ঐতিহাসিক জয়। সেই জয়ের ঘোর যেন কাটছেই না। লর্ডসে দুর্ধর্ষ ক্রিকেট উপহার দিয়ে কার্যত হারা ম্যাচ জিতে গেল ইন্ডিয়া। পঞ্চম দিন লাঞ্চের কয়েক ঘন্টা আগেও জয়ের দৌড়ে ফেভারিট ছিল ইংল্যান্ডের তবে সমস্ত সমীকরণ তছনছ করে দেয় বুমরা-শামির পার্টনারশিপ।
গোটা টেস্টে দাপট দেখিয়েও কীভাবে হারল ইংল্যান্ড? জো রুট ম্যাচের পরেই সংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, ট্যাকটিক্যালি বেশ কিছু জায়গায় ভুল করেছেন। কী ভুল, অন্তর্তদন্তে উঠে আসছে একাধিক তথ্য-
পঞ্চম দিন, (প্রথম সেশন) বাউন্সার বৃষ্টি: জসপ্রীত বুমরা মাঠে নামলে যে ইংরেজ পেসাররা বাউন্সারের ছররা ছোটাবেন, তা কার্যত ঠিক হয়েই গিয়েছিল। আন্ডারসন ক্রিজে ব্যাট করতে নেমে বুমরার তান্ডবের সামনে পড়েছিলেন একদিন আগেই। আন্ডারসনের বদলে রুট লেলিয়ে দিয়েছিলেন দলের দ্রুততম মার্ক উডকে।
তবে এখানেই বড়সড় ভুল করে বসেছিলেন রুট। ইশান্ত শর্মা এবং ঋষভ পন্থকে সাততাড়াতাড়ি আউট করে দিয়ে অনেকটাই রিল্যাক্সড মেজাজে ছিল ইংরেজরা। আর সেই মেজাজেই কার্যত ধরে নেওয়া হয়েছিল, বাকি ব্যাটসম্যানদের তুড়ি মেরে আউট করে দেওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: হেলমেটে বাউন্সার ‘খেয়েই’ মেজাজ চরমে! বাটলারের সঙ্গে লাগল বুমরার, দেখুন উত্তপ্ত ভিডিও
তবে এড্রিনালিন ক্ষরণের এই যুদ্ধের প্লট কার্যত হারেন রুটরাই। ইংরেজ পেসাররা এই সময়ে মাত্র ২ শতাংশ ফুল লেন্থে করেন। বাকি সমস্ত শর্ট পিচড। আন্ডারসন শর্ট বল দিতে সেভাবে দক্ষ না হওয়ায় আক্রমণ থেকে দূরেই রাখা হয় তারকা পেসারকে। কমেন্ট্রি বক্স থেকে মাইকেল হোল্ডিং পর্যন্ত বলতে বাধ্য হলেন, "আন্ডারসন নিজে বল করার পরিবর্তে অন্যের বল কেন পালিশ করছেন?" বয়কট বলে দিয়েছেন, "বুমরাদের আউট করার পরিবর্তে ওদের আঘাত করাই যেন মুখ্য হয়ে উঠেছিল রুটদের কাছে।" আন্ডারসনের অনুপস্থিতিতে ম্যাচ ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে চলে যান শামি-বুমরা। স্লগ শট নয়, বরং ক্রিকেটীয় শটেই শামিরা নাভিশ্বাস তুলে দেন। রুটের ইংরেজ বাহিনী নিজেদের অহং বিসর্জন দিতে পারেননি।
চতুর্থ দিন, ফাইনাল সেশন, খেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত:
লর্ডসে কমে যাওয়া আলোয় কোহলিরা কার্যত প্যানিক করছিলেন। ইশান্ত শর্মা এবং ঋষভ পন্থ সেই সময় ক্রিজে ছিলেন। বারবার দুই সিনিয়র ক্রিকেটার লর্ডসের ব্যালকনি থেকে হাত নেড়ে ইশান্তদের ইঙ্গিত করছিলেন, খারাপ আলোর জন্য যেন আম্পায়ারকে খেলা বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।
আরও পড়ুন: ইঙ্গিতেও হল না কাজ! পন্থ-ইশান্তে তীব্র অখুশি বিরাট-রোহিত, দেখুন ভিডিও
সেই সময় মঈন আলি বেশ বিব্রত করছিলেন ব্যাটসম্যানদের। তবে ভারতীয়রা মন্দ আলোয় সেই টার্নিং বলের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি নিতে চায়নি। সেই সময় রুট মহা-ভুল করে বসেন। মঈন আলিকে সরিয়ে আক্রমণে পেসারদের নিয়ে আসেন। মঈন আলির বলে খেলতে দুজনেই ইশান্ত এবং ঋষভ দুজনেই সমস্যায় পড়ছিলেন। সেই সময় পেসারদের নিয়ে এসে অনেকটাই চাপ হালকা করে দেন রুট। পরে অবশ্য মন্দ আলোর জন্য খেলা আগেভাগে বন্ধ করে দেন আম্পায়ার। তবে ইশান্ত-ঋষভ পন্থের মধ্যে একজন আউট হলেই সেইসময় ম্যাচ অনেকটাই ঢলে পড়ত ইংরেজদের দিকে।
তৃতীয় দিন, ফাইনাল সেশন, আন্ডারসনকে সামনে ঠেলে দেওয়া:
রুট এবং আন্ডারসন সেই সময় লিড বাড়ানোর জন্য ব্যাট করছিলেন। ভারতের রান টপকে গিয়ে রুটের লক্ষ্যই ছিল যত বেশি সম্ভব লিড নিয়ে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠানো। তৃতীয় দিনে আন্ডারসন বুমরার আগুনে পেসের সামনে পড়ে যান। আঙুলে চোট লাগে। হেলমেটে বল আছড়ে পড়ে। তারপরে কনকাশন চেকিংও হয় তারকার। আন্ডারসন মোটেই আগুনে পেসের সামনে খেলতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না।
আরও পড়ুন: বাউন্সারের পর বাউন্সার! বুমরার বিষ-বোলিংয়ে দুঃস্বপ্ন আন্ডারসনের, মুখ খুললেন স্টেইনও
তবে রুট অদ্ভুতভাবে দিনের শেষ ওভারেই ভুল করে বসেন। প্রথম তিন বল সামলে নিলেও চতুর্থ বলে সিঙ্গলস নিয়ে স্ট্রাইকিং এন্ডে আন্ডারসনকে যেতে বাধ্য করেন। শেষ দু-বল রুট অনায়াসে সামলে চতুর্থ দিন মানসিকভাবে চাঙ্গা অবস্থায় আন্ডারসনের সঙ্গে ব্যাট করতে নামতে পারতেন। তবে দিনের শেষ বলেই আন্ডারসন আউট হয়ে যান। ইংল্যান্ডও যৎকিঞ্চিৎ ২৭ রানের লিডে আটকে যায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন