টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছিল। নতুনত্ব আমদানি করার জন্য আইসিসি দিন-রাতের টেস্ট চালু করে। ২০১৬ সালে গোলাপি বলে ফ্লাডলাইটে প্রথম টেস্ট খেলে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ভারত অবশ্য প্রথমে গোলাপি বলে টেস্ট খেলা নিয়ে সন্দিহান ছিল। তাই এতদিন দিন-রাতের টেস্ট নিয়ে রক্ষণশীল মানসিকতাই বজায় রেখেছিল ভারত। গত বছরেও বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দিন-রাতের টেস্টের প্রস্তুতি সারতে কমপক্ষে আরও ১৮ মাস প্রয়োজন।
অবস্থার পরিবর্তন হয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিসিসিআইয়ের সভাপতি হওয়ার পরে। সৌরভ প্রথম থেকেই ক্রিকেটে নতুনত্ব আমদানি করার পক্ষপাতী। সিএবি সভাপতি হয়ে সুপার লিগ ফাইনালে গোলাপি বলের টেস্ট খেলা চালু করেন তিনি।
আরও পড়ুন মমতা ও হাসিনা ঘণ্টা বাজিয়ে শুরু করবেন ইডেন টেস্ট
সিএবি সভাপতি হিসেবে গোলাপি বলের মকশো আগেই সেরে ফেলেছিলেন। এবার বোর্ড সভাপতি হিসেবে আর দেরি করেননি সৌরভ। অক্টোবরে বোর্ড প্রেসিডেন্ড হওয়ার পরেই দিন-রাতের টেস্ট আয়োজন করতে উদ্যোগী হন। কোহলির সম্মতি নিয়েই ইডেনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে গোলাপি বলের টেস্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন সৌরভ।
সৌরভ জানিয়েছিলেন, দিন-রাতের টেস্টে সাধারণ টেস্টের তুলনায় দর্শক অনেক বেশি আসবেন। সেই ধারণা সত্যি প্রমাণ করেই ইডেন টেস্টের টিকিটের জন্য হাহাকার শহরে। টিকিট বুভুক্ষু ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্টেডিয়ামের আশে পাশে।
আরও পড়ুন হাসিনাকে জানানো উচিত ছিল শাকিবের, সাফ জানাচ্ছেন বাংলাদেশের মন্ত্রী
জেনে নেওয়া যাক গোলাপি বলের ইতিবৃত্ত-
১) নভেম্বরের ২২ তারিখে কলকাতা ভারতের প্রথম টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করতে চলেছে। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ।
২) ১৯৯৪ সাল থেকে ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া সমস্ত টেস্টে এসজি বলে খেলা হয়েছিল। এই টেস্টে চিরাচরিত কোকাবুরা সাদা বল নয়, খেলা হবে এসজি গোলাপি বলে।
৩) মেরুটে এসজি বল প্রস্তুতকারক কারখানায় আগেই নির্দেশ চলে গিয়েছিল ইডেন টেস্টের আগে বল সাপ্লাই করতে।
আরও পড়ুন দাদি-ই করে দেখাল, বলছেন মোহনবাগানে খেলা দেশের প্রথম ‘গোলাপি’ ক্রিকেটার
৪) গুরুর অপরিশুদ্ধ চামড়ার চারটি স্তর দিয়ে তৈরি হয় গোলাপি বল।
৫) লাল বলের সিম সাদা হয়ে থাকে। তবে ব্যাটসম্যানদের কাছে দৃশ্যমানতা বাড়ানোর জন্য গোলাপি বলের সিম কালো বর্ণের হয়ে থাকে।
৬) খেলা শুরু হবে ১টা থেকে। শেষ হবে ৮টা নাগাদ। রাত ৮টার পরে মাঠে শিশিরের পরিমাণ বাড়বে, সেই কারণে খেলা পিছিয়ে আনা হয়েছে।
৭) ইডেন টেস্ট হতে চলেছে গোলাপি বলের টেস্টের ইতিহাসে ১২তম ম্যাচ।
৮) গোলাপি বলে সবথেকে সফলতম দল অস্ট্রেলিয়া। পাঁচটি ম্যাচ খেলে পাঁচটিতেই জয় পেয়েছে অজিরা। সাফল্য়ের হার শতকরা ১০০ শতাংশ।
৯) এই তালিকায় দ্বিতীয় সফলতম দল শ্রীলঙ্কা। তিনটে ম্যাচে অংশ নিয়ে দুটোতে জয় লাভ করেছে লঙ্কান ব্রিগেড।
১০) সবথেকে খারাপ পরিসংখ্যান ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তিনটে ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছে তারা।
১১) গোলাপি বল কেমন ব্যবহার করবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেক ক্রিকেটারই। ইন্ডিয়া ব্লু দলের কোচ আশিস কাপূর জানিয়েছেন, শিশির ভেজা গোলাপি বল অনেকটা হাতে ভেজা সাবান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মতো।
১২) গোলাপি বলে খেলা অভিজ্ঞতা থাকা বেশ কিছু ভারতীয় ক্রিকেটার জানিয়েছেন, নতুন বলে এই বল একটু বেশিই সুইং করে। তবে পুরনো হয়ে যাওয়ার পরে প্রত্যাশিত রিভার্স সুইং পাওয়া যায় না এই বলে।
১৩) রবিচন্দ্রন অশ্বিন জানিয়েছেন, "গোলাপি বলে খেলাটা চ্যালেঞ্জের হতে চলেছে আমাদের কাছে। এই বলে একটু বেশি পরিমাণে থকথকে পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এই বলে এখনও বোলিং করে দেখিনি। কেবল দেখেইছি। কখনও কখনও বুঝতে পারি না, বলের রং সত্যিই গোলাপি নাকি কমলা।"
১৪) চেতেশ্বর পূজারার মতো দলীপ ট্রফিতে খেলা অনেক ক্রিকেটারই এই বলে খেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।
আপাতত চোখ ইডেনে। স্বর্গ্যদ্বানে গোলাপি বলে প্রথম খেলাতেই বাজিমাত করে কোন দল, সেটাই দেখার।