পানিপথের ছেলে নীরজ চোপড়ার কীর্তিতে গর্বিত গোটা দেশ। পুরুষ জ্যাভেলিন বিভাগে ঐতিহাসিক সোনা জিতেছেন নীরাজ চোপড়া। তার এই ঐতিহাসিক কৃতিত্বের সেলিব্রেশনে এখনও মাতোয়ারা সারা দেশ। ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিক্সে অভিনব বিন্দ্রার পর অলিম্পিক্সের মঞ্চ থেকে দেশকে সোনা এনে দিয়েছেন কোনও ক্রীড়াবিদ। পাশাপাশি স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টে এই প্রথম কোনও খেলোয়াড় দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে হলেন বিশ্বসেরা। কেরিয়ারের প্রথম অলিম্পিক্সে নেমেই জ্যাভলিনের ফাইনালের মঞ্চে ৮৭.৫৮ মিটার ছুড়ে ভারতের জন্য ঐতিহাসিক সোনা জিতেছেন নীরজ।
ইতিহাস সৃষ্টির পর থেকেই নীরজকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমান বন্দরে হাজির হন অগুনিত ভক্ত। এদিকে গোটা দেশ যখন পদক জয়ের আনন্দে গা ভাসিয়ে দিয়েছে, তখন দেশের সীমানা অতিক্রম করে দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির প্রত্যন্ত গ্রামেও সেই সেলিব্রেশনের রেশ। কিভাবে? আসুন জানা যাক।
দক্ষিণ পশ্চিম জার্মানির ওবার্সলেটেনবাক অঞ্চলের ছোট্ট গ্রামে এখনও নীরজ চোপড়ার অলিম্পিকে জ্যাভেলিন ফাইনালে স্বর্ণপদক জয়ের উদযাপনে চলছে। অবাক করার হলেও এমনটা সত্যি।
আরও পড়ুন: প্রবল অসুস্থ সোনার ছেলে নীরজ! দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়ল বাবা-মার
এর কারণ এই বিশাল সাফল্যের পিছনে থাকা মানুষটি আর কেউ নন, তিনি হলেন ডক্টর ক্লাউস বার্টোনিটজ। যিনি এই ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর অন্য এক পরিচয়ও রয়েছে।
বার্টোনিটজ ছিলেন টোকিও অলিম্পিকে নীরজের কোচ এবং বায়োমেডিক্যাল বিশেষজ্ঞ। তার কথায়, "গ্রামে ফিরে আসার পর থেকেই অসংখ্য ফোন পেয়েছি। সকলেই অভিনন্দন জানিয়েছেন" যারা অলিম্পিকে জাভেলিন গেমস দেখেছিলেন সকলেই শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানিয়েছেন তাকে। এত মানুষের অভিনন্দন পেয়ে রীতিমতো আপ্লুত বার্টোনিটজ।
দক্ষিণ পশ্চিম জার্মানির ছোট্ট গ্রাম ওভারশর্টেনবাখ। বাসিন্দা মাত্র ১৩০ জন। দেশে ফিরে গ্রামে গিয়েই নীরজের বিখ্যাত বায়োমেকানিক্যাল বিশেষজ্ঞ ডক্টর ক্লাউৎ বার্টনিজ অবাক হয়ে গিয়েছেন। দেখছেন, গোটা গ্রামেই যেন তাঁর ছাত্র নীরজকে নিয়ে উৎসব চলছে। নীরজের ঐতিহাসিক ঘটনার ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। আসলে তাঁর ছাত্রের কৃতিত্বে যে অংশীদার তিনিও, তাই তাঁকে এবং নীরজকে কেন্দ্র করেই যত সেলিব্রেশনের বহর।
আরও পড়ুন: এখনও কি সিঙ্গল! গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে বড়সড় আপডেট দিলেন সোনার নীরজ
জার্মান এই কোচ ডা. ক্লাউস বার্টোনিটজ এখন তার গ্রামের একজন সেলিব্রেটির থেকে কম কিছু নন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে কথা বলতে গিয়ে বার্টোনিটজ বলেছেন নীরজ চোপড়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যেভাবে বিজয়ের উদযাপন করেছিলেন, তা দেখে তার প্রতিবেশীরা ব্যাপক মুগ্ধ। তিনি যোগ করেছেন জ্যাভলিন ছোড়ার পর তা কোথায় পড়লো, সেদিকে না দেখেই নীরজ যেন বুঝে যান পোডিয়ামে উঠছেনই। জেতার বিষয়ে এই আত্মবিশ্বাসীই নীরজকে আলাদা করেছে।
ওভারশর্টেনবাখ থেকে বার্টনিজ ইন্ডিয়ান একপ্রেস-কে বলছিলেন, "ভারতের কাছে এটা একটা ঐতিহাসিক পদক। নীরজকে নিয়ে ওখানে কী হচ্ছে, সেটাও অনুমাণ করতে পারি। কিছু ছবি দেখলাম, যে নীরজকে সুরক্ষা দিতে প্যারামিলিটারি ফোর্সকেও ডাকা হয়েছে।"
ভারতীয় জ্যাভেলিন দলের হেড কোচ উই হুন-ও জার্মানিতে নিজের গ্রাম রেইসেনবার্গে ফিরে নীরজের সাফল্যের ঢেউ টের পেয়েছেন। হুন ভারত থেকে ভেসে আসা খবরে বুঝতে পারছেন পদক-বুভুক্ষু একটা দেশের কাছে এই সোনা জয়ের অর্থ কী! যে শহরে তিনি থাকেন, সেখানে বাসিন্দা মেরেকেটে ৮০০০। বাড়িতে ফিরে পরিবার, মা, আত্মীয়স্বজনদের কাছে কেবল নীরজকে নিয়েই কথা বলে চলেছেন। ফেসবুকে শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসে যাচ্ছেন তিনিও।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে তিনি বলেছিলেন, "নীরজের সাফল্য উদযাপন করার এটাই সেরা সময়। নীরজ এই সম্মানের যোগ্য। আশা করছি, শুধু জ্যাভেলিন থ্রোয়ার নয়, দেশের বাকি এথলিটদেরও নীরজ অনুপ্রাণিত করবেন। আমি ভারতে এসে জানতে পারি, বিশ্বের সবথেকে বড় প্রতিভার নাকি কোচ-ই নেই। তারপরই আমি ক্লাউজকে ইন্ডিয়ায় নিয়ে আসি। ক্লাউজ দারুণ কাজ করেছেন। টেকনিক্যালি নীরজ অনেক উন্নতি করেছে।"
জার্মানি থেকে ভারত- নীরজের সাফল্যে যেন মাতোয়ারা গোটা বিশ্বই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন