Anshul Kamboj criticised for poor performance: একজন ফাস্ট বোলার, অভিষেক টেস্টে বল করছেন। তা-ও আবার ইংল্যান্ডের মাটিতে। এমন সুযোগ তো রোজ রোজ আসে না। অথচ ২৪ বছরের তরুণ ফাস্ট বোলার গড়ে ঘণ্টায় মাত্র ১২৫ কিমি গতিতে বল করছেন। স্পিডগানের এই পরিসংখ্যান দেখেই অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন তুলছেন অংশুল কাম্বোজকে (Anshul Kamboj) খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে। কাম্বোজের বলের স্পিড দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কোথাও একটা সমস্যা আছে। ম্যানচেস্টার টেস্টের (IND vs ENG 4th Test Match) মতো মরণবাঁচন ম্যাচে তাঁকে খেলানো যে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া (Indian Cricket Team)। আর এই সুযোগে টেস্টে পুরোপুরি চালকের আসনে বসেছে ইংল্যান্ড।
অনেকেই বলছেন, যিনি বা যাঁরা অংশুলকে টেস্টে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁরা এই তরুণের সঙ্গেই অবিচারই করেছেন। ভারতের পক্ষেও এটি এক ভুল পদক্ষেপ প্রমাণিত হয়েছে, আর এই অভিজ্ঞতা কাম্বোজের মনে এমন এক ক্ষত রেখে যেতে পারে, যা সহজে মুছবে না। সত্যি কথা বলতে, সে কাম্বোজ এই পর্যায়ে খেলতে একেবারেই প্রস্তুত ছিল না এবং তৃতীয় পেসারের ভূমিকা পালন করার মতো অবস্থায়ও ছিল না। তাঁকে একরকম অসহায় দেখাচ্ছিল। হতে পারে তাঁর জেট ল্যাগ ছিল, বা পুরোপুরি ফিট ছিলেন না। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, তাহলে এত তাড়াহুড়ো করে তাঁকে খেলানো হল কেন?
আরও পড়ুন ১ ইনিংসেই ১০ উইকেট! কুম্বলের সেই ঐতিহাসিক রেকর্ডে ফের এক ভারতীয়, তছনছ ইতিহাস
ঘণ্টায় ১২৫ কিমি গতি নিয়ে একজন নতুন বোলার এই লেভেলে টিকে থাকতে পারবে না, এবং তাঁর অভিষেক ভারতের বোলিং আক্রমণের ভারসাম্য সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছে।
অংশুল নতুন, তাই অনেকেরই সহানুভূতি তাঁর প্রতি আছে। কিন্তু যদি কেউ তাঁর রানআপ খেয়াল করে, তাহলে বোঝা যাবে, কোথাও একটা গন্ডগোল আছে। তাঁর বডি ল্যাংগুয়েজ বলছে, কাম্বোজ মোটেও উপভোগ করছে না। তিনি দৌড়ে আসছেন, কিন্তু সেখানও কোনও আগ্রাসন নেই। জো রুট এবং বেন স্টোকস তাঁকে একরকম স্পিনারের মতো খেলছিলেন এবং ইচ্ছেমতো ব্যাটিং করছিলেন। এমনও দেখা গেল, রুট এক সময় ক্রিজ থেকে এক ফুট বাইরে দাঁড়িয়ে প্রতি বলে দু-এক পা এগিয়ে এসে খেলছিলেন।
সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, না উইকেটকিপার নিজে সামনে এলেন, না ড্রেসিংরুম থেকে কোনও বার্তা পাঠানো হল।
আরও পড়ুন অভিষেকেই বড় সাফল্য টিম ইন্ডিয়ার 'AK-47'র, সেঞ্চুরির মুখ থেকে ফেরালেন ডাকেটকে
কাম্বোজ মনে করালেন পঙ্কজ সিংকে
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের পিচে কম্বোজের বোলিং দেখে মনে পড়ে গেল ২০১৪ সালের পঙ্কজ সিংকে। দুর্ভাগ্যবশত, তিনি আর কখনও ভারতের হয়ে টেস্ট খেলেননি। একইসঙ্গে তাঁর স্পেল ২০১১ সালের আরপি সিংয়ের কথাও মনে করিয়ে দেয়, যাঁকে হঠাৎ দলের ডাকে আনা হয়েছিল, যখন তিনি ক্রিকেট থেকে অনেকটা দূরে, ছুটিতে ছিলেন। তাঁর প্রথম বলটি ছিল ঘণ্টায় ৭৮ মাইল গতিতে এক বিশাল ওয়াইড। সিরিজের এই গুরুত্বপূর্ণ টেস্টে কাম্বোজকে খেলানোর সিদ্ধান্ত যতটা খারাপ হতে পারত, তার থেকেও খারাপ হয়েছে বাস্তবে।
কাম্বোজকে খেলানোর এত তাড়া কেন ছিল?
অনেক বড় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাই জানতে চাইছেন, ঠিক কী কারণে টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে অগ্রাধিকার দিল। এই সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়েছে। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় নতুন বল হাতে নিয়ে তাঁর পারফরম্যান্স আরও খারাপ। বুমরাহ মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন, ফলে বাধ্য হয়ে অংশুলকেই বল দিতে হয়। শুভমান গিল তখন বায়ো-ব্রেকে ছিলেন, তাই কেউ-ই কাম্বোজের সঙ্গে কথা বলছিল না। মাঠে অংশুল এবং গোটা ভারতীয় দলকে একেবারে দিশাহীন লাগছিল।
এই টেস্ট ম্যাচ কার্যত হারাই গিয়েছে। যদি না ভারত অলআউট শক্তি দিয়ে ব্যাটিং করে, তাহলে একটাই ফলাফল স্পষ্ট। এর মানে আরও একটি সিরিজ হার, এবং সেটা গৌতম গম্ভীর ও মর্নি মর্কেলের জন্য বড় প্রশ্নের জন্ম দেবে।
গত এক বছরে ভারত টেস্ট ফর্ম্যাটে কিছুই জেতেনি এবং দলের পরিসংখ্যান খুবই দুর্বল দেখাচ্ছে। কোনও বোলার সামনে উঠে আসেনি এবং যাঁরা এক বছর আগে ভালো পারফর্ম করছিলেন, যেমন মুকেশ কুমার তাঁরাও এখন দলে নেই। ওভালে শেষ টেস্টের আগে ভারতের অবস্থা যেন ২০১৪ সালের মতো হয়ে গেছে, উদাসীন, দিশাহীন এবং আত্মসমর্পণ করে বসা মানসিকতা।
কম্বোজকে দলে নেওয়া তার সবচেয়ে বড় প্রতিচ্ছবি, আর ম্যানচেস্টারে যা যা খারাপ হতে পারত, সবই যেন ঘটে গেল।