ভেনেজুয়েলার লরা বিওন্ডো কি উত্তর ২৪ পরগনার বিপাশা বৈষ্ণবকে চেনেন? মহিলা ফুটবল জাগলার হিসেবে লরার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। লরা না-চিনলে হয়তো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চিনে যাবেন। কারণ, ইতিমধ্যেই লিমকা বুক অফ রেকর্ডস, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের মতো বেশ কিছু রেকর্ড বিপাশার ঝুলিতে।
এবার লক্ষ্য গিনেস বুকে নাম তোলা। সেই জন্য প্রস্তুতিও চালাচ্ছেন গুমার বছর ১৮-র মেয়েটি। উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছেন এবছর। কিছুদিনের মধ্যে ফল বেরোবে। কিন্তু, সেসব জীবনের একটা দিক। বিপাশা স্বপনে, শয়নে, জাগরণে জড়িয়ে আছেন ফুটবলের সঙ্গে। বলা ভালো ফুটবল জাগলিংয়ের সঙ্গে।
বাবা বিনয়কৃষ্ণ বৈষ্ণব দিনমজুর। বাড়িতে ছোট একটা মুদি দোকান আছে। কাজের ফাঁকে কখনও বিপাশা, কখনও বা তাঁর মা দোকানটা চালান। তার মধ্যেই চলে লেখাপড়া। চাকরির জন্য কমপিউটার কোর্সও করছেন। কিন্তু, এতকিছুর পরও ফুটবল জাগলিংয়ের সঙ্গে তাঁর আপসহীন সদ্ভাব।
ঘুমোতে যাওয়া ফুটবল নিয়ে। ঘুম ভেঙে বিছানা থেকে ওঠাটাও শুরু হয় জাগলিং-এর মধ্যে দিয়েই। এরপর দৈনন্দিন যত কাজ, তার বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই দেখা যায় ফুটবল বিপাশার সঙ্গেই আছে। হয় মাথায়, নয় ঘাড়ে, নতুন পায়ের পাতায়। যা মাটি ছুঁচ্ছে না। বিপাশার শরীরের ছোঁয়ায় কখনও মাথা থেকে পা, কখনও আবার পা থেকে মাথায় ঘুরছে।
আরও পড়ুন ডালমিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেই বাংলাকে বাইবাই! শেষবেলায় ফোঁস করে উঠলেন IPL চ্যাম্পিয়ন ঋদ্ধি
স্কুলে যাওয়া, কমপিউটার শিখতে যাওয়া, এরকম দু'-একটা কাজ বাদ দিলে, জাগলিং গোটা দিন এভাবেই বিপাশার জীবনের অঙ্গ হয়েই থাকে। মেয়েটার মধ্যে যে বড় ফুটবল জাগলার হওয়ার সম্ভাবনা আছে, ছোটবেলায় দেখেই চিনতে পেরেছিলেন সুব্রত রায়। বিপাশা তখন পাঁচ। পাড়ার রেনেসাঁ ক্লাবের মাঠে ছেলেরা ফুটবল খেলত। সেটাই মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে দেখত একরত্তি মেয়েটা।
সেই থেকেই ফুটবল প্রীতি। তারপর সুযোগ পেয়ে একটু আধটু চর্চার চেষ্টা। বাড়ির পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন সুব্রত রায়। ওইটুকু মেয়ের ফুটবল স্কিল দেখে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। একেবারে যেচেই বিপাশার মা-বাবাকে বলেছিলেন, 'এই মেয়ের মধ্যে ফুটবল জাগলার হওয়ার গুণ আছে। আমি ওকে শেখাব।'
আরও পড়ুন সৌরভের ভবিষ্যৎ জানিয়ে দিলেন জয় শাহ, সমস্ত আগুনে জল ঢাললেন এক বার্তাতেই
টানাটানির সংসার। তার মধ্যে আবার ফুটবল জাগলিং! সেটা যে কী বস্তু, তখন মাথায় ঢোকেনি বিপাশার মা-বাবার। তবে, মেয়ে একটা কিছু শিখবে। ওর প্রতিভা আছে। এই কথাগুলো তাঁদের মন ছুঁয়েছিল। সুব্রত রায়ের কাছে শিখতে পাঠিয়েছিলেন। আজ সেই প্রতিভাই আকাশ ছুঁয়েছে। রাজ্যের কন্যাশ্রী কাপের ফাইনালে তাঁর জাগলিং দেখে মুগ্ধ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
এসেছে একের পর এক রেকর্ড। তবু বিপাশার খেদ, 'ইস্! গিনেস বুকের রেকর্ডটা একটুর জন্য হল না।' হয়েও যেত। ডেনমার্কের এক ব্যক্তি ৫৭ বার সিট আপ করা অবস্থায় ফুটবল নিয়ে জাগলিং করেছেন। তাঁর নাম আছে গিনেসে। বিপাশা সেখানে ১২৭ বার একই জিনিস করেছেন। কিন্তু, অনলাইনের আবেদন গ্রহণ করেনি গিনেস।
আরও পড়ুন- মুম্বইয়ে বারবার বঞ্চিত অর্জুন! শচীন পুত্রকে নিয়ে এবার বড় বার্তা কপিলেরও
এগুলো লাইভ করতে হয়, যার প্রচুর খরচ। সেই সামর্থ্য নেই হতদরিদ্র বিপাশার। যেটুকু আছে, সেটা প্রতিভার জোর। আর, সেই জোরেই এখন তাঁর পাখির চোখ লরা বিওন্ডোদের পাশে জায়গা করে নেওয়া। অথবা তাঁদের ছাপিয়ে যাওয়া।