গৌতম সরকার: সত্যি কথা বলতে আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে বুধবারের পর। যে ছেলেগুলো আমাদের খেলার অনুপ্রেরণা, যাঁরা আমাদের খেলা দেখতে মাঠে হাজির হয়, বুধবার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুলিশের কাছে হেনস্থার, মারধোরের খবর পেয়ে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। ক্লাবকে ভালোবাসার জন্য যখন তাঁদের লাঠিপেটা হজম করতে হয়, এর থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু নেই।
তবে প্রশাসনকেও আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট হতে হয়। আমাদের এমন কিছুই করা উচিত নয় যেখানে প্রশাসন আমাদের শাস্তি দিতে বাধ্য হয়।
আরও পড়ুন খুনের হুমকি পাওয়া সমর্থকের জন্য কড়া বার্তা ফাউলারের! মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সমর্থকরা
তবে সকল ফুটবলপ্রেমীকে বুঝতে হবে, আজকের মত অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্ম হল কেন! এতদিন ধরে অচলাবস্থা চলছে, ট্রফি নেই, অত্যন্ত নিম্নমানের ফুটবলারদের ধরে লাল হলুদ জার্সি পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা কি সার্কাস হচ্ছে?
যাঁরা ক্লাবের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন, তাঁদের তো কিছু দাবি দাওয়া থাকবেই। বর্তমান ক্লাব কর্তাদেরও নমনীয় হতে হবে। এখানে পেশিশক্তি কিংবা ক্ষমতার আস্ফালন করে লাভ নেই। কারণ ইস্টবেঙ্গল যদি না খেলে, তাহলে তার থেকে লজ্জার আর কিছুই নেই।
আরো পড়ুন: ক্লাবের সামনেই মারামারি লাল-হলুদের দুই সমর্থক গোষ্ঠীর, শতবর্ষে লজ্জার সাক্ষী ইস্টবেঙ্গল
এখনো জ্বলজ্বল করছে ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবরের বাড়ির সেই স্মৃতি। আমাকে, সুধীরকে (কর্মকার), প্রদীপ দাকে (বন্দ্যোপাধ্যায়) দেখিয়ে উনি বলছিলেন, "এই বাচ্চা দুটো পোলাপান খেলতে পারব?" ক্লাব কত গৌরবোজ্জ্বল সময় পেরিয়ে এসেছে। বিখ্যাত ক্লাবেদের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে। আমরা আশিয়ান জিতেছি। সেই ঐতিহ্যই তো এবার ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে বসেছে। এখন কলকাতা লিগ, আইএসএল খেলবে না- এটা ভাবতে গেলেই বুক উথলে কষ্ট আসছে।
আজকে হঠাৎ ক্লাবকর্তারা প্রাক্তনদের ডেকে পাঠাচ্ছে চুক্তিপত্র দেখার জন্য। তাহলে যেদিন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সই হল, সেদিন কেন প্রাক্তনদের ডেকে পাঠানো হল না! এখন কেন প্রাক্তনদের টার্মশিট দেখানোর জন্য ওঁরা পাগল হয়ে যাচ্ছে। এখন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন? উনি ফুটবলের বিষয়ে কতটা বোঝেন জানা নেই! তবে ক্লাবকর্তারা নিজেদের ইচ্ছেমত যাঁকে খুশি ডেকে পাঠাতেই পারেন, সেই বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই আমার।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গর্বের ইতিহাসে আমার একফোঁটা হলেও অবদান রয়েছে।অবিলম্বে ফুটবল দল যাতে মাঠে নামে কর্তাদের তা দেখা উচিত।
সমর্থকরা গদি, ক্ষমতা বোঝে না। ওঁরা চায় দল ফুটবল খেলুক। ধৈর্য্যের চরম সীমায় পৌঁছে, বারবার অপমানে দগ্ধ হয়েই ওঁরা রাস্তায় নেমেছে আজ। আর ওঁদের ওপরেই হেনস্থা। ওদের দুঃখ কে ভাগ করে নেবে? এই ঘটনা সকলের কাছে লজ্জার, দুঃখের এবং কষ্টের।
দ্রুত ক্লাবের অচলাবস্থা কাটিয়ে দুই পক্ষকে আলোচনা বসতে হবে। এর আশু সমাধান প্রয়োজন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন