একজন ক্রিকেটের ঈশ্বর। অন্যজন সাক্ষাৎ ফুটবলের রাজপুত্র। ঈশ্বরের বরপুত্র তো বটেই। মারকানা আর ওয়াংখেড়ের দূরত্ব গুগলের তথ্য অনুযায়ী, ১৩,৪০৫ কিমি। তবে রবিবার সকাল মিলিয়ে দিল দুই গোলার্ধের দুই শহরকে। আর ফুটবল আবেগে যেন মিশে গেলেন ভারত আর আর্জেন্টিনার দুই ধ্রুবতারাও- শচীন এবং মেসি! ওয়াংখেড়ের একটুকরো যেন আবির্ভূত হল ব্রাজিলের ফুটবল রাজধানী মারাকানায়।
কেরিয়ারে খ্যাতির চূড়ায় উঠেছেন দুজনেই। একজন ব্যাট হাতে দুনিয়া শাসন করতেন, অন্যজন ঐশ্বরিক স্কিলে রামধনু আঁকেন সবুজ ঘাসে। ব্যক্তিগত ট্রফিতে ক্যাবিনেট পূর্ণ ছিল। তবে জাতীয় দলের জার্সিতে বিশ্বপর্যায়ের টুর্নামেন্টে সাফল্য কোথায়! এমন অস্বস্তিকর প্রশ্নের সামনে সমানে মুখোমুখি হয়েছেন দুজনে। মাঠে প্রতিপক্ষকে শাসন করে রাজদণ্ড নিজেদের কাছে থাকলেও দেশের জার্সিতে ট্রফি জয়ের অপূর্ণতা যেন পেয়ে বসেছিল তাঁদের।
তবে বিধাতা বোধহয় চ্যাম্পিয়নদের কপালে সযত্নে লিখে দেন, "বেটার লেট দ্যান নেভার।" আর সেইজন্যই পাঁচ বার বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্যক্তিগত স্কিলের ফুলঝুরি ছুটিয়েও কাপ অধরা থেকেছিল শচীন রমেশ তেন্ডুলকর নামের ব্যক্তির।
আরো পড়ুন: চোখের জলে একাকার মেসি-নেইমার! হৃদয় নিংড়ানো দৃশ্যে কাঁদল সবাই, দেখুন ভিডিও
ঠিক একদশক আগের ওয়াংখেড়ের স্বপ্নের রাত শচীনের স্বপ্নপূরণ করে যায়। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ভারত সেবারেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। কি কাকতালীয়! এই ২৮ বছর পরেও তো কোপা জিতল আর্জেন্টিনাও! যেখানে দেশের জার্সিতে ট্রফি খরা কাটালেন বাঁ পায়ের ফুটবল ঈশ্বর।
২০১৪ সালে ফুটবল বিশ্বকাপে রানার আপ। তারপর ২০১৫ এবং ২০১৬-র কোপায় ফাইনালে উঠেও কাপ জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। চোখে জল নিয়ে মেসি দেখেছেন ট্রফি নিয়ে গিয়েছে চিলি। টাইব্রেকার শ্যুট আউটে জালে বল না জড়ানোর কলঙ্ক সইতে না পেরে মেসি অবসরও নিয়ে ফেলেছিলেন। তবে এডগার্ডো বাউজা ফিরিয়ে এনেছিলেন মেসিকে। বিশ্বাস করিয়েছিলেন এখনো ট্রফি জেতার দিন শেষ জয়ে যায়নি। ২০০৭-এ কোপায় ব্রাজিলের কাছেই বিধ্বস্ত করার সময়েও তো তিনি মাঠে ছিলেন!
আরো পড়ুন: ঈশ্বরের হাতেই কোপা! ব্রাজিলকে চূর্ণ করে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা
শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসনে মেসির সঙ্গে বারবার যার নাম উঠে আসে, সেই রোনাল্ডোও দেশকে ইউরোপের সেরা করেছেন বছর পাঁচেক আগে। তিনি পারেননি। রবিবারের আগে সেই দীর্ঘশ্বাসেই যেন পূর্ণচ্ছেদ পড়ল!
অন্যদিকে, শচীনের গল্পও যে একই খাতে বয়ে যাওয়া কাহিনী বলে। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া দেখেছেন সামনে থেকে। ব্যাট হাতে গোটা টুর্নামেন্টে রংমশাল জ্বালালেও ফাইনালেই তার উইলো কথা বলেনি। তারপর ২০০৭-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গ্রুপ পর্ব থেকেই লজ্জার বিদায়। ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনিও। তবে গণ আবেগের সামনে নিজের বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি ভাগ্যিস!
আরো পড়ুন: কোপা চ্যাম্পিয়ন হলেই কোটি কোটির পুরস্কার! ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা পাচ্ছে কত কোটি টাকা
তারপর তো ওয়াংখেড়ের সেই মায়াবী রাত। গোটা দুনিয়ার সামনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সতীর্থদের কাঁধে চেপে বসেছেন। ঠিক রবিবারের মারকানায় মেসির মত। সামনের বছরেই বিশ্বকাপ। কাতারে কি আর একবার আতশবাজি হয়ে উঠতে পারবেন না বিখ্যাত ১০ নম্বর!
কে বলে ফুটবল আর ক্রিকেটের ধর্ম আলাদা! বিধাতা যে চ্যাম্পিয়ন বেছে নেন শেষদিন হলেও।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন