই। রাশেদুল হাসান জুমুন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র ফোন পেয়ে বলছিলেন, "এক কথা বলতে পারেন আমি ওর ছায়াসঙ্গী। আমাকে ছাড়া ও এক পা হাঁটবে না। আমার স্বপ্ন মানে ওর স্বপ্ন। আমি ওকে বলেছি, ভাই তুই আমাদের স্বপ্ন পূরণ করবি। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলবি।’ হাশিম আমলা, বিরাট কোহলিদের মতো হবি যেন গোটা ক্রিকেট দুনিয়া তোকে রোল মডেল ভাবে।"

Mahmudul Hasan Joy ব্যাট হাতে লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন (ক্রিকেটারের ফেসবুক)

বড় ভাইয়ের ত্যাগ বৃথা যেতে দিচ্ছেন না বাংলাদেশের নতুন সেনসেশন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে দুরন্ত ছন্দে আছেন তিনি। ইংল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১০৯ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন। শুধু সেই সিরিজেই নয় শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপ এবং ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। সেই ফর্মই তিনি টেনে নিয়ে গেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। যদিও শুরুর দিকে নড়বড়ে ছিলেন। কিন্তু কোচ জয়ের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন। যার প্রতিদান দিলেন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি মেরে।

আরও পড়ুন নজরে বিশ্বকাপ ট্রফি! শর্ট পিচড বলে বাংলাদেশকে কাত করতে চায় ভারত

ক্রিকেটের বেসিক পাঠ জয় বড় ভাইয়ের কাছ থেকেই নিচ্ছেন। সেটা দক্ষিণ আফ্রিকাতেও অব্যাহত রেখেছেন। ম্যাচের আগের রাতে নিয়ম করে বড় ভাইকে ফোন করেন জয়। রাশেদুল হাসান জুমুন বলছিলেন, "ও ম্যাচের আগের রাতে ফোন জমা দেওয়ার আগে আমার সঙ্গে কথা বলে। আমি ওকে সবসময় বলি, বাউন্ডারি মারার মানসিকতা আগে ত্যাগ করতে হবে। আগে তুই স্ট্রাইক রোটেট করে একটা জায়গায় যাবি। তারপর বাউন্ডারি মারার চিন্তা করবি।"

Mahmudul Hasan Joy ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাটিং করা জয়ের অন্যতম অস্ত্র (ক্রিকেটারের ফেসবুক)

মাহমুদুল হাসান জয়ের খেলাতেও মারকাটারি স্বভাব নেই। অনেকটাই ধীরস্থীর। এর কারণটা বোঝা গেল তাঁর ভাইয়ের পরের কথায়। জয়ের আদর্শ যে ভারতের ‘দ্য ওয়াল’ রাহুল দ্রাবিড়। রাশেদুল হাসান জুমুন বলছিলেন, "ও রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ব্যাটিং করতে চায়। ওর আদর্শও দ্রাবিড়। উনি যেভাবে স্ট্রাইক রোটেট করে খেলতে পছন্দ করতেন জয়ও তাই।"

আরও পড়ুন ধোনির মতোই ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশার! এই তারকাকেই ফাইনালে ভয় ভারতের

সেমিফাইনালে কাটায় কাটায় ১০০ করার পরই আউট হয়ে গিয়েছেন জয়। ম্যাচের শেষ দিকে এভাবে যে আউট হওয়া উচিৎ হয়নি এটা নিয়ে আফসোসও ঝরেছে তাঁর কন্ঠে। এ নিয়ে বড় ভাই বলে গেলেন, "ম্যাচে আমার চোখে ওর কিছু ভুল ধরা পড়ছে। ওকে আমি সেই ভুলগুলো নিয়ে বলেছি। পরের ম্যাচে যাতে এই ভুলগুলো না হয়। এটা শুধরে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। বেশি কথা বলি না। কারণ বেশি কথা বললে হয়তো চাপ নেবে। শুধু এটুকু বলেছি, ‘তুমি বলের লোকেশন না দেখেই রান নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছ।’ এ ব্যাপারে ওকে সতর্ক থাকতে বলেছি।"

তিনি বলেই চলেছিলেন, "৭০-এর ওপরে যখন ওর রান তখন অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল কাট শট খেলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ব্যাটে বলে হয়নি। এগুলোর দরকার ছিল না। যেহেতু রাহুল দ্রাবিড় ওর আদর্শ। উনি এমন একজন ব্যাটসম্যান ছিলেন যিনি কখনো বিট হতেন না। উনার নিয়ন্ত্রণের বাইরের বলগুলো ছেড়ে দিতেন। কখনো বিট হতেন না। আর বলছি যে, আরেকটু তোমার ধৈয্য ধরে ম্যাচটা শেষ করে আসা উচিৎ ছিল।"

আরও পড়ুন ভারতের বিরুদ্ধে বারেবারেই হার! বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রতিশোধের স্বপ্ন বাংলাদেশের

ফাইনাল এবং ভারত। এ দুটোই এখন বাংলাদেশের জন্য আতঙ্কের নাম। গত কয়েক বছর হলো বাংলাদেশের ফাইনাল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত। শিরোপা জয়ের খুব কাছে গিয়ে বাংলাদেশকে ফিরতে হচ্ছে শূন্য হাতে। তবে মাহমুদুল হাসান জয় ফাইনালে ভারতকে নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবছেন না। ইংল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে এই ভারতের বিপক্ষেই সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। বড় ভাই রাশেদুল হাসান জুমুন বলে গেলেন, "ভারত ম্যাচ নিয়ে ওর কোনও ভয় নেই। ইংল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ও সেঞ্চুরি করেছিল। দূর্ভাগ্যবশত বোলারদের কারণে ম্যাচটা বাংলাদেশ হেরে যায়।"

আরও পড়ুন ভারত অপরাজেয় নয়, ওদেরও হারানো সম্ভব! ফাইনালের আগে হুংকার বাংলাদেশের ‘বিগ বসে’র

মাহমুদুল হাসানের এই ধারাবাহিকতার পেছনে পারিবারিক একটা শিক্ষাও দারুনভাবে ভুমিকা রাখছে। বড় ভাই জানালেন, "ও আমাদের কথার বাইরে যায় না। আমার মায়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। ম্যাচের আগে ভোরে উঠে ফজরের নামায আদায় করে। তারপর মাঠে যাওয়ার আগেও আমাদের পরিবার থেকে কিছু জিনিস পালন করতে বলা হয়, সেগুলো করে যায়।"

কোন ফরম্যাটে মাহমুদুল হাসান জয় বেশি স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বড় ভাই বলে চলেন, "ওর মধ্যে সৃষ্টিকর্তা এমন একটা বুদ্ধি দিয়েছে যে টি-টোয়েন্টি খেললে কী রকম, ওয়ানডে বা টেস্ট খেললে কেমন ব্যাটিং করতে হবে সেটা ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে করতে পারে। ও পরিস্থিতি বুঝে সবকিছু করে।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
https://t.me/iebangla

Bangladesh Cricket World Cup
Advertisment