ভারত: ১৯২/৩
পাকিস্তান: ১৯১/১০
আহমেদাবাদে যে এত বড় লাঞ্ছনা অপেক্ষা করছে, ভাবতে পেরেছিলেন বাবর আজমরা। প্ৰথমে ব্যাট করতে নেমে নুইয়ে যাওয়া। তারপর রোহিত শর্মার হাতে বেধড়ক মার হজম করা। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের দুঃস্বপ্নের সূত্রপাত হয়ে গেল শনি-রাত থেকেই। টানা দুটো ম্যাচ জিতে আহমেদাবাদে পা পড়েছিল পাকিস্তানের। এর মধ্যে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান চেজ করে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জয়ও রয়েছে। তবে ভারতের সামনে যে এভাবে হাটু গেড়ে বসে পড়বে পাকিস্তান, দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি পাক সমর্থকরা।
বল হাতে পাকিস্তানকে প্ৰথমে ১৯১ রানে বেঁধে রাখা, তারপর রোহিত শর্মার ব্যাটে ঝড়- মোদি স্টেডিয়ামে স্রেফ উড়ে গেল পাকিস্তান। কোনও প্রতিরোধ নেই, লড়াই নেই, কার্যত পাড়ার দল বানিয়ে পাকিস্তানকে হারাল ভারত। ১৯২ রান ভারত তুলল মাত্র ৩০.৩ ওভারে। হাতে ৭ উইকেট, প্রায় ২০ ওভার বাকি থাকতে এল অবিস্মরণীয় জয়। রোহিত আউট হওয়ার পর কেএল রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে ভারতকে জয়ের সরণিতে নিয়ে গেলেন শ্রেয়স আইয়ার (৬২ বলে ৫৩)। অপরাজিত হাফসেঞ্চুরি করে।
চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রানের খাতা না খুলেই আউট হয়েছিলেন। তারপর আফগানিস্তান ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। আর পাক ম্যাচে ধরা দিলেন মারণ মূর্তিতে। শাহিন শাহ আফ্রিদি ম্যাচের আগে বড় মুখ করে বলেছিলেন পাঁচ উইকেট নেবেন। তাঁকে তো বটেই, হ্যারিস রউফকে মাঠের বাইরে ফেলতে ফেলতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন হিটম্যান। শাহিন আফ্রিদির স্লোয়ারে ৬৩ বলে ৮৬ করে যখন ফিরলেন তখন ভারতের জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা। বিধ্বংসী ইনিংসে হাফডজন করে ছক্কা, বাউন্ডারি হাঁকালেন রো-হিট!
ছেলেখেলা টার্গেটের সামনে রান চেজ করতে নেমে ভারত শুভমান গিল, বিরাট কোহলিদের হারালেও কখনই মনে হয়নি ম্যাচে ফিরতে পারে পাকিস্তান।
প্ৰথমে ব্যাট করতে নেমে ভারতের সামনে দাঁড়াতেই পারল না পাকিস্তান। মাত্র ১৯১ রানেই খতম হয়ে গেলেন বাবর আজমরা। শুরুটা খারাপ না করলেও এভাবে যে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ধসে যাবে পাকিস্তান ভাবা যায়নি। দুই ওপেনার ফেরত যাওয়ার পর পাকিস্তানকে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাবর আজম-মহম্মদ রিজওয়ান জুটি। তবে বাবর-রিজওয়ানের ৮২ রানের পার্টনারশিপ ভেঙে যাওয়ার পরেই পাকিস্তান কার্যত ধসে পড়ল। একসময় পাকিস্তান ১৫৫/২ ছিল। সেখান থেকে পাকিস্তান খতম ১৯১-এ! শেষ ৩৬ রানে পাকিস্তান হারাল ৮ উইকেট। এতেই স্পষ্ট বাবরদের ব্যাটিং বিপর্যয়। শার্দূল ঠাকুর বাদে সকল ভারতীয় বোলারই সফল এদিন। সিরাজ, বুমরা, জাদেজা, হার্দিক পান্ডিয়া, কুলদীপ সকলেই দুটো করে উইকেট নেন।
মোদি স্টেডিয়ামে টসে জিতে পাকিস্তানকে প্ৰথমে ব্যাট করতে নামান রোহিত শর্মা। সিরাজ-বুমরার আক্রমণের সামনে পাকিস্তান শুরুটা ভাল করেছিল। বুমরার সামনে খাপ খুলতে না পারলেও সিরাজ পরপর বাউন্ডারি হজম করছিলেন। ইমাম-উল হক এবং শ্রীলঙ্কা ম্যাচের নায়ক আব্দুল্লা শফিক পজিটিভ ভঙ্গিতে শুরু করেন স্লো লো বাউন্স পিচে। এই পিচেই প্ৰথম ভারতকে উইকেট এনে দেন মহম্মদ সিরাজ।
শুরুর স্পেলে খারাপ বোলিং করলেও সিরাজ দ্রুত কামব্যাক করেন। ক্রস সিমে হার্ড লেন্থে বল করে লেগ বিফোর করেন শফিককে। কিছুক্ষণ পরেই হার্দিক পান্ডিয়ার সেই বহু মন্ত্র- উইকেট। ইমাম-উল হককে ফেরান হার্দিক।
৭৩/২ হয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান ম্যাচে ফেরে মহম্মদ রিজওয়ান এবং বাবর আজমের পার্টনারশিপে ভর করে। দুজনে যখন ভারতীয় বোলারদের হতাশা বাড়াচ্ছিলেন, সেই সময় ফেলে একবার ঝটকা দেন মহম্মদ সিরাজ। ক্রস সিমেই ফেরান হাফসেঞ্চুরিয়ন বাবর আজমকে। ভাঙন ধরান ৮২ রানের পার্টনারশিপে। তারপর বুমরার স্পেলে ধস নামে পাক ব্যাটিং অর্ডারে। রিজওয়ানকে স্বপ্নের ডেলিভারিতে ফেরান বুমরা।
এরপরেই ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তান ভেঙে পড়ল। বিশ্বকাপের মঞ্চে সেই সঙ্গে ৭-০ থেকে ৮-০'ও হয়ে গেল শনিবার।