বড় মুখ করে সিলেট থান্ডার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে উড়িয়ে এনেছিল হার্শেল গিবসকে। তারকা এই ক্রিকেটার দলকে বড় সাফল্য এনে দেবেন সিলেট কর্তৃপক্ষের আশা ছিল এরকমই। কিন্তু হয়েছে আদতে উলটো। হারতে হারতে প্লে-অফের দৌড় থেকে বহু আগেই বিদায় নিয়েছে সিলেট থান্ডার্স। হতাশায় যখন গোটা দল বিমর্ষ তখনই ক্রিকেটারদের কটাক্ষ করে খোঁচা মেরেছেন গিবস। যা আসলে গোটা দেশকে নড়িয়ে দিয়েছে।
হার্শেল গিবস সংবাদমাধ্যমের সামনে গিয়ে সটান বলে দিয়েছিলেন, "আমি ঠিক নিশ্চিত নই, নিল ম্যাকেঞ্জি (বাংলাদেশ জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ) যখন কথা বলে ওরা কতজন ঠিকভাবে বুঝতে পারে! আমি তো ওঁর মতোই দক্ষিণ আফ্রিকান, আমি ঠিক জানি না, সে যা বলতে চায় তার সবটুকু ওদের কাছে বুঝিয়ে দিতে পারে কিনা। ও দারুন ব্যাটিং কোচ। ওর কথামতো কাজ করলে ছেলেরা অনেক শিখতে পারবে। কিন্তু আমি জানি না, ছেলেরা ওর কথা কতটা ধরতে পারছে।" সবমিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটমহলকে কিছুটা অস্বস্তিতেই ফেলে দিয়েছিলেন গিবস।
আরও পড়ুন কোহলিদের আইপিএল-‘অভিশাপ’ বইছেন অস্ট্রেলীয়! তুঙ্গে আলোচনা
এখানেই না থেমে গিবস আরো রুঢ়ভাবে বলেছিলেন, "ভাষার দুরত্ব একটা তো আছেই। আমি যা বোঝাতে চাইছি ওরা তা বুঝতে পারছে না। আমি অবশ্যই চাইব আমার প্রত্যেকটি কথা যেন ওরা বুঝতে পারে। কিন্তু সেটি তো হচ্ছে না। এটা আমার জন্য খুব হতাশার।"
বাংলাদেশি ক্রিকেটার সম্পর্কে গিবসের এই কথা চলে গিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন গিবসের সমস্যা হলে অন্য বিদেশিরা কিভাবে কোচিং করাচ্ছেন! ক্রিকেট ছাড়ার পর থেকেই কোচিংকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ। তিনি বিপিএলের দল ঢাকা ডায়নামাইটস, আবাহনীর মতো ক্লাবকে কোচিং করিয়েছেন অতীতে। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের টিম ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ‘ইংরেজি’ জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় গিবসের ওপর একরকম ক্ষোভই উগরে দিলেন মাহমুদ। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলে দিলেন, "উনি (হার্শেল গিবস) যেভাবে কথা বলেছেন একদমই ঠিক বলেননি। সেখানে দুজন বাঙালি কোচ আছেন, ইমরান (সারোয়ার ইমরান) ভাই আছেন। তারা তো ইংরেজি বোঝেন। তাদের সঙ্গে যদি মতামত শেয়ার করা হত, তাঁরা তো বাংলায় বুঝিয়ে দিতে পারতেন।"
সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, "মোসাদ্দেক-মিঠুন তো জাতীয় দলে খেলছে। বিদেশি কোচদের সঙ্গে কথা বলেছে। ওরা তো বোঝে। হার্শেল এমন ইংলিশ বলেন না যেটা ওরা বুঝবে না। যোগাযোগের গ্যাপ তৈরি হলে কোচের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে যায় কিভাবে বোঝানো যায়। সেখানে যেহেতু কোচ আছেন তাদের মাধ্যমে করালে কাজটা সহজ হয়।"
আরও পড়ুন বাবাকে না জানিয়েই বাগদান হার্দিকের, সরব এবার ‘অভিমানী’ পিতা
তাহলে কী বিদেশির চেয়ে দেশি কোচই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য ভাল? জবাবে মাহমুদ বলে দেন, "হার্শেল গিবস দারুন একজন ক্রিকেটার ছিলেন। এ নিয়ে কোনো প্রশ্নই নেই। অসম্ভব ভালো একজন ক্রিকেটার যে অসম্ভব ভালো কোচও হবেন এমন ভাবনাটা কিন্তু ঠিক নয়। তাঁর কোচিং কেরিয়ার আসলে কিছুই নেই। কিছুদিন আগেই কোচিংয়ে ঢুকেছেন। অবশ্যই তাঁর ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতা অনেক। কিন্তু খেলোয়াড় আর কোচিং অভিজ্ঞতা এক নয়।"
এরকম ক্ষেত্রে মাহমুদ দেশি কোচদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিলেন। তাঁর বক্তব্য, "আমি বলব, দেশি যারা অভিজ্ঞ আছেন যেমন ইমরান ভাইয়ের অভিজ্ঞতা অনেক। উনি যদি থাকতেন, তাহলে ভাল ফলাফল হতেই পারত। আর আমাদের দেশের কোচরাও এখন মোটেই পিছিয়ে নেই। বিপিএলের মতো আসরে অনভিজ্ঞ কোচ থাকার বদলে স্থানীয় অভিজ্ঞ কোচ থাকাই ভালো।"
আরও পড়ুন মাঠে কিলবিল করছে সাপ, ভয়ে কাতর ভারতীয় ক্রিকেটাররা
রাজশাহী রয়্যালসের প্রধান কোচ ইংরেজ ওয়াইস শাহ। তাঁর সহকারী হিসাবে কাজ করছেন এক সময় বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা রাজিন সালেহ। তিনিও গিবসের ভাষাজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টি মানতে পারছেন না। রাজিনের ভাষ্য, "হার্শেল গিবস যেটা বলেছেন, উনি শুধু খেলোয়াড়দের বলেননি গোটা জাতিকেই ছোট করেছেন। উনি এভাবে বলতে পারেন না। দু-একজন যদি তাঁর কথা নাও বোঝে, অন্য যারা রয়েছেন, যেমন সারোয়ার ইমরান স্যারও তো আছেন। ওঁরা তো গিবসের কথা ব্যাখ্যা করে দিতে পারেন, তাই না? উনি এভাবে তো বলতে পারেন না। তাঁর এই কথা দেশের মানুষকে অসম্মানিত করেছে।"
সিলেট থান্ডারের মেন্টর সারোয়ার ইমরানও জানিয়েছেন, গিবস ঢালাওভাবে কথাটা বলে ঠিক করেননি। তিনি বলছেন, "ভাষার তো একটা সমস্যা থাকেই। তবে কোচের দায়িত্ব হলো খেলোয়াড়রা যেভাবে বুঝবে সেভাবে কাজ করা। এটা তো ক্রিকেটারদের দায়িত্ব না। তবে সর্বসমক্ষে প্রকাশ্য়ে বলাটা ঠিক হয়নি। হয়তো অভিজ্ঞতা কম, সেজন্যই বলেছেন। পরিণতিবোধ হলে এসব ঘটে না।"