Advertisment

ডগলাস না থাকলে বাঁচতাম না! এরিকসেনকে দেখে পুরোনো ক্ষত ফের দগদগে মৃত্যুঞ্জয়ী দেবজিতের

মাঠের মধ্যে মৃত্যুকে হারিয়ে ফিরে এসেছেন অনেকেই। এরিকসেনের মতই ভারতীয় ফুটবলেও রয়েছে এমন নজির। দেবজিৎ ঘোষ এশিয়ান কাপ খেলতে গিয়ে জাকার্তার সেই ঘটনা আর মনে রাখতে চান না।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

২১ শে জুলাই। এখনো শিউরে তোলে, বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয় তাঁর। ভুলে যেতে চাইলেও দেবজিৎ ঘোষ হয়ত ভুলতে পারেন না সেই স্মৃতি। ফুটবল খেলতে গিয়েই পুনর্জন্ম হয়েছিল লাল হলুদ ডিফেন্ডারের। ভাগ্যিস ডগলাস দ্য সিলভা ছিলেন তাঁর পাশে! না হলে, কী যে হত, ভাবতেই পারেননা দেবজিৎ ঘোষ।

Advertisment

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন মাঠের মধ্যেই লুটিয়ে পড়েছিলেন। ২৪ ঘন্টাও কাটেনি। ইউরোর মাঠ তারপর থেকেই এরিকসেনের জন্য প্রার্থনার মঞ্চ হয়ে উঠছে। লুকাকু গোল করে বলে দিচ্ছেন, "ক্রিস, আই লাভ ইউ।" জার্মানি স্কোয়াড থাম্বস আপ সাইন দেখিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সতীর্থরা বৃত্ত রচনা করে তারকা মিডফিল্ডারের গোপনীয়তা রচনা করেছেন। দর্শকরা ছুঁড়ে দিচ্ছেন ফ্লেক্স, চোখে জল এনে দেওয়ার মত এই ফুটবল-বিজ্ঞাপনে ভারাক্রান্ত ফুটবল বিশ্ব।

আরো পড়ুন: গোল করে এরিকসেনের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়লেন! হৃদয় গলানো কীর্তি লুকাকুর, ভিডিও দেখুন

আর এরিকসেনের এই মাটিতে শুইয়ে পড়ার দৃশ্যই দেবজিৎ ঘোষকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আঠারো বছর আগের দুঃস্বপ্নের পৃথিবীতে। যতবারই মাঠে মৃত্যুর মুখোমুখি হন কোনো ফুটবলার, পুরোনো ক্ষত যেন দগদগে হয়ে ধরা হয় তাঁর কাছে। সেই স্মৃতি অনেকটাই ঝাপসা হয়ে এসেছে তাঁর কাছে। কারণ সংজ্ঞাই যে হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি! পরে সুস্থ হয়ে দেখেন মাঠে কীভাবে আছড়ে পড়েছিলেন।

publive-image

এরিকসেনের ঘটনা টাইম মেশিনে চাপিয়ে যেন দেবজিৎকে নিয়ে যাচ্ছে এশিয়ান কাপ জয়ের বছরে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সেই অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে কিছুটা নিস্পৃহ ভাবেই তিনি বলছিলেন, "আমি আর ডগলাস-দুজনে আলাদা হাফে খেলছিলাম। ওদের গোলকিপার একটা লম্বা কিক নিয়েছিল। ডগলাস আর আমার মধ্যে কমিউনিকেশন দুর্দান্ত ছিল সেই সময়ে। লম্বা বল আমাদের অর্ধে ভেসে আসতেই ডগলাস আমাকে কল করে। আমি বল দখলে আনার জন্য লাফিয়ে হেড নিয়ে গিয়েছিলাম। তবে ওদের এক ফুটবলারের পায়ে আঘাত পেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়ি। যদিও ইচ্ছাকৃতভাবে ও আঘাত করেনি।"

আরো পড়ুন: হৃদরোগে আক্রান্ত ফুটবলার মাঠেই লুটিয়ে পড়লেন, ইউরোর ম্যাচে ভয়ঙ্কর কান্ড

publive-image

তারপর রোমহর্ষক এক পর্ব জাকার্তার মাঠে। ডগলাস নিজের সীমিত জ্ঞান নিয়েই ছুটে আসেন বন্ধুকে বাঁচানোর ব্রত নিয়ে। মুখে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস দিয়ে চালু রাখেন বায়ু সরবরাহ। দাঁতে দাঁত যাতে না লাগে সেটাও নিশ্চিত করেন ব্রাজিলীয় তারকা। প্রতিপক্ষের একজন দেবজিতের বুকে পাম্প করতে থাকেন। প্রাথমিক শুশ্রূষার পরেই দেবজিৎকে নিয়ে যাওয়া হয় জাকার্তার এক হাসপাতালে।

publive-image

ডগলাসকে ফোনে ধরা হলে এখনো সেই স্মৃতিতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। সাও পাওলোর বাড়ি থেকেই ডগলাস বলতে থাকেন, "বিশ্বাস করুন, ওই ঘটনার আগে কোনোদিন সিপিআর দিই নি। হঠাৎ সেই মুহূর্তে যেন ঈশ্বর ভয়ঙ্কর পরীক্ষার মধ্যে আমাকে ফেলে দিয়েছিলেন। আমি যতটা সম্ভব চেষ্টা করি। জানি না, আমি না থাকলে কী হত! শান্তিদার সঙ্গে সেদিন ডেকাড্রন ইঞ্জেকশন ছিল সৌভাগ্যবশত। আমি সেগুলো তৎক্ষণাৎ দিতে বলি।"

ডগলাস, আর ইস্টবেঙ্গলের চিকিৎসক কর্তা শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত- দুজনেই সেই মাঠে যেন ঈশ্বরের দূত হিসাবে আবির্ভূত হন। দেবজিৎ সেই ঘটনা ভুলে যেতে চাইলে কী হবে, লাল হলুদের অন্যতম শীর্ষ কর্তা ফোনে সেই ঘটনা জানাতে গিয়েই কেঁপে উঠল, "মর্মান্তিক ঘটনা! আমি সাধারণত ডেকাড্রন ইঞ্জেকশন সঙ্গে রাখি সবসময়। সেই ইনজেকশন যে সেভাবে কাজে লাগবে, কী করে জানব! সেদিন ঘটনা ঘটার ৩ মিনিটের মধ্যে তা পুশ করা হয়েছিল। সাধারণত এরকম ঘটনার ক্ষেত্রে খুব বেশি হলে ৪ মিনিটের মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা চালু করে দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হলে ব্রেন ডেথ হয়ে যায়।"

"আমাদের দেশে ফুটবলারদের এখনো সিপিআর-এর প্রশিক্ষণ দেওয়া থাকে না। বিদেশে কিন্তু রেফারি, লাইন্সম্যান থেকে ফুটবলার সবাইকেই আপদকালীন এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ব্রাজিলের ফুটবলাররাও এটা ভালোভাবে জানে। ভাগ্যিস সেদিন ডগলাস ওঁর কাছাকাছি ছিল। আসলে ফুটবলার মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর তা বুঝতে, ডাগ-আউট থেকে নির্দিষ্ট স্থানে ফিজিওকে যেতে- অনেকটাই সময় পেরিয়ে যায়। তাই ফুটবল মাঠের সকলকেই এই জিনিস শিখে রাখা উচিত।" এক নিঃশ্বাসে বলতে থাকেন শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত।

publive-image

এরিকসেন কি আর মাঠে ফিরবেন! সংশয়ের দোলাচল ফুটবল বিশ্বে। তবে লাল হলুদ কর্তা নিজের চিকিৎসার "অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, কেন ফিরতে পারবে না! সাধারণত, হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে বিশেষ কোনো জটিলতা না পাওয়া গেলে কিছুক্ষণ পরেই রিলিজ করে দেওয়া হয়। আর এরিকসেনের মত শীর্ষস্থানীয় ফুটবলাররা যে কিনা টটেনহ্যাম, ইন্টার মিলানের মত দলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেখানে এটা কোনো সমস্যাই নয়। কারণ বিদেশের ক্লাবে শারীরিক সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখেই ক্লাবে সই করানো হয়।" আর ভারতীয় ফুটবলের প্রাক্তন 'এরিকসেন', দেবজিৎ সেই বিভীষিকার উপত্যকা পেরিয়ে বলে দিচ্ছেন, "আলবাত ফিরবে ও। আমি তো সেই ঘটনার পরে সেমিফাইনালেও নামতে চেয়েছিলাম।"

দেবজিৎ, এরিকসেনরা মৃত্যুঞ্জয়ীর বেশে ফিরলেও মাঠের সবুজ ঘাসেই অবশ্য হারিয়ে গিয়েছেন শত শত তারকা। ঝরে গিয়েছেন কুড়ি হয়ে ফোঁটার আগেই। যেমন জুনিয়র। গোলকিপার সুব্রত পালের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে মাঠেই বুক চেপে শুয়ে পড়েন। কেউ দেয়নি সিপিআর, চেস্ট পাম্প!। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বেঙ্গালুরুর মাঠে সব শেষ!

দেবজিৎ, এরিকসেনদের মত সবাই উঠে দাঁড়াতে পারেন না মৃত্যুর প্রান্তরে। কেউ কেউ হারিয়ে যান আক্ষেপ হয়ে। চিরতরে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

East Bengal Indian Football Euro Cup
Advertisment